প্রধান মন্ত্রীর সেই বিখ্যাত ঘোষণা " নিজেদের অর্থেই হবে পদ্মা সেতু" আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা ব্যক্তি ও সংগঠন ১ দিনের বেতন বা নাস্তা/ টিফিনের টাকা দান করতে শুরু করল। যদিও এনাদের সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে সবাই জানে বা কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় পাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত বলে মনে হল। যে জগান্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রিরা আন্দোলন করল বছর না ঘুরতেই সেই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ঘোষণা দিল তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা দিবে!!!!!!! বিচিত্র এই দেশ!! বিচিত্র এই দেশের ভিসিরা !!! এত মর্যাদা পূর্ণ পদে থেকে ও নিজেদের আত্ম সন্মান বিকিয়ে দিয়ে নোংরা রাজনীতির পা চাটতে আদের এত টুকু ও বাঁধে না। [ ইদানিং কালের ভিসিদের কর্মকাণ্ডে এমন মন্তব্য করতে বাধ্য হলাম বলে দুঃখিত]
মুল কথায় আসি, পদ্মা সেতুর চাঁদা দান প্রসঙ্গে ফেসবুকে ও কয়েকটা তা পেজ এ অর্থ সাহায্য দিয়ে দেশ প্রেমিক হাওয়ার আহবান জানাল। আই রকম পোস্ট যে কয়টা এ চোখে পড়েছে কমেন্ট করেছিলাম " আমি চাঁদা দিব না, কেউ যদি তাতে বলে আমি দেশ প্রেমিক না তাতে কিছু যায় আসে না, সরকার অঙ্গিকার করুক আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত দেশের তালিকায় ( টি আই বি) প্রথম ৫০ টি দেশের মধ্যে নিয়ে আসবে এবং তা যদি করতে পারে তবে একদিন না, ১ মাসের বেতনের টাকা দেব পদ্মা সেতুর জন্য। এখন সাহায্য দিয়ে নিজের কষ্টের টাকায় ত কাউকে দুর্নীতির হোলি খেলতে দিতে পারি না।" এই কমেন্ট দেওয়ার পরে মনে হচ্ছিল আমার মধ্যে হয়ত দেশ প্রেমের ঘাটতি আছে, দেশের জন্যে আমার হয়ত আবেগ কম।
আজ "প্রথম আলো " তে আমার প্রিয় একজন লেখক আনিসুল হকের লেখা বের হল , পড়ে মনে হল, আমি ঠিকই আছি। তার লেখা থেকে ২ টি চুম্বক অংশ দিলাম
"মানুষের এই যে বিপুল সৃজনশীলতা, এই মহাকর্মোদ্যোগ, এর সামনে সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের দ্বন্দ্বময় রাজনীতি এবং আমাদের শাসকশ্রেণীর বেপরোয়া লুণ্ঠনবৃত্তি। তারা কোনো আইন-কানুন মানে না, তাদের কোনো লজ্জাশরম নেই। তারা একটার পর একটা এমন কাজ করে যে লজ্জায় পুরো জাতির মাথা কাটা যায়। আর তারা এমনি নির্লজ্জ যে সেই সব লজ্জাজনক অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে। তারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে এবং কখনো কখনো সেই সব ধরা পড়ে, বিদেশি মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় এবং বিদেশে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার হয়। দেশের টাকায় চারটা পদ্মা সেতু হতে পারে, যেকোনো মহৎ কাজে দেশের ডাকে মানুষ, টাকা-পয়সা তো সামান্য ব্যাপার, জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু দেবটা কাকে? কিসের জন্য? আমি কি শেয়ালের হাতে আমার মুরগির বাচ্চাকে তুলে দেব দেশ আত্মত্যাগ চায় বলে?"
"দুই বিপরীত বাংলাদেশ এখন আমাদের সামনে। এই লেখাটা আমি লিখছি আসলে প্রচণ্ড হতাশা থেকে। আমরা কি আরেকটু ভালোভাবে শাসিত হওয়ার যোগ্যতা রাখি না? কী সুযোগটাই না এই মহাজোট সরকার লাভ করেছিল দেশটাকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়ে গাড়িটা স্টার্ট করার। একগুঁয়েমি, হীনম্মন্যতা, কূপমণ্ডূকতা, লোভ, দুর্নীতি, ব্যর্থতা, অযোগ্যতা আমাদের সব সম্ভাবনাকে কি বিনষ্ট করল না?"
এই লেখাটি পড়ে আমি আত্ম বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। এই দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়, সেই দুর্নীতি এই শাসক শ্রেনীই করে। এমন দুর্নীতিবাজ শাসকদের হাতে আমার কষ্টের টাকা আমি তুলে দিব না। "তোরা লুটে নে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা কিন্তু আমি আমার পকেট শক্ত করেই ছেপে রাখব !!!!!"
আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি, আপনারা কি ভাবছেন ???
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৩