somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সতীত্ব ও সততা- নারীর অনুভূতি ও আমাদের সমাজ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'সতী'- দু অক্ষরের এই শব্দটির মাঝে কতটুকু যে বিশালতা আছে, একজন নারীর পক্ষেই শুধুমাত্র তা বুঝা সম্ভব। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সমাজে নারীকে দিতে হয়েছে তার সতীত্বের বিভিন্ন পরিক্ষা। কখনো ভুল করে, কখনো ইচ্ছা করে, আবার কখনো বা ধর্ষীত হয়ে কুমারিত্ব হারানো মেয়েরা অপরাধবোধের আগুনে পুড়তে থাকে। সতীত্বের সাথে সাথে তার আত্মবিশ্বাস আর আইডেন্টিটিও হারিয়ে যায় অতল বিভিষীকায়। শুচিতা নস্টের আত্মগ্লানিতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় একজন মানুষ। খেয়াল করুন, আমি কিন্ত মানুষ বলেছি। মেয়ে মানুষ নয়।

প্রশ্ন হচ্ছে মেয়ে মানুষ ট্যাগটি কোথেকে আসলো। মেয়ে মানুষ বলতে আমরা কি শুধুই নারী বুঝি? নাকি অবলা, নরম, দুর্বলের কোন প্রতিশব্দ বুঝি। সতীত্ব, কুমারিত্ব, নস্টা, শুচিতা, বেশ্যা এ শব্দগুলো কেন শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ? এর কোন পুরুষবাচক শব্দ নেই কেন ? এমনকি সকল ধর্মগুলাতে পর্যন্ত নারীদের পূর্ন মর্যাদা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও ধর্মের আচ্ছাদনে
বরং জেন্ডার ডেস্ক্রিমিনেশন ই ফুটে উঠে।

একসাথে থাকার স্বার্থে , কিংবা আমাদের এই পজেসিভ সমাজে প্রতিটা মানুষকেই তার সহচরের সাথে দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ থাকতে হয়। চলে আসে সততার প্রশ্ন। কিন্ত এ প্রশ্ন কেন শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোয্য ? কেন সমানভাবে একজন পুরুষকেও সততার প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হয় না? কেন সততার চেয়েও বড় হয়ে অঠে নারীর সতীত্ব ?

"নারী- তুমি আসলেই দুর্বল"- কোন মহাশক্তি এই অনুভব ঢুকিয়ে দিয়েছে নারীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ? এবার তাহলে একটু এক্সপেরিন্সের সাহায্য নেই, আপনারাও একটু মিলিয়ে দেখার চেস্টা করুন।

নারীরা কখনোই পুরুষের সমান্তরালে দাড়ানোর সুযোগ পায়নি। কতৃত্ববাদী ধারায় পুরুষ তাকে নিয়ে এসেছে তাদের পায়ের নিচে।নারীর সামনে ইশ্বরের পর প্রথম স্থান হলো পুরুষের। এই বিশ্বাসের সাথে সাথে তারা তৈরি করেছে নানান ফতোয়া। সেই ফতোয়ার বাস্তব উদাহরন সতীদাহ প্রথা। তৎকালীন পুরুষদের বেলায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুরুষদের বিবাহ সম্ভব হলেও নারীদের বেলায় বিধবা বিবাহের প্রচলন করতে অনেক ঘাম ঝরেছে ইশ্বরচন্দ্রের। এখন পর্যন্ত একজন নারই ডিভর্সিকে সমাজে কানাচোখে দেখা হয়, ডিভোর্সের কারন যাই হোক না কেন ।
শরিয়া আইনে একজন ধর্ষিত নারীর সাক্ষি হিসেবে দেখতে হবে পুরুষের দ্বিগুন সঙ্খক নারীকে। এগুলো কি ডেস্ক্রিমিনেশন নয় ? পুরুষের বহুবিবাহ, বহুগামিতার সিস্টেম ও তা প্রমান করে। স্বামীর বাহিরে অন্য কোন পুরুষের কথা ভাবলে নারীর নরক অবধারিত।ধর্ষিতা নারীর বাচার অধিকার নাই। অথচ ধর্ষন করে ঘুরে বেড়ায় কত শত পরিমল, আর শাস্তি পায় কত শত সীমি। পুরুষের স্পর্শে কলুশিত নারী বেছে নেয় আত্মহননের পথ।

হায়রে অবলা নারী।

যুগে যুগে একজন নারীকে অগনিময় সতীতে রুপান্তর করতে ধর্মের ভুমিকা কি অস্বীকার করার উপায় আছে ? ইসলামে নারীকে শস্যক্ষেত্র বানিয়ে পুরুষকে তার মধ্যে যেভাবে খুশি প্রবেশের অনুমুতি দেয়া হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে এটো বা উচ্ছিস্ট নারীর কোন স্থান নেই। হিন্দু ধর্মে এক্সময় সন্তান উৎপাদনে অক্ষম পুরুষের নিজের সম্পত্তির উত্তরাধিকার রক্ষার্থে তার পছন্দ অপছন্দের ধার না ধরেই শুতে হত স্বামীর নির্ধারিত মানুষ্টির সাথে।

একটু চিন্তা করে দেখুন তো বর্তমান সমাজে তার কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে ? মূল একই স্থানে আছে কিন্ত রুপান্তর ঘটেছে মাত্র।

আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটা ঘরেই বাচ্চা মেয়েদের যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা হলো- একটা মেয়ের জন্মই হয় স্বামীগৃহে যাবার জন্য।স্বামী যাই হোক, তার সেবা যত্ন করে যেতে হবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তা না হলে ইহকাল পরকাল সবি শেষ। এ কারনেই হাজার হাজার রুমানা মঞ্জুর কে হতে হয় নীপিড়িত, লাঞ্চিত। সমাজের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়ার পরও তার স্থান পশুতুল্য একজন পুরুষের নিচে।

বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত নাসরীন জাহানের লেখা "উড়ুক্কু" উপ্ন্যাস্টিতে পড়েছিলাম- কেন্দ্রিয় চরিত্র নীনার বাসর রাতে রক্তপাত দেখে তার স্বামী চিৎকার করে উঠে খুশিতে।

হাহ, হায়রে দুর্বল নারী।

শ্রেনীবিভক্ত সমাজে যে দর্শন তৈরি হয়েছে তা শষক শ্রেনীর শ্রেনী শাষনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। অধিকাংশ সমাজেই শাষক পুরুষ। তাই তারা সমাজ, এমনকি ধর্মীয় আইনও তৈরি করে নিয়েছে নিজেদের মত করে। নারীকে তারা বন্দি করে রেখেছে চার দেয়ালের উনুন আর সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে। যেহেতু ভ্রুন পুরুষের, তাই তারা মনে করে দশমাসের জন্য পুর্নতা পাওয়ার লক্ষে নারীর শরিরে তা ধার দেয়া হয়েছে মাত্র।

আমি জানিনা এ বিশ্বাস আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।
আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো , শ্রেনীবৈশম্য একজন নারীর যে কোন বিষয়কে অবদমিত করে রাখে। তাহলে নারীর জীবনে আছে টা কি ? শুধুমাত্র শারিরিক সমর্কের মধ্য দিয়ে যেখানে একজন পুরুষ কিনে নিতে পারে একজন নারীকে।


যৌথতার স্বার্থে একজন নারীকে অবশ্যই সনযমী হতে হবে। নিজেকে সার্বিক পঙ্কিলতার হাত থেকে বেচে থাকতে হবে। তবে তা যেন হয় নিজস্ব বিচার বুদ্ধি ও শিক্ষা থেকে।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা কথা দিয়ে শেষ করি।
" এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে যেখানে একটা লাইটের সুইচ টিপেই ঘর আলো করা যায়, সেখানে সুইচটা কি মেয়ের হাতের আঙ্গুলের টিপে হয়েছে, নাকি ছেলের হাতের , তা খুব একটা বড় ব্যাপার নয়।"

নারী ও পুরুষের সার্বিক সহযোগিতাইয় আলোকিত হোক সমস্ত পৃথিবী।

------------------------------------------------------


কোন পুরুষকে ছোট করা এ পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। শুধুমাত্র নারীর কিছু অনুভুতি ও বাস্তবতা তুলে ধরাই এর মূল উদ্দেশ্য। ব্লগের সমস্ত নারী ব্লগারদের এই পোস্ট উৎসর্গ করলাম। ধন্যবাদ আপনাদের অনুভুতি সামুতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯
৩৭টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×