অনেক্ষন মেয়েটার কোন সাড়া শব্দ নেই। লম্বা সময়ের যাত্রায় রাতের বাসে বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে কাটায়। মেয়েটাও ঘুমাচ্ছিল। সেই বাস ছাড়ার কিছু সময় পরেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছু সময় পরপর উঠে চারপাশে দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে। মেয়েটা একটু অদ্ভুত ধরনের। নাহ্ অদ্ভুত বলতে পোশাক আশাক না, চলাফেরাও না। কিন্তু... এই রাতের শেষ বাসে একা উঠেছে মেয়েটি। সঙ্গে একটা হাত ব্যাগ শুধু দেখা যাচ্ছে। কোন ভয় নেই অস্থিরতা নেই অস্বাভাবিক রকম শান্ত। হয়তো কিছুটা বিষন্ন। কেমন যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছে সে চারপাশে। এত দীর্ঘ সময়ের যাত্রা অথচ একটা কথাও বিনিময় হয়নি তার সঙ্গে।
বাসটা যখন যাত্রা বিরতী নেয় তখন হঠাৎই খানিকটা চঞ্চলতা দেখা গেল মেয়েটার মধ্যে। বেশ তাড়াহুড়া করেই নেমে গেল। যখন ফিরলো, দেখে মনে হলো একটু যেন সাজগোজ করেছে। কপালের টিপটা এতক্ষন ছিল না। মনে হচ্ছে হালকা প্রসাধনী করে এসেছে, চোখে কাজলের রেখা। বেশ লাগছে দেখতে। তখন থেকে কেমন যেন একটা চঞ্চলতাও অনুভূত হচ্ছিল। তারপর আরো বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেল। ঘুম ঘুম চোখেই বুঝতে পাছিলাম গন্তব্য কাছাকাছি।
কিন্তু কোথায় যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। কি যেন একটা বিষয় ঠিক মিলছিলনা। অনেকটা সময় পরে মনে হলো মেয়েটা যে একটু বেশিই চুপচাপ। যেন নিশ্বাসও চলছেনা। যদিও সারাটা পথ মেয়েটি একটা কথাও বলেনি তারপরেও এই নৈঃশব্দ যে একটু বেশি অস্বাভাবিক লাগলো। গন্তব্য এসে গেছে অথচ মেয়েটির মধ্যে যেন কোন চঞ্চলতা নেই। কি পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। খুব খেয়াল করে শেষ বার মেয়েটির মুখটা দেখতে গিয়ে মনে হলো মেয়েটি মৃত।
হ্যা, মেয়েটি মারা গেছে। না বলাটা ঠিক হলোনা, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। তার হাতে মুঠি করা একটি কাগজ পাওয়া গেল। সেখানে তার বাসার ঠিকানা, একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া গেল। আর তার পায়ের কাছে দেখা গেল ওষুধের কিছু খোসা। বলা বাহুল্য সেগুলো খালি ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৩১