somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্র হত্যার বিচার কি শুধুই বহিস্কার ????

১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে দেশে মুদ্রা ব্যবস্থা , শেয়ারবাজার, দ্রব্য মুল্য, জ্বালানী তেল-গাস সহ সামগ্রিক অর্থনীতি তে যে আস্থিরতা বিরাজ করছে তাতে সাধারন জনগনের নাভিশ্বাস উঠে গেছে, বিরোধী দল বলছে দেশ অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে আর সরকারী দল বলছে সবই মোটামুটি ঠিকঠাক চলছে। যেহেতু উপরের বিষয় গুলো এখানে আলোচ্য বিষয় নয় তাই ধরে নিলাম সরকারী দলের কথাই ঠিক “ সব ঠিক-ঠাকই চলছে” ।

কিন্তু সব যদি ঠিক-ঠাকই চলে তাহলে বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা কি ? গত কিছু দিন ধরে আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে যে খবর গুলো দেখলাম,পড়লাম সেগুলো কি ছিল ?? গত বছর চট্রগ্রাম ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র হত্যার ঘটনা দেখেছিলাম কিন্তু বিচার দেখিনি। আর গত কয়েকদিন দেখলাম ছাত্রলীগিয় তাণ্ডব। তাতে নিহত সহ আহত শতাধিক তো ছিলই। বুয়েট, কুয়েট, জাবি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালায় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালায়ে যা ঘটেছে তাতে মনে হয়না এগুলো কোন বিশ্ব বিদ্যালয়, মনে হচ্ছে হিংস্র জন্তু জানোয়ারে ভরা কোন জঙ্গল যেখানে বাঘ, নেকড়ে , হায়েনা গুলো ওত পেতে থাকে শিকার ধরার আশায়। ডিসকাভারি, ন্যাশানাল জিওগ্রাপি চ্যানেলে যেমন দেখা যায় একপাল হরিণের মাঝ থেকে ৮/১০ টা হায়েনা মিলে তাদের শিকার ধরে নিয়ে যায়, বাকী হরিন গুলো কখনো পালিয়ে বাঁচে, কেউ সাহায্যের জন্য চিৎকার করে, কেউ মনের দুখে মাটিতে পা আছড়ায় আবার কেউ প্রচণ্ড আবেগে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরে। প্রতিরোধের চেষ্টা ও করে মাঝে মাঝে কিন্তু বেশীর ভাগই বিফলে যায়। আর পশু সমাজে অই নেকড়ে, হায়েনা দের বিচার করবে কে ??
গত কিছু দিন কি আমরা তেমন ঘটনাই দেখিনি ?? কিছু খুনি, সন্ত্রাসীদের আচরন ছিল সেই হায়েনাদের মত আর মানুষ বলে হয়ত বাকী ছাত্রছাত্রী রা ব্যতিক্রম ছিল। অনেকে (যারা সাহসী) বিচারের দাবীতে আন্দোলন করেছে , ফেসবুক, ব্লগ সহ সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলো তে নিজ নামে লিখেছেন, পোস্ট বা কমেন্ট করেছেন। আর আমার মত কম সাহসীরা হয়ত বেনামে লিখেছেন, মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কেউ মনের দুঃখ মনেই চাপা দিয়েছেন। আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাই সেই সব সাহসীদের যারা আন্দোলন করে দাবী আদায় করে নিয়েছেন, আর সমব্যথী সব কম সাহসীদের জন্য যারা হয়ত আমার মত সামাজিক ও পারিবারিক দায়ভারে রুঝু হয়ে আছেন।

আবার আসি বিচারের কথায়। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীট মানা হয় বুয়েট কে আর তার শিক্ষকরা তো সেরাদের ও সেরা। কিন্তু এই সেরা মানুষ গুলো কিনা বিচার করলেন একজন ছাত্র(তৌসিফ আহমেদ ঈসান) কে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে আধমরা করে ফেলার শাস্তি হচ্ছে মাত্র ৬ মাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার !!!!! (জানি না পূর্ণ মেরে ফেলার শাস্তি উনাদের কাছে এক বছরের বহিস্কার ছিল কিনা !!!!) পরে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ২ জন ছাত্র নামের কলঙ্ককে আজীবন বহিস্কার করতে বাধ্য হয়েছেন। ঞ্জাবিতে ও আজ ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৩ কুলাঙ্গার কে জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।কি বিচিত্র !!! এই দেশে খুনীদের শাস্তি দিতে আন্দোলন অবস্থান ধর্মঘট করতে হয় !!! বুঝি না, এই বিশ্ব বিদ্যলয় গুলো কি মানুষ গড়ার কেন্দ্র নাকি খুনী লালন কেন্দ্র !!
এই অধম লেখক ও একটি পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা কালে সাড়ে সাত বছরের ছাত্র জীবনে ( ভুলে ও কেউ ভাববেন না আমি এম ফিল বা পিএইচডি করেছি, সাড়ে সাত বছরে শুধু মাস্টার্স ই করতে পেরেছি) অন্তত সাতটি ছাত্র হত্যাকাণ্ড দেখেছিলাম। কিন্তু কোনটির বিচার দেখিনি। এছাড়া ও আমাদের সমাজে কি আজ পর্যন্ত কোন ছাত্র হত্যার বিচার হয়েছে ? কেউ ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করেছে ? তাহলে আমরা কি সেই পশু সমাজে বাস করছি ? নিয়মিত পত্রিকার পাঠক হিসেবে আমি কখনো মনে করতে পারি না, যত গুলো হত্যাকাণ্ড এখন পর্যন্ত বিশ্ব বিদ্যালয় গুলতে ঘটেছে তার কোনটির জন্য কারও শাস্তি হয়েছে, এমন সংবাদ দেখেছি। যদি হয়ে থাকে আপনারা দয়া করে আমাকে জানাবেন (আমি অজ্ঞতার জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে রাখছি)। কেন এমন হবে? আমরা কি সভ্য দেশে বাস করছি নাকি কেন অসভ্য, বর্বরতার দেশে। বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে যেভাবে বাঁশের চেলা, রামদা, চাপাতি দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে ছাত্রদের আহত ও নিহত করার হল সেটাকে প্রস্তর যুগের সাথেই তুলনা করা চলে। ডিজিটাল স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় আশা দলের অঙ্গ সংঘটনের এমন প্রস্তর যুগীয় তাণ্ডব আমাদের শিহরিত করে। আমরা ধিক্কার জানাই এই বর্বরতাকে। বুয়েট, কুয়েট এর ছাত্রদের লেখা গুলো পড়ে চোখে পানি চলে এসেছিল কিন্তু মনে হয় সরকার বা প্রশাসনের হৃদয়ের এতটুকুও নাড়া দিতে পারে নি। নইলে তে আমরা দেখতাম কেউ গ্রেফতার হয়েছে বা এদের গ্রেফতার করার জন্য কোন তৎপরতা চলছে। উচ্চ আদালতকে ইদানিং আমরা দেখি স্ব-প্রণোদিত ভাবে অনেক বিষয়ে রুল জারি করতে কিন্তু এই বিষয়ে তারা ও নিরব!!! এই বর্বরতা, নির্মমতার পরে ও খুনী, সন্ত্রাসীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ভাবতে চাই আমরা সভ্য ও গনতান্ত্রিক দেশে বাস করছি, এদেশে সরকার আছে , বিচার আছে, আইন-আদালত আছে, ছাত্রদের জীবনের মুল্য আছে, সন্তান হারা বাবা-মায়ের চোখের জলের দাম আছে, ত্রিশ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সম্মান এখন ও বর্তমান ।


বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিতরে হোক এর বাইরে হোক একজন খুনীর পরিচয় শুধু “"খুনী”" ছাড়া এর কিছু হতে পারে না। তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার সাহস না করে। কোন পরিবারের স্বপ্ন কে গলা টিপে হত্যা না করতে পারে। আজ যে ছাত্ররা আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে দাবী আদায়ে বাধ্য করেছে তারা যে একদিন সরকার কে বাধ্য করবে না সেটা কে বলতে পারে। তাই সন্ত্রাসীদের লালন ছেড়ে দিয়ে, তাদের শাস্তি বিধান করে দেশের ছাত্র সমাজকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিবে এমন প্রত্যাশাই থাকল বর্তমান সকার ও ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের প্রতি। নইলে অদূর ভবিষ্যতে এর জন্য চড়া মুল্য দিতে হবে রাজনৈতিক দল গুলোকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×