আমাদের পায়ের নিচে শক্ত মাটি দেখে আমরা ধরে নিই, ভূমি হচ্ছে স্থির! আসলে ভূমি স্থির নয়, সেগুলো নানা ভাগে বিভক্ত এবং সেগুলো এদিক-সেদিক নড়ছে। আমরা যে ভূমি খণ্ডের ওপর আছি তার নাম ইন্ডিয়ান প্লেট। সেটা বছরে দুই ইঞ্চি করে উত্তর দিকে এগোচ্ছে এবং উত্তরের ইউরেশিয়ান প্লেটকে ধাক্কা দিচ্ছে। সেই ধাক্কায় মাটি উপরে উঠতে উঠতে হিমালয় পর্যন্ত তৈরি হয়ে গেছে! সব প্লেটেরই এটা পরিসীমা বা বাউন্ডারি থাকে। এই বাউন্ডারিতে ধাক্কাধাক্কি চলতে থাকে।আর এই ধাক্কাধাক্কি ভূমিকম্পের কারন(তবে সবসময় যে এটাই কারন তা কিন্তু নয়)। .....................................................................................................স্থলভাগের যে বিন্দুতে ভূমিকম্পের তরঙ্গ সূচিত হয় তাকে কেন্দ্র বলে এবং এই কেন্দ্র থেকে স্পন্দন সকল দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম এটি কেন্দ্রের ঠিক উপরের বিন্দু বরাবর ভূ-পৃষ্ঠে অনুভূত হয় যাকে উপকেন্দ্র (epicentre) বলে। ভূমিকম্পের আকার পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত মাপক হচ্ছে রিকটারের মান (M)। রিকটার স্কেলে তীব্রতা নির্ধারণে সিসমোগ্রামে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠ তরঙ্গ বিস্তার (Surface Wave Amplitude) এবং প্রাথমিক (P) ও মাধ্যমিক (S) তরঙ্গ পৌঁছানোর সময়ের পার্থক্যকে ব্যবহার করা হয়।রিখটার স্কেলের মাত্রা ১ বৃদ্ধি পেলেই ভূকম্পনের মাত্রা ১০ থেকে ৩০ গুণ বেড়ে যায়৷ .................................................................................................................................................................................................... পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়৷ কিন্তু এর বেশিরভাগই মৃদু ভূমিকম্প বলে সাধারণত আমরা অনুভব করি না।ইউএসজিএসের এই ওয়েবসাইটটি http://earthquake.usgs.gov/ খুলে বসে থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একটা ভূমিকম্প হয়েছে। ......................................................................................................
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছিল চিলিতে ১৯৬০ সালে। রিখটার স্কেলে সেটি ছিল বিস্ময়কর ৯.৫। সেই ভূমিকম্পে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। দেশটি তখন রীতিমতো পরিকল্পনা করে তাদের দেশের বিল্ডিং নিয়ম মেনে ভূমিকম্প সহনীয়ভাবে তৈরি করতে শুরু করে। ২০১৪ সালে তাদের দেশে যখন ভয়ঙ্কর ৮.২ মাত্রার একটা ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, তখন তাদের দেশে মানুষ মারা গেছে মাত্র ছয়জন! নিয়ম মেনে বিল্ডিং তৈরি করলে কী লাভ হয়, এটি তার একটা চমৎকার উদাহরণ। এর থেকে প্রায় ষাট গুণ ছোট ৭ মাত্রার একটা ভূমিকম্পের কারণে ২০১০ সালে হাইতিতে মানুষ মারা গেছে প্রায় তিন লাখ! দরিদ্র দেশে নিয়মনীতি না মেনে ম্যাচ বাক্সের মতো দুর্বল বিল্ডিং তৈরি করলে তার ফলাফল কী হতে পারে, এটা তার একটা খুব করুণ উদাহরণ। ................................................................................ ............ হিমালয় অঞ্চলের যে ভূমিকম্প ধ্বংস করে ফেলেছে নেপালকে, তা জাপানে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এজন্য জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়।সুতারাং উৎকৃষ্ট নগর পরিকল্পনাই ভূমিকম্প প্রতিরোধের কার্যকর টেকনিক।ভূমিকম্পের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা প্রস্তুত থাকলে ৯০ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। জাপানের ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প নিয়মিত ঘটনা। অথচ ক্ষয়ক্ষতি হয় না বললেই চলে। এর কারণ ভবনগুলো নির্দিষ্ট ডিজাইনের। ভূমিকম্প প্রতিরোধে সুপরিকল্পিত উপায়ে নগরায়ন ও বসবাসের কোন বিকল্প নেই ।
....................................................................................................
পৌরাণিক কাহিনীতে ভূমিকম্প ................... -------------------------------
ভূমিকম্প নিয়ে নানা ধরনের লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে...
• গ্রিক জাতির ধারণা অনুযায়ী তাবৎ ভূমিকম্পের জন্য দায়ী ভূমিকম্পের দেবতা পোসাইডন। পোসাইডন যখন খারাপ মেজাজে থাকেন, তখন ভূমিতে ত্রিশূল দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করেন। ফলে ভূমিকম্প হয়। মানুষের পাপকাজে রাগন্বিত হয়েও তিনি এরকম করেন বলে প্রচলিত আছে। .......................................................................................................
• পশ্চিম আফ্রিকান সংস্কৃতির কিছু মানুষ মনে করত, জীবন টিকে আছে এক দৈত্যের মাথার মধ্যে। গাছপালা সেই দৈত্যের চুল। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হচ্ছে পরজীবীর মতো, যারা দৈত্যের ত্বকজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মধ্যে দৈত্যটি মাথা এদিক-ওদিক ঘোরায়। তখনই ভূমিকম্প হয়।[১৩] .............................................................................................
• জাপানের লোকজন আবার ভূমিকম্পের সঙ্গে নামাজু নামের মাগুর জাতীয় মাছের সম্পর্ক খুঁজে পায়। তাদের মতে নামাজু কাদার মধ্যে বাস করে। কাশিমা নামের এক দেবতা জাপানকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করার জন্য স্বর্গীয় শক্তির মাধ্যমে শক্ত পাথর দিয়ে নামাজুকে চেপে ধরে রাখেন। ফলে নামাজু নড়াচড়ার সুযোগ পায় না। যখন কাশিমা তার পাহারা সরিয়ে নেন তখনই নড়ে ওঠে নামাজু। ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ....................................................................................................
• ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত আছে, পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে চারটি বিশালাকৃতির হাতির ওপর। তারা আবার দাড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের ওপর দাঁড়িয়ে। কচ্ছপটি দাড়িয়ে আছে একটি মহিষের দুই শিংয়ের ওপর। এদের মধ্যে যে কোনো একটি প্রাণীর গা চুলকালে তারা নড়াচড়া করে, ফলে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়। .............................................................................................
• নর্স পুরাণে আছে সৌন্দর্যের দেবতা বলডারকে হত্যা করার কারণে দেবতা লকিকে একটি বিষধর সাপ মাথার ওপর দিয়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সেই সাপ তার মাথায় ক্রমাগত বিষ ঢেলে চলেছে। তার স্ত্রী সেজিন তাকে বাচানোর জন্য একটি পাত্রে বিষ ভরে রাখছে। পাত্রটি পুর্ণ হয়ে গেলে সে যখন তা খালি করতে যায় তখন ক্রমাগত পড়তে থাকা বিষ থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য লকি নাড়াচাড়া করে ফলে ভূমিকম্প হয়।
.......................................................................................................
এই লেখার অনেকটাই বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
...............................................................................................................................................................................................................
ব্লগিং দুনিয়াতে আমি একেবারেই নতুন, ভুল ভ্রান্তি হলে বিরোধিতা না করে শুধরে দেবার অনুরোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:০০