somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুরের সাথে কথার সংঘর্ষে গান নামক বৃষ্টির ঝংকার

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং কান্ট্রি মিউজিক শুনতেছি অনেক। বিশেষ করে মির‍্যান্ডা ল্যাম্বার্টের গান প্লে করলে হেতেরে দেখুম নাকি হেতের গান শুনব তাই ভেবে টেনশন খাইতে হয়। তবে গান শোনার ক্ষেত্রে আমি হলাম সব খাদক টাইপের মানুষ। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবত কান্ট্রি মিউসিক প্লে করলেই কেন জানি একটু পরেই ট্যাগোরের গান প্লে করতেছি যেন অনেকটা আলু ভর্তা ডালিম ভর্তা খাওয়ার মত। কি ভয়ানক !!! কিন্তু রবীন্দ্রসংগীত শুনলে যেই মানসিক শান্তি ও আনন্দ পাই, সেইটা অন্য কোন ভাষার কোন গান কিংবা কোন শিল্পী আমাকে দিতে পারে নাই।

এক সময় রবীন্দ্র আমার অসহ্য ছিল।স্কুলে থাকতে বাসায় টিভি ছিল না বলে রেডিও বেশী শোনা হত। কিন্তু তখন সকালে রেডিও অন করলেই শুনতাম উপস্থাপিকা বাজখাই গলায় বলছেন -
- এখন রবীন্দ্রসঙ্গীত প্লে করবেন অমুক খা, তমুক খান, আচার খান ব্লা ব্লা ।
কিরে বাবা !!! বাংলাতে কি সকালে শোনার জন্য অন্য কোন গান নাই ? তোদের রেডিও স্টেশনে অন্য কোন রেকর্ড না থাকলে স্টেশন বন্ধ করে দিয়ে বাসায় গিয়ে জামাই বউ মিলে বেলা বিস্কুট বানাইয়া খাইতে থাক। বেলা বিস্কুট না বানাইতে পারলে আঠা ময়দা দিয়ে লোফ বানা আর খা। একসময় দেখবি লোফ খাইতে খাইতে তোরাও লোফের মত ফুলে গেছিস। তারপরে একসময় ফুলতে ফুলতে ব্লাষ্ট হয়ে যাবি। আমরাও তোদের অত্যাচার থেকে নিস্তার পাব।

কয়েকবছর পরের এক বাদলা দিনে সন্ধ্যাবেলা টিভি অন করে দেখি রবীন্দ্র সঙ্গীত্যাচার শুরু হইছে। গানের কথাগুলা খেয়াল করেতো থ হওয়ার সাথে সাথে টিভির সামনে "দ" এর মত করে বসে পড়লাম।
এইরকম চমৎকার বাদলদিনের জন্য রবীদা এইরকম সুন্দর একটা গান লেখছে !!! একদম আমার মনের কথাগুলি যেন গানের মধ্যে। এই একটা গানের জন্য আমি তার আগের সব রবীন্দ্র সঙ্গীত্যাচারকে মাফ করে দিলাম। সেই গানটা ছিল

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥
ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
যাবে না, যাবে না--
দেয়াল যত সব গেল টুটে॥
বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন বলরামের আমি চেলা,
আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--
যত মাতাল জুটে।
যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,
যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
পাব না, পাব না,
মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে

সেই থেকে শুরু। আমার যাপিত জীবনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু বরীন্দ্রসঙ্গীতপ্রীতির একটুও পরিবর্তন হয় নাই। জীবনের প্রত্যকটা মুহুর্ত আমি উপভোগ করেছি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে। যখনই আমার খুব ইন্সপাইরেশন তখন আমি শুনি -

আগুনের পরশ-মণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পূণ্য করো দহন-দানে

আমার এই দেহখানি তুলে ধরো
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে
আগুনের পরশ-মণি ছোঁয়াও প্রাণে

আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারারাত ফোটাক তারা নব নব
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব-পানে
আগুনের পরশ-মণি ছোঁয়াও প্রাণে ।

আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রানে


স্কুলে থাকতে আমাগো এক বন্ধুর উপরে অন্য স্কুলের প্রেম নামক এক ঠাডা পড়ার কারনে একদিন আমারে কয়-
-দোস্ত, আমারে একটা চিঠি লেখে দে।
তখন পর্যন্ত আমার চিঠির লেখার দৌড় বাইরে থাকা আংকেল আর কাজিন পর্যন্ত। তাকে বললাম -
- তুই যদি ওই মেয়ের হাতের থাপ্পর খাইতে চাস, তাইলে আমি সানন্দে তোকে চিঠি লেখে দিব। তবে তুই যদি সত্যিই ওই মেয়ের সাথে কুটুস কুটুস করে পার্কে বসে বাদাম খাইতে চাস , তাইলে সব চেয়ে ভাল হয় পার্কের কোন বাদাম বিক্রেতা মামাকে দিয়ে চিঠিটা লেখানো। এইসব ব্যাপারে তারা সবার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ কারন সবই তারা নিজের চোখে দেখে । তাদের চিঠি লেখার সময় কল্পনার আশ্রয় নিতে হপে না।

শেষমেষ তার পাগলামিতে আমি বিরক্ত হয়ে তাকে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত লেখে দিয়ে বললাম-
- ওই মেয়ে যদি রোমান্টিক হয় তাইলে তোর আর কিছু বলতে হবে না। তবে সে যদি রোমান্টিক না হয় তাইলে তোর কপালে খারাবি আছে দোস্ত।
আপনারাও গানটা খুব ভাল করে জানেন। গানটা ছিল-

ওপারে তুমি রাঁধে এইপারে আমি
মাঝ নদী বহে রে
ওপারে তুমি শ্যাম এইপারে আমি
মাঝ নদী বহে রে ।।

ওপারে তোমার বাঁশি যে বাজে
এই পারে আমি মরি যে লাজে
ওপারে তোমার নূপুরও বাজে
এই পারে আমার নাই মন কাজে
মাঝ নদী নিরবে বহে
কূল কেমনে ভাঙ্গেরে ।।

ও পারে তুমি রাঁধে এইপারে আমি
ও পারে তুমি শ্যাম এইপারে আমি
মাঝ নদী বহে রে ।।

ওপারে তুমি রাঁধে এপারে আমি

তবে আফসুসের কথা হল সেই চিঠিটা পেয়ে ওই মেয়ে নাকি মহা ক্ষ্যাপা ক্ষেপছিল। গানটা শুনে কয় -
-- এই কোন চিঠি হল নাকি !!! এইডাতো গান। তাও গানের মাঝে নদী আসল কোথা থেকে !! আমাদের এলাকায়তো কোন নদী নাই। বড়জোর রাস্তার কথা আসতে পারত ।
পরে শুনছিলাম যে সেই মেয়ে ও তার বান্ধবীরা নাকি -
"টুপুরটাপুর বৃষ্টি পড়ে
তোমার কথা মনে পড়ে"
টাইপ কোবতে পছন্দ করত। সো সেও মনে মনে এই রকম কিছু আশা করছিলাম। টাপুরটুপুর বৃষ্টির জায়গায় একেবারে নদী এসে যাওয়ার আমার বন্ধুকে "না" করে দিছে।

শেষে একটা কমন আফসুসিত গপ্প কই।
সদ্য বিবাহিত একশিল্পীর বউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে। সেই শিল্পী কিছু বুঝতে না পেরে সিনিয়র এক বন্ধুর কাছে গেছে উপদেশের জন্য।
সিনিয়র বন্ধু সব শুনে বলল-
তুমি কি সুখী হতে চাও নাকি নিজের আত্নমর্যাদা বজায় রেখে শিল্পচর্চা করতে চাও ?
- আত্নমর্যাদা বজায় রেখে শিল্পচর্চা করতে চাই এবং একই সাথে সুখীও হতে চাই।
- না, দুইটা একসাথে কখনও হবে না। তুমি যদি সুখী হতে চাও তাহলে তোমার বউ যা বলবে সেটাই মেনে চলবা, এমনকি সে ভুল কিছু বললেও সেটা মেনে চলবা। আর যদি তুমি তোমার আত্নমর্যাদা বজায় রেখে শিল্পচর্চা করতে চাও , তাইলে তোমার বউকে আর বাপের বাড়ি থেকে আনার দরকার নাই :):D
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:২০
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×