somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমানবন্দরে বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ১ (লন্ডন হিথ্রো এয়ারপোর্ট)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিমানবন্দর আমার প্রিয় জায়গা, তা সেইটা যেই বিমানবন্দরই হোক না কেন! শত শত মানুষ, শত শত কাহিনি। যে দিকেই তাকাই মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষ একটা গল্প নিয়ে হাঁটতেছে; ভালোবাসার গল্প, উত্তেজনার গল্প, বেদনার গল্প, মিলনের গল্প বা আলাদা হয়ে যাওয়ার গল্প। তবে কেন জানি প্রত্যেকবার আমি বিমানবন্দরে বিশেষ করে ইমিগ্রেশনে গেলেই তাদেরকে আমার কোন না কোন একটা গল্প বলাই লাগে। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতাগুলো জন্যই এই সিরিজ।

হিথ্রো ইন্ট্যারন্যাশনাল

এটা হল খাটাশ টাইপের বড় এক এয়ারপোর্ট অনেকটা আমাগো গ্রামের নাককাটা মহাজনের সাবের বাড়ির মত, সে গ্রামের মধ্যেই বিশাল এক শহর বানিয়ে ফেলছে। টার্মিনালে অনেকক্ষন হাটার পরে ইমিগ্রেশন লাইনে মিনিট পাচেক দাঁড়ানোর পরে কাউন্টারে গেলাম।
- লন্ডনে কি জন্য আসছ?
- এলিজাবেথের লগে দেখা করতে।
অফিসারে কয় - আমার লগে মস্করা কর। তুমি আসছ রানী এলিজাবেথের লগে দেখা করতে? হাচা করে কও লন্ডনে কি জন্য আসছ।
কইলাম - শোন অফিসার। আমার এক বন্ধু কইছে "দুনিয়াতে ২ ধরনের মানুষের সাথে নাডামি করে পার পাওয়া যায় না।
১. দজ্জাল বউ/গার্লফ্রেন্ড
২. ইমিগ্রশন অফিসার।
- আমি তার বেদ বাক্য অক্ষরে অক্ষরে মানি। আর শোন, এলিজাবেথ হল আমার জাষ্ট ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ড, নাথিং এলস!
আমি নাডা হলে এই অফিসার মনে হয় এইরাম কয়েকশ নাডা পকেটে নিয়ে ঘুরে। কয়- ঠিক করে বলত, এই বেদ বাক্য তোমার বন্ধুর নাকি তোমার দজ্জাল বউয়ের? আর পৃথিবীর সব চেয়ে উইনিভার্সেল ট্রুথ হল, সব জুটিরাই নিজেরদের সম্পর্ককে প্রথমে "আমরা শুধু বন্ধু"র ভিতর দিয়ে চালিয়ে দে।
মনে হচ্ছিল অফিসারের মাথার সব চুল টেনে তুলে ফেলি কিন্তু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম যে বদের মাথায় তেমন চুলই নাই তবে শার্টে কিছু চুল আছে তবে সেইগুলো মনে হয় তার বিলাইয়ের চুল। বাংলাদেশের গরমে ট্র্যাফিক জ্যামে পড়লে নির্ঘাত ওর মাথায় কেউ না কেউ ডিম ভেজে খেত। বহুত কষ্টে কইলাম -
- আমি এখনো বিয়ে করিনি। আর আমরা আসলেই বন্ধুর বাইরে কিছু না। তার বয়ফ্রেন্ডের ট্রাইচেপ্স দেখলে তুমিও ডরাইবা।

অফিসারের "হুম" আর আমার পাসপোর্ট আর রিটার্ন টিকেটের দিকে মনেযোগ দেওয়ার কারনে বুঝলাম ব্যাটার নাডামি মনে বন্ধ হইছে। কিন্তু যেই আমার আশার ফুল ফুটার আগে ব্যাটা ফু দিয়ে নিভিয়ে দিয়ে কয়-
- তুমি আসছ এক শহর থেকে কিন্তু তোমার আউটবাউন্ড টিকেট হচ্ছে অন্য শহরের মানে ঢাকার। ঢাকায় কি বিয়ে করতে যাচ্ছ?
- কডিন মুখ করে কইলাম, না। আর তোমার এই ধরনের প্রশ্ন করা মানে টা কি?
- না মানে লন্ডনে সব বাংলাদেশীদের দেখি তারা বিয়ের করার সময় বাংলাদেশ যায় আর একটা বউ নিয়ে ফেরত আসে।
ব্যাটা আমার সাথে ফাজলামি করতেছে দেখে আমিও ফাজলামি কইরা কইলাম-
আসলে ঢাকায় যাচ্ছি আমার এক্স-এর বিয়ে খাইতে। সে সাদা ব্রিটিশ আর এখন এক বাংলাদেশী ছেলেকে বিয়ে করতেছে। তোমরা এত বিদেশী বিয়ে কর কেন? তোমাগো দেশে কি ছেলেদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?
সে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ধুম করে পাসপোর্টে সিল মেরে কয়- ওয়েলখাম ঠু লন্ডন :)

পরে ঢাকায় আসার সময়ও আরেক কপিজ্ঞতা হইছে। আমি সাধারনত খুব লাইট ট্রাভেল করি। নিতান্ত দরকার না হলে আমি ক্যারি অন লাগেজ ছাড়া কোন চেকড ব্যাগ সাথে নেই না। বিমানের কাউন্টারের সামনে দেখলাম অধিকাংশ লোকজন সাথে করে ৪/৫টা লন্ডন নিয়ে যাচ্ছে। আমার সাথে যেহেতু কোন চেকড ব্যাগ নাই, সেইজন্য অন্তত ৭/৮ জন লোক এসে আমাকে রিকোয়েষ্ট করেছে, ভাই, আপনারতো সাথেতো তেমন কোন ব্যাগ নাই। আপনি আমার একটা ব্যাগ কি আপনার নামে নিবেন? বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বিমানের কাউন্টারের আপু সিউর হওয়ার জন্য আমাকে ২ বার জিজ্ঞাসা করেছে যে আমার সাথে আসলেই ছোট্ট একটা ক্যারি-অন ছাড়া অন্য কিছু নাই। পরে জিজ্ঞাসা করল- আমার ক্যারি অনের ওজন মেপেছি কিনা। আমি বললাম-
- ক্যারি অনের ওজন মনে হয় হবে ৩৫/৪০ কেজির মত।
আপু বুঝছে যে শয়তানি করতেছি। সেইজন্য কয় - ঠিক আছে ভাইয়া কিন্তু ৩০ কেজির কম হলে কিন্তু আমি আপনাকে চার্জ করব
তবে সবকিছুর উপরে ছিল বিমানের ননাফসুসিত সার্ভিস - ৩৫ হাজারফুট উপরে বসে কাচামরিচ আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া যা দুনিয়ার অন্য কোন রাজকীয় এয়ারলাইন্সও দিয়ে পারবে না।

পোষ্ট লম্বা হইয়ে যাচ্ছে। আরও বিমানবন্দরে আরও মেলা আফসুসিত, ননাফসুসিত কাহানি আছে। পরে পোষ্টামুনে। আপনে চাইলে নিজের কপিজ্ঞতাও কমেন্টে শেয়ার করুন, প্লিজ।

ছবিঃ গুগল জেডা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩০
৮৬টি মন্তব্য ৮৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×