somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জার্মানিতে ক্লাস আর হোস্টলের দিনকাল নিয়ে কিছু টুকিটাকি কথন

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাডেমিক ক্লাস আর পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা ব্যাস্ত থাকার কারনে অনেক দিন ধরে সামুতে লেখা হচ্ছে না। এদিকে মাস ছয়েক আগের ট্যুরের ছবিগুলো নিয়ে লিখব সে সময়টাও পাচ্ছি না । গত ২ সপ্তাহ ধরে ক্লাস করছি তারই কিছু ছোট ছোট ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করছি। শীত কাল হওয়ায় জার্মানিতে এখন সুর্য উঠে সকাল ৮ টার দিকে আর অস্ত যায় বিকাল ৫ টার দিকে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৭.৩০ এর আর সপ্তাহের ২ দিন সেই ক্লাস চলে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত । তার মানে সুর্য উঠার আগে ক্লাসে যাই আর সুর্য ডুবার পরে ক্লাস শেষ হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতি ৪৫ মিনিট পর ৫মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত ব্রেক পাওয়া যায়। লাঞ্চ টাইমে ৪৫-৫০ মিনিটের ব্রেক । আর আমাদের হোস্টেল আর কেন্টিন আমাদের একাডেমিক বিল্ডিং এর ঠিক পাশে। তাই দেখা যায় লাঞ্চ ব্রেকে পোলাপাইন লাঞ্ছ শেষে রুমে গিয়ে ছোট খাট একটা ঘুমও দিয়ে আসতে পারে।

হোস্টেলের নিয়মের মধ্যে অন্যতম কয়েকটা যেমন রুমে সিগারেট খাওয়া যাবে না, আর অ্যালকোহল আনা যাবে না। খালি হোক ভরা হোক কোন ধরনের অ্যালকোহলের বোতল পেলে সরাসরি এম্পয়ির কাছে কম্পেন চলে যাব। কে শোনে কার কথা পোলাপাইন ঠিকই রুমে নিয়ে আসে ,রুম ক্লিনারা এসে যাতে কোন ক্যান না পায় তাই যে ভাবে নিয়ে আসে ঠিক সে ভাবেই খালি ক্যান বাইরে ফেলে দেবার ব্যাবস্তা করে। প্রতিটা ফ্লোরেই সিসি ক্যামেরা থাকায় কাজটা সাধন করার ট্যাকনিকও আলাদা।

আমারা রুমমেট ৪ জনের আমি ছাড়া বাকি তিনজনই আল্লাহর রহমতে এই কাজগুলোতে এক্সপার্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৪ সপ্তাহের ক্লাসের জন্য পোলাপাইন রুমে কফি ম্যাশিন, লাউড স্পিকার আর টিভি নিয়ে আসছে । ৪ জনের জন্য ২ টা প্লে স্টেশন , ক্লাস ছাড়া বাকি সময়ে ফিফা না হয় অন্যান্য গেম খেলে মোটামুটি ভালই সময় পার করে।
যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস হয় না তাই সবাই বাসায় চলে যায় । আর এই সময়ে আবার টিভি সহ সব প্যাক করে নিয়ে যায় ।

সেদিন ক্লাস বিভিন্ন রকম পেমেন্ট মেথট যেমন ক্যাশ , ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক চেকের পেমেন্ট নিয়ে পড়াচ্ছিল টিচার। আমার পাশের ছেলে আমাকে বলে কি সে নাকি তার জীবনে চেক দেখে নাই। দেখবে কেমনে পে পাল আর ক্রেডিট কার্ড থাকতে চেকের দরকার কি ।

স্মার্টফোন আর হর্টসঅ্যাপের যোগের পোলাপাইন এখন আর ক্লাসের লেকচার কস্ট করে ব্যাক বোর্ড থেকে খাতায় লেখে না। কি দরকার কস্ট করে হাতে লিখে খাতার পাতা আর কলমের কালি খরচ করবে। সেদিন একটা লিস্ট হাত বদল হতে হতে ক্লাসের সামনের বেঞ্ছ থেকে আমার হাত আসলে যেখানে সবার নাম আর মোবাইল নাম্বার লিখতে হচ্ছে। কি কারন টের পেলাম কিছুক্ষন পরে ক্লাসের ৩০ জনকে নিয়ে হর্টস অ্যাপের গ্রুপ থেকে মেসেজ পেয়ে। কি হবে গ্রুপ করে । এই যে স্যার ক্লাসে কি পড়াইলো সেইটা সবার সাথে শেয়ার হয়ে যাচ্ছে একবারে। আর স্যার ব্ল্যাকবোর্ড না হয় প্রজেক্টরে যা দেখাচ্ছে দেখা যাবে সামনের সারির কেউ একজন সেটার ছবি তুলে গ্রুপে শেয়ার‍্ দিয়ে দিল । কাজ শেষ , বাকীদের আর কস্ট করে আর লিখতে হল না। আবার দেখা গেল ক্লাস শেষে কোথায় আড্ডা দেয়া যায়, পার্টি না হয় মুভি , সবাই আপটুডেট থাকছে ।
এইজন্যই টিচাররাও আজকাল ওয়েবের এড্রেস দিয়ে দিচ্ছে কোন টপিকের ডিটেলস জেনে নেবার জন্য ।

শুক্রবার হচ্ছে সপ্তাহের শেষ দিন । তাই শুক্রবারে হাফ ক্লাস হয়। আর দেখা যায় পোলাপাইন তাই বৃহপ্ততিবার রাতে মোটামুটি পার্টির মুডে থাকে । যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ড্রিংক বা অ্যালকোহল এলাউড তাই দেখা যায় রাতের বেলা পোলাপাইন পার্টিতে গিয়ে এতটাই বেহুস হয়ে যায় যে অন্য আর একজন ধরে নিয়ে আসতে হয়। সবচেয়ে মজা লাগে সেই সময়ের কথোপোকথন গুলো যেগুলো পরে আর যারা বলে তাদের মনে থাকে না। আর পরের দিন সকালে ঠিকই একদম ফিট হয়ে ক্লাসে দেখে একটু আশ্চর্যই লাগে।

টিচারদের আন্তরিকতা আর ব্যাবহারে কথা আর কি বলব। পড়াশোনার পরিবেশকে যতটা শিক্ষার্থিদের ফ্রেন্ডলি করা যায় তার সর্বোচ্চ চেস্টা তারা করে যায়। সেদিন ক্লাসে একজন বেঞ্ছের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, টিচারের নজরে আসতেই তিনি তাকে প্রশ্ন করল যে খারাপ লাগছে কিনা? তিনি তক্ষণ নিজে আর এক ক্লাসমেটকে নিয়ে তাকে আমাদের স্টুডেন্টদের কমন রুমে রেস্ট নেবার জন্য নিয়ে গেল , সাথে তার পানির বোতলটাও তিনিই নিলেন । মিনিট ১৫ পরে আমাদের সেই ক্লাসমেট যখন একটু সুস্থা বোধ করছে সেও আবার ক্লাস জয়েন করল ।

ল এর ক্লাস যেহেতু জটিল সব ধারা পড়তে হয় তাই মোটামুটি আমি প্রিপারেশন নিয়েই ফেলেছি যে ছুটির দিনে ল মুখস্তের অভিজানে নামতে হবে। কিন্তু ক্লাস টিচার কিছুক্ষন পরেই বলল যে ল এর এই সব ধারা মুখস্ত করা হচ্ছে একটা স্টুপিড আইডিয়া। যদি পরিক্ষায় এই সব ধারা নিয়ে প্রশ্ন আসে তাহলে অবশ্যই এই সব ধারা সম্বলিত একটা আলাদা পেজ সাথে এড করে দেয়া হবে। কোন দরকার নাই মুখস্ত করার।

আসলে লিখতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না। পড়াশোনাযে আসলেই স্টুডেন্টদের ফ্রেন্ডলি করা যায় অনেক দেরিতে হলেও বুঝার সৌভাগ্য হয়েছে । মুখস্ত বিদ্যা আর স্ট্রেস নিয়ে আর যাই হোক পড়াশোনা হয় না , এখানকার শিক্ষকরা তাই ব্যাসিক বা প্রকৃত শিক্ষার দিকে গুরুত্ব বেশি দেন। আজকে থামতে হচ্ছে । ক্লাস টেস্টের পড়া জমে গেছে। সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×