somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষাদ সিন্ধু এবং একটি থেলো হুকো

২৮ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--

আজ সবাইকে দুই ভাই, প্রতিবেশী এবং বিস্মৃত হওয়া কিছু মানুষদের কথা মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করবো। একটা সময় তখন গ্রামে বিদ্যুৎ আসে নি। অধিকাংশ মানুষ কাঁচা ঘরে বাস করতো। চায়ের কোন স্টল ছিল না গ্রামব্যাপি। মসজিদে ব্যাটারির মাইকে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়া হতো। কাঁচা বাড়ীর বারান্দা ঘিরে, সাময়িক দোকান ছিল বেশ কয়েকটা। যতদূর মনে পড়ে আবু রাজ্জাকের দোকান, খয়রাত আলী (খাইরুল বাশার) ভাইয়ের দোকান, মকবুল বুড়োর দোকান, রহমতের দোকান এই কয়েকটিই ছিল সেসময়। মুড়ি, কেরোসিন, কটকটি, সাবান, সোডা, মাছ লজেন্স, পাটালি, বিড়ি এসব বিক্রি হতো প্রধানত। সন্ধ্যা আট'টাকে মনে হতো মধ্যরাত। নয়টার মধ্যে সমস্ত গ্রাম শুনশান, নিরব। যে বাড়ীতে মেট্রিক পরীক্ষার্থী থাকতো হয়তো সে বাড়িতে একটা নিভূ নিভূ হ্যারিকেন অথবা টেমি জ্বলতো রাত দশটার পরও।

আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। রাজেন্দ্র বাবু হেডমাষ্টার। গফুর স্যার, লাস্ট স্যার, মালেক স্যার, ঘরচালা স্যার; পরবর্তীতে বারী স্যার ছিল। তার আগে আসমত ফকির স্যার ছিল।

এসব নিয়ে হয়ত আমি আর একদিন লিখবো ইনশা-আল্লাহ। আজ বলছি মাহবু আলী এবং জোহর আলীর কথা। গ্রামে অধিকাংশের কাছে তারা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া দুজন মানুষ। তখন গ্রামে মানুষের নাম সংক্ষিপ্ত এবং বিকৃত করে ডাকার চল ছিল। সাধারণত অপ্রধান মানুষের একটা ডাক নাম প্রচলিত থাকতো, যার আড়ালে তার আসল নাম হারিয়ে যেত।

মাবু দাদা হুকো খেতেন। তার বাড়ীর বারান্দা (হেতনি বলা হতো, আমি এখনও জানি না বারান্দাকে কেন হেতনি বলা হতো) একটা লোহার হুকে ঝোলানো থাকতো হুকো। নারকেলের শুকনো মালার উপর একটা ছোট বাঁশের নল। ধূমপানের এক আদিম উপায়। ছোট বেলায় আমরা জামাল সাহেবের বেড়ে যাবার জন্য মাবু দাদার উঠোনের উপর দিয়ে শর্টে যেতাম। একটা খুব বড় কুলগাছ ছিল তার উঠানে। একপাশে লম্বা গরুর গোয়াল। উনার মেয়ে মাবিয়া আমার সাথে স্কুলে পড়তো। স্কুলে যেদিন কামাই হতো, মাবিয়ার কাছ থেকে পড়া দাগিয়ে নিতে যেতাম। তখনও বারান্দায় বাঁধা হুকোটি দেখতাম। উনার বাড়ীর সামনে একটা বিশাল তেঁতুল গাছ ছিল। আর সর্বপ্রথম মাকাল ফল দেখি উনাদের বাড়ীর সামনের একটি গাছে। উনার বড় ছেলের অকালে মৃত্যুবরণ আমাদের সবার জন্য সেসময় কষ্টের ছিল।

উনার বাড়ীর পাশে ছিল জোহর আলীর বাড়ী। সম্পর্কে তারা সম্ভাবত ভাই ছিল। আমার ভুল হতেও পারে। আমি আসলে আমার স্মৃতি থেকে লিখছি। যদি ভুল লিখি আশা করি যারা জানেন, শুধরে দেবেন।

জোর আলীর একটা উঁচু দোচালা ঘরের বারান্দায় বা হেতনিতে একটা চৌকিতে বসবাস ছিল। তার সম্ভাবত অক্ষরজ্ঞান ছিল। পড়তে পারতেন। তার চৌকির কোণে আমি মীর মোশাররফ হোসেনের 'বিষাদ সিন্ধু' বইটির জীর্ণ কপি দেখেছি। সম্ভাবত কোলকাতা ছাপা। বেশ কাপড়ে মুড়ে রাখা হতো। জোর আলী বেশ স্টাইলে কথা বলতেন। তার বড় ছেলে সম্ভাবত পশ্চিম পাকিস্তান থাকতো। আর ছোটছেলে খোকন পরবর্তীতে আত্মহত্যা করে। যতদূর মনে পড়ে সবুজের আব্বা মানে উনার সেজছেলে ঐ উঁচু ঘরে বসবাস করতো। পাশে উনার মেঝছেলে আতিয়ারের বাড়ী ছিল। ডলি, জামান, রুমি, ইরানীসহ অনেক বাচ্চা কাচ্চা রেখে তারা দুজন অকালপ্রয়াত হন। আল্লাহ তাআলা তাদের মাফ করুন।

আজ হয়ত পাল্টে গেছে সময়, বসতী, মানুষজন। যেসব লোকের কথা বলছি তারাও কালের ধূলোয় ঢেকে গেছে তাদের অস্তিত্বসহ। তবুও আমি চোখ বুজলে শুনতে পাই, আতি চাচাদের ১৪'' টেলিভিশনের আওয়াজ, মাবু দাদার কালো হুকোর ঘড়ঘড় আর দেখি জোহর আলীর মলিন বিষাদ সিন্ধু!

আল্লাহ তাআলা জোহর আলী, মাহবু আলীসহ মৃত সকল গ্রামবাসীদের মাফ করুন, তাদের জান্নাত নসিব করুন।

হয়ত আমরাও আস্তে আস্তে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবো একে একে, আমাদেরকে কি আসলে এভাবে স্মরণ করবে পরের প্রজন্ম! সেই শিক্ষা কি আমরা দিয়ে যেতে পারছি??

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×