এই সিরিজে নিজেকে একজন স্রেফ দর্শক হিসাবে রেখে আমার উপর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রভাব আলোচনা করাই মুল উদ্দেশ্য। চলুন এবার প্যাঁচাল কে কন্সেন্ট্রেট করতে শুরু করি।
আমার ইদানিং অভিনয় শিল্পী শাহরুখ থেকে বক্তা শাহরুখ কেই অনেক বেশি পছন্দ ,আমি তার ছোট ছোট পাব্লিক স্পিচ পেলেই পড়ি/ শুনি । কারন তিনি এই নতুন রোলটি অভিজ্ঞতার দরুন বর্তমানে দারুন প্লে করছেন। (রিপোটারদের গসিপ প্রশ্ন উত্তর পর্ব গুলো নয় ) ।
শাহরুখ খান গুগোল টাওয়ারে সি,ই,ও মিস্টার পিচাই এর সাথে আলাপচারিতায় একজন ডিগ্নিফাইড স্পীকার হয়ে উঠেন অথবা ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবারগ এর পোস্ট ডক্টরেট স্পীচ এ যেন সত্যিকার ডক্টর।
আন্তর্জাতিক আইকন হিসাবে ডঃ খান আমার আগ্রহের তালিকায় আছেন অনেকদিন থেকেই। বর্তমানে ইউ টিউব ও গুগোল এর কল্যাণে অতীত অথবা বর্তমানের যে কাওকে নিয়েই তথ্যবহুল লেখালেখি করা তুলনামুলক সহজ। ফেসবুকে অনেক রাইটার ইদানিং বাংলাদেশের পুরাতন শিল্পীদের নিয়ে অনেক তথ্যবহুল লেখালেখি করে থাকেন। তারাও স্বীকার করেন স্মৃতির পাশাপাশি এইসব রিসোর্স উপাত্তের জন্য ব্যাবহার করে থাকেন বৈকি। এই সিরিজে আমি নিজেও অনেকবার গুগোল ও ইয়ু টিউব ব্যাবহার করেছি। শুধুমাত্র শাহরুখ খান অংশটুকু সম্পূর্ণ স্মৃতি নির্ভর। কারন শুধু ভারতীয় নয় ,বাংলাদেশি প্রচার মাধ্যমের কল্যাণেও উনি সার্বক্ষণিক আমার আয়েত্তের মধ্যেই থেকেছেন। কিন্তু তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কারন পরের প্যারায় বলার চেষ্টা করেছি।
আমার আগ্রহের তালিকায় আসার জন্য মিস্টার খান নিজে গত ২৫ বছর ধরে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছেন।এবং যোগ্যতর প্রার্থী হিসাবে আমার আগ্রহের উপযুক্ত সময়ে প্রবেশ করেছেন আমার ভাললাগায়। আমাদের দেশের ছায়া ইন্দ্রিয় সমালোচকরা একে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলবেন। কিন্তু আফসোস এই আগ্রাসন কে দমন করা বর্তমান সময়ে অসম্ভব ।
ডঃ খান সেখানেই থামেন নি , আগ্রহ ধরে রাখার জন্য আমার পৌঁছে দিয়েছেন তার প্রোডাক্টগুলো। শুধু তাই নয় , উনি বৈশ্বিক রুচির সাথে তাল মিলিয়ে, নিজের দেশের প্রেক্ষাপট কে মাথায় রেখে আপডেট হয়েছেন প্রতিনিয়ত। পরিবরতন করেছেন নিজেকে ,ফলাফল জলবৎ তরলং। ফলে উনি দেশে ও দেশের বাহিরে সমান জনপ্রিয়। এটা শুধু আগ্রাসনের মধ্যমে হওয়া অসম্ভব । ছয়শ মিলিয়ন ডলার নিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় ধনী অভিনয়শিল্পীর জায়গা করে নিয়েছেন । ৫০তম আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী চরিত্র হিসাবে প্রমান করেছেন,তিনি সিনেমা বোঝেন তার থেকে বেশি বোঝেন দর্শকের নাড়ী ।
উল্লেখিত স্ট্যাটিস্টিকসগুলো যে শুধু মিডিয়ার কাগুজে তথ্য নয় সেটা প্রমান করে তার ৪০% রেভেনিউ যেটা আসে বহির্বিশ্ব থেকে। আমি তার কাজের সাথে বেশ পরিচিত তাই তাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বিন্ধুমাত্র তথ্য সঙ্কটে পড়িনি । এখানে জাতীয়তাবাদ এর দোহাই দিয়ে একটা ঠেশ দেয়া যেতে পারে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
বাস্তবতা কি ?
একদম সাম্প্রতিক সময়ের একটা উধাহরন দেয়া যেতে পারে । শাহরুখ তার সিনেমা "ডিয়ার জিন্দেগী" সমস্ত ভারতবর্ষের মাত্র শহর কেন্দ্রিক ৬০০ মাল্টিপ্লেক্স ও কিছু সংখ্যক সিঙ্গেল স্ক্রিন এ রিলিজ দিয়েছেন , অর্থাৎ তিনি শুধু মাত্র মাল্টিস্টার কাস্টিং এর উপর ভরসা করে সিনেমার টার্গেট দর্শকের বাহিরে যেয়ে রিস্ক নেন নি। আবার ভারতের বাহিরের স্ক্রিন দিয়ে এই সংখ্যার সামঞ্জস্য ঘটিয়েছেন। আবার তার জানুয়ারি ২০১৭ তে মুক্তি অপেক্ষায় থাকা "রেইস" ভারতের প্রায় চার হাজার স্ক্রিন এ মুক্তি দিবেন বলে একটা ধারণা দিয়েছেন । শ্রেণী ও রুচি কে সম্মান করার এর থেকে ভালো উধাহরন আর কি হতে পারে ? আমাদের মিডিয়া কি একটু ভেবে দেখেবন যে কাদের জন্য কি তৈরি করতে হবে এই রিসার্চ এর প্রয়োজন এখন একটা নির্মম বাস্তবতা? এখন আর শুধু পার্শ্ববর্তী দেশের চ্যানেল নয় বরং সমগ্র ইয়ু টিউব এর সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতার সময় চলে এসেছে। এখানেই বারবার করা ভুল আবার হচ্ছে। মোশারফ করিম এর হাত থেকে দর্শক দের সালমান মুক্তাদির এর হাতে তুলে দিচ্ছেন পরিবর্তন হিসাবে। কনটেন্ট এর সাথে অভিনেতাদের মানানসই করুন , অভিনেতাদের জন্য কনটেন্ট নয়।
সাফ কথা , আমার পছন্দ কে স্টাডি করার সময় চলে এসেছে। আমি এখানে দর্শকের একজন ক্ষুদ্র একক সুতরাং বাংলাদেশের সব শ্রেণীর দর্শক কেই এই স্টাডির আওতায় আনতে হবে দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার কৌশল হিসাবে।
তার মানে এই যে,'দর্শক হিসাবে আমি কি দেখি ?'
অন্য কোন নামকে যদি আমার এই প্রশ্নের পটভূমি তে বসাতে চাই । শুরু করা যাক শাহরুখ খান এর লাউড বিনোদন এর কালচার থেকে আলাদা টম হাঙ্কস (Tom Hunks) ও রবার্তো বেনিগ্নি (Roberto Benigni) ও তাদের দর্শক দের নিয়ে ।
হিথ লেজার(heath ledger) কে নিয়ে একটি সম্পূর্ণ আলাদা পর্ব করার ইচ্ছা কারন তার পার্সোনাল লাইফ এর ভীষণ বৈচিত্র্যময়তা। মৃত্যুর আগে এই অসামান্য প্রতিভাধর অভিনেতা তার জীবনের ও ইতিহাসের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র টি শেষ করে যেতে পেরেছিলেন। এমন সৌভাগ্য কয়জনের হয় ।