somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা বিপত্তি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন ও জীবিকার তাগিদে আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে যেদিন জার্মানির মাটিতে পা দেই, এয়ারপোর্টে নেমেই প্রথমে যে জিনিসটা উপলব্দি করেছি তা হল ডয়েচ বা জার্মান ভাষা না শিখে আর যাই হোক এখানে টিকে থাকা আর মরুভুমির তপ্তবালুকার মধ্যদিয়ে মাইলের পর মাইল খালি পায়ে হেটে চলা একই কথার। চলতে পথে প্রতিদিনকার জীবনে কতইনা ঘটনা ঘটেছে জার্মান ভাষা কেন্দ্রিক, তাদের কিছু যেমন মজার আবার কিছু কিছু বিব্রতকরও বটে। তেমনি কিছু টুকরো ঘটনা তুলে ধরব আজ।
১)
জার্মানিতে এসেছি সপ্তাহ খানেক হয়েছে, ইতিমধ্যে কিছু কিছু শব্দ শিখেছি। তবে এখনো পুরোপুরি সম্পুর্ন বাক্য বলতে পারি না। আর শব্দগুলো পড়তে গেলে ইংরেজির মত উচ্চারনের প্রবনতা তখনো যায় নি। বলে রাখা ভাল জার্মান ভাষায় A , E, I এই তিনটা বর্নের উচ্চারনের ভিন্নতা রয়েছে। তখনো রান্নাবান্নায় ততটা পারদর্শী না হবার কারনে ভাত আর ডিম ভাজিই ভরসা। আর দামের দিক থেকে ডিম আর দুধের দাম বাংলাদেশের মত টাকার হিসেবে কম হওয়ায় এগুলোর প্রতি আকর্যন ও বেশি ছিল । কিন্তু বিপত্তি ঘটল ডিম কিনতে গিয়ে। যে দোকানে ঢুকেছি সেখানে চাল, ডাল আর দুধ খুজে পেলেও ডিম খুজে পাচ্ছি না। তাই সাহায্যের জন্য দোকানের এক কর্মচারীর দারস্ত হইলাম । কিন্তু বিপত্তি ঘটল আমি ডিম নামের গোলাকার বস্তুটি যে খুজে পাচ্ছি না , তা তাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিনা । আমি যতই তাকে জার্মান ভাষায় ই খুজতেছি আর হাতের ইসারায় গোলাকার ডিমের আকৃতি দেখাছি বেচারী না বুঝতে পেরে ততই বোকার মত একবার আমার দিকে আর একবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে । অবশেষে না পেরে ডিম ছাড়াই সেদিন চলে আসতে হয়েছিল । আসলে কাহিনী হল, জার্মান ভাষায় ডিমকে বলে Ei যার ইংরেজি উচ্চারন করলে হয় এই , কিন্তু জার্মান ভাষায় উচ্চারন হবে আই। আর সেই জন্যই বেচারী বুঝতে পারে নাই আমি কি ঘুরার ডিম এই এই করে তাকে বুঝাতে চাচ্ছি ।

২)
তখন সবে মাত্র কিছুদিন হল নতুন কাজে জয়েন করেছি। সবাই মুটামুটি সব কিছুই হাতে কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছে । তো একদিন বস আমাকে ওয়াইনের বোতল কি করে ওপেন করতে হয় তা শেখাচ্ছিলেন। তিনি প্রথম একটা বোতল ওপেন করে দেখিয়ে দিলেন কি করে ওপেন করতে হয় । নিয়ম হচ্ছে যার ওয়াইনের বোতল অডার করবেন তাদেরকে প্রথমে একটু ওয়াইন দিতে হয় টেস্ট করার জন্য যে ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য । বস প্রথম বোতল ওপেন করে জার্মান ভাষায় বললেন,Willst du probieren? যার বাংলা দাঁড়ায় তুমি কি টেস্ট করতে চাও। আমার সহজ সরল উওর আমি এলকোহল খাই না। সেই আগের সুপার সপের সেলস পারসনের মত বস আমার দিকে করুন দৃস্টি দিয়ে ২য় ওয়ানের বোতলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল , এইবার এইটা তুই খুলার ট্রাই কর। আসলে বেচারা আমাকে ওয়ান ট্রাই(টেস্ট) না করে ওয়াইনের বোতল খুলার ট্রাই করতে বলেছিলেন। আর আমার সুপার জার্মান ভাষা বুঝার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমি ওয়াইনের স্বাদ নেবার কথা ভাবছিলাম ।।



৩) জার্মানিতে নিত্যদিনের পরিবহন হিসেবে ট্রেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছোট বড় সব শহরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ট্রেন লাইন। আর টাইমের ব্যাপারেও যথেস্ট সচেতন আর আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য প্রায় সবাই কম বেশি ট্রেনেই যাতায়াত করেন। মাঝে মাঝে এমনও হয় একই রাস্তা ধরে হয়ত দুটি গন্তব্যে একই সময়ে কোন ট্রেন যাবে। আর সে ক্ষেত্রে ২ টু ট্রেন একসাথে করে যে স্টেশনে গিয়ে আলাদা পথে যেতে হবে সেখানে গিয়ে ভাগ হয়ে যায়। তেমনি একট্রেনে উঠেছি একদিন। যেহেতু স্টেশন আর ট্রেনের ইলেক্ট্রিক বোর্ড কিছুক্ষন পরপরই লিখাটা দেখা যাচ্চে যে ট্রেন উমুক স্টেশনে গিয়ে ২ ভাগ হয়ে ২ দিকে চলে যাবে। কিন্তু কোন বগি কোন দিকে যাবে তা কিছু বলা নেই আর আমিও বুঝতে পারছি না ট্রেনের মাইকের ঘোষনা। যথারীতি নিদ্রিস্ট স্টেশনে এসে ট্রেন থেকে গেল আর যাত্রীদের মধ্যে দৌড় ঝাপ শুরু হয়ে গেল বগি বদলানো নিয়ে। আমি কিছু না বুঝে সেই দৃশ্য দেখছি। কিছুক্ষন পরে ট্রেনের এক কর্মকর্তা এসে আমার কাছে জানতে চাইল আমি কোথায় যাব ? আমার গন্ত্যবের নাম শুনে সে তাড়াতাড়ি আমাকে হাতের ইশারায় অন্যবগিতে যাবার কথা বল্লেও মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে গেট ডাউন এর জায়গায় সিট ডাউন বলে ফেলল । ভাগ্য ভাল আমি তার হাতের ইশারা দেখেই দৌড়দিয়েছিলাম তা না হলে আমার যেমন জার্মান নিয়ে সমস্যা ঠিক তেমনি তার ইংরেজি শুনে বসে থাকলেতো আমার গন্ত্যব রেখে অন্য গন্ত্যবে চলে যেতে হত।

********************************
জার্মান ভাষা ও ভাষা নিয়ে প্রবাসীদের লেখা পড়তে দেখতে পারেন জার্মান প্রবাসে ফেব্রুয়ারী ম্যাগাজিন ।
----------------------------------------------
জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিন – ফেব্রুয়ারি ২০১৫ – “ভাষা দিবস – বিশেষ সংখ্যা”
ডাউনলোড/পড়তে চাইলেঃ www.GermanProbashe.com/archives/3641
************************************
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×