ছবিঃ ইন্টার্নেট
আমরা শিশুকাল থেকেই মাতৃভাষা শিখে ফেলি। ভাষা থেকেই আমরা প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে থাকি। ভাষা একটি বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডার। ভাষায় প্রতিটি শব্দের অর্থ রয়েছে, প্রতিটি জিনিসের নাম রয়েছে, সাথে রয়েছে তার ব্যাখ্যা। ভাষায় রচিত গল্প, গাঁথা, লোককাহিনী, গান, বচন ইত্যাদিতে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের উপর অসংখ্য জ্ঞানের কথা। আমরা প্রতিদিন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের অভিজ্ঞতা জানতে পারি, মিডিয়ার প্রচারণা, রাজনৈতিক বক্তৃতা, আলেমদের ওয়াজ থেকেও আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। এগুলোকে বলা হয় শ্রুতি জ্ঞান। আমাদের জ্ঞানের সিংহ ভাগই এই শ্রুতি নির্ভর। আবার আমরা যারা লিখতে পড়তে জানি অর্থাৎ যাদের ভাষায় স্বাক্ষরতা রয়েছে তাদের সামনে রয়েছে জ্ঞান আহরণের অবারিত দ্বার। পুস্তক পত্রিকা পাঠ করে আমরা আমাদের আগ্রহ অনুযায়ী জ্ঞান সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানে স্বাক্ষরতার অভাবে জ্ঞানের একটা বিরাট অংশই আমাদের অজানা থেকে যায়। বিজ্ঞানে স্বাক্ষরতা হোল বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে পারা। বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান লাভ করা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের জন্য এই জ্ঞান অতীব জরুরী। অবশ্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের জন্য দর্শন, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে একটি সার্বিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সার্বিক জ্ঞান লাভের জন্য নিজ উদ্যোগের দরকার হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সার্বিক জ্ঞান লাভের কোন ব্যবস্থা থাকে না। সেখানে এক একটা বিষয়ে মাস্টার করা হয় এবং তার জ্ঞান সেখানেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে। শিক্ষার উদ্দেশ্য পেশাজীবী বানানো, জ্ঞানের উন্নয়ন নয়। তথাকথিত শিক্ষিত লোকেরা হোল কর্পোরেট জগতের সেবাদাস। তাদের মস্তিষ্ক ও জগত কর্পোরেট স্বার্থে নির্ধারিত। সার্বিক জ্ঞানের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় শ্রুতি জ্ঞানের উপর। একজন দন্ত চিকিৎসক প্রতিনিয়ত তার রোগীদের আক্কেল দাঁত উপরে ফেলছেন কিন্তু এই আক্কেল দাঁত কেন মাড়িতে যথেষ্ট জায়গা পাচ্ছে না তার কারণটি জানা থাকলেও সেই জ্ঞানকে তিনি উপেক্ষা করে থাকেন। কারণ সার্বিক জ্ঞানের আলোকে তার দন্ত শিক্ষাকে যাচাই করা হয়নি। তাই তার সার্বিক জ্ঞান শ্রুতি জ্ঞানেই আটকে থাকে, জ্ঞানের কোন প্রসার হয় না।
অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানের পাশাপাশি বিজ্ঞানে স্বাক্ষরতা থাকলে বিজ্ঞানের ভাষা বুঝা সম্ভব হয় এবং স্ব উদ্যোগে সার্বিক জ্ঞান চর্চার দ্বার অবারিত হয়। তাই আসুন বিজ্ঞানে স্বাক্ষরতা অর্জন করি, স্ব উদ্যোগে জ্ঞান চর্চায় নিবেদিত হই এবং নিজের ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারণ ঘটাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৯:৩৮