কাহিনী বাস্তব , লেখকের বানানো না
সকাল থেকেই একটা আজাইরা ব্যাপার নিয়ে অনেক পেইন খাইলাম। সন্ধ্যার দিকে একটা কাজে আবার বাসা থেকে বের হলাম,গন্তব্য আগ্রাবাদ । হাতে তেমন কাজ নেই। আবহাওয়াও রোমান্টিক । তাই রিকশা নিলাম । উঠেই হেডফোন কানে দিয়ে গান শোনা শুরু করে দিছি (বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে হর্নের যেই অবস্থা ,হেডফোন কানে না দিলে এতদিনে কান পচে যাইত)
হটাত দেখলাম পথের পাশে জটলা । আশেপাশে মানুষ এত কৌতূহল দিয়ে দেখতেছে ভাবলাম ক্যাটরিনা আইসা শিলা কি জাওয়ানি শুরু কইরা দিল কিনা !
এইদিকে সিগন্যালে রিকশাও আটকে আছে। রিকসা ড্রাইভার উঁকিঝুঁকি দিয়ে যা জানলো, তার সারমর্ম হলো মোবাইল চোর ধরা পড়ছে ।
রিকসা ড্রাইভার নিজে থেকেই বলতে লাগলো ,
"একটা মোবাইলের দাম আর কতো ? ৩-৪ হাজার টাকা দিয়েই তো একটা মোবাইল পাওয়া যায়,কিন্তু এর জন্য পোলাডারে এইভাবে মারনের কি দরকার আছিল ?"
ধুর আজাইরা প্যাঁচাল পাড়া স্টার্ট করসে এইটা ভাইবা একটু বিরক্তি দেখালাম। কিন্রু এইটা দেখি চরম বিরক্তিকর পাবলিক ,কথা থামাল না ; বলতেই লাগলো ।
বলল ,"ভাই মোবাইল চোররা তো পড়ালেখা তেমন বেশি করে নায় ,ওরা আর কি বুঝে ? কিন্তু অফিসে যে টেবিলের তলে ১০-২০ হাজার টাকা হাতায়ে ন্যায় তাগরে কিছু কেউ কয় না কেন?"
এইবার মনে হয় বাঁশটা খানিকটা আমার গায়েই লাগলো। বেশি টাকা না হউক কিন্তু লাইনে না দাঁড়ায়ে একটু তাডাতাডি ঢোকার জন্য জীবনে কতো ঘুষ যে দিলাম । তারপরও নিজেরে তো গালি দেওয়া যায় না তাই মনে মনে ড্রাইভাররে গালি দিতেসি "শালা শিক্ষিত দ্যাইখা তুই কি আমারেই কথা শুনাইতেছশ?" তারপর যেই কাহিনী বলল ওইটা শুনে চরম টাসকিটা খাইলাম। কাহিনী এমন না যে শুনে আকাশ থেকে ধপাশ করে কেউ মাটিতে পডে যাবে । উনি বলল , "আমার বড মাইয়াডা একবার মাথাই বাডি খাইছিল,ওরে চট্টগ্রাম মেডিকেল নিয়া গেলাম,কোথাও জায়গা পাইনা। এক লোক কইল, ৫০০ ট্যাঁকা দ্যান জায়গা কইরা দিতেছি। ভাই বিশ্বাস করবেন না I was astonished (এই লাইনটা শুনে আমার মাথাই আকাশ ভাইঙ্গা পরছে,ভাল করে আবার দেখলাম এইটা আসলেই রিকশা ড্রাইভার তো নাকি কোন এলিয়েন নামছে ) পরে আমার মাইয়া ৫ ঘণ্টা ওইভাবে পইরা আছিল, তারপর রক্তক্ষরণে মারা গেছে। ভাই আমার এক ছেলে ,এক মেয়ে । মেয়েটা ছিল আমার "HEART"। আমি গরিব মানুষ তাই কিছু কইতে পারি নাই , মোবাইল চোর মোবাইল চুরি করলে কারো বেশি ক্ষতি হয়না না, কিন্তু এই শিক্ষিত চোরগুলার কারনে আমি আমার কইলজার টুকরারে হারাইলাম , কতো কষ্টে এই মাইয়া বর করলাম...।"
যখন দেখলাম বেশি ইমশনাল হয়ে যাচ্ছে তখন টপিক চ্যাঞ্জ করতে জিজ্ঞেস করলাম,
-ভাই আপনে পড়ালেখা কদ্দুর করছেন ?
-ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পরছি
-আপনার তো অবস্থা ভালই ছিল তো রিকশা চালান কেন?
-ভাই প্রেম কইরা বিয়া করছি, বাপ ঘরে তুলতে দ্যায় নায়। পডালেখাও কম কিছু করতে পারি নায়,তারপর বাসা ভাডা নিয়া গার্মেন্টসে চাকরি করছি কিছুদিন,মাইয়া হওয়ার সময় বউ এর অপারেশন হইসিল ,তখন অনেক ঋণ নিছি , পরে এই অবস্থা।"
কথা বলতে বলতে আমার যেখানে আসার ওইখানে আইসা গেছি। ১০০ টাকা দিয়ে বললাম পুরাটাই রেখে দিতে। তারপর আমাকে চরম লজ্জাটা দিল। বলল ,"ভাই এইজন্যেই কাওরে এইগুলা কইতে চাই না, কাহিনী বইলা যদি ১০০ টাকা কইরা পাইতাম তাহলে তো আর রিকশা চালাইতাম না,বাজারে কাহিনী শুনায়ে টাকা নিতাম"
উনার কথা শুনে ভাবতে লাগলাম আমাদের শিক্ষিত চোরদের কথা। ১০০ টাকা নিতে উনার বিবেগে আটকাইছে, কিন্তু আমাদের শিক্ষিত চোররা যে টেবিলের নিচেই লাখ-লাখ টাকা হাত বদল করে ওদের মনে এই উপলব্ধি কি কখনো হবে না?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



