somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকা থাকলেই সবাই অনন্ত জলীল হতে পারে না

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমিও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম। নাহ তেমন কিছু করিনি। অনন্ত জলীলের বিখ্যাত (!) ছিনেমা “ওয়েলকাম” দেখলাম হলে গিয়ে। যারা এখনো মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমা দেখেননি তারা খুব তাড়াতাড়িই সময় বের করে দেখে নিবেন। আর হ্যাঁ। হলে যাওয়ার পথে গাড়ীতে আপনার সিটবেল্ট না বাঁধলেও হলে গিয়ে সিটে বসে ভালো করে সিটের সাথে আপনাকে বেঁধে নিবেন। না হয় যেকোন সময় হাসতে হাসতে সিট থেকে পড়ে গিয়ে যেকোন অঘটন ঘটতে পারে।

মুভি রিভিও কিভাবে লিখতে হয় আমি জানিনা। তাই লিখার সময় রিভিও লেখার ব্যাকরন মানতে পারছিনা বলে দুঃখিত।

ছবির মুল কাহিনীর অনেকাংশ জুড়েই ছিল “মুশকিল আসান বাবার মাজার” নামক এক জায়গা। সবার মতে ওখানে গিয়ে সমস্যার কথা চিঠি লিখে বক্সে ফেলে দিলে ওই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। যদিও অনন্ত জলীলই সমস্যার সমাধান করে দেই এটা বুঝতে আমাদের ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। দুর্বল চিত্রনাট্য প্রথমেই আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল। অনন্ত জলীল ধনীদের টাকা লুট করে আড়ালে গরীবদের সাহায্য করে আসতেন আর সবাই এটা দেখে মুশকিল আসান বাবার মাজারের তেলেসমাতি ভেবে বিশাল ভক্ত। হটাত করেই আমার ১৮+ অশ্লীল মাথায় কেন জানি একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়া শুরু করলো, আচ্ছা কোন মহিলা যদি তার সন্তান হয়না এটা লিখে বক্সে ফেলে দিতো তাহলে কি অনন্ত জলীল গিয়ে ওই মহিলার সাথে টুট টুট করে সন্তান এনে দিতো? নাহ! এরকম কোন দৃশ্য পরিচালক রাখেননি তাই আমারও অজানা থেকে গেল।

হাজার শুকরিয়া, নিউটন যখন বেঁচে ছিলেন তখন অনন্ত জলীল নামক কেউ ছিল না। জলীল সাহেব পড়ালেখা করেছেন কিনা জানিনা, পড়লেও হয়তো ফিজিক্স নামক কোন বিষয়ের ধারে দিয়ে উনি যাননি। এই ছবি যদি আমি না হয়ে নিউটন স্যার দেখতেন তাহলে তিনি সাথে সাথেই সুইসাইড করে ফেলতেন। কারন রাতদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে গিয়ে উনার আবিষ্কার করা মধ্যাকার্ষণ শক্তিকে পুরো ছবিতে জলীল সাহেব ন্যাকড়া বানিয়ে ফেলেছেন। জলীল সাহেব যখন ইচ্ছে লাফ দিয়ে উপরে উঠে যেতে পারেন আবার নামতেও পারেন !! কিসের আবার এসব মধ্যাকার্ষণ না কি বালছাল শক্তি!!

ছবির শুরুতেই অনন্ত যখন বাইক থেকে নামে, তখন ছবিতে অনন্ত জলীলের প্রয়োজনীয়তা অথবা ক্ষমতা বোঝাতেই কিনা মাটিতে বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হলেও ছবির শেষের দিকে ৩০ তলা বিল্ডিং থেকে মাটিতে লাফ দেয়ার পরও মাটি অক্ষতই ছিল!

সবাই বলছেন অনন্ত জলীল সাহেব সব জায়গাতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। হ্যাঁ পরিবর্তনটা আমারও চোখে পড়ল। যেমন নায়িকা বর্ষার গায়ে ওড়না না থাকলেও জলীল সাহেবের গায়ে কিন্তু সবসময় একটা ওড়না ছিল।

একটা দৃশ্যে চুমুর দৃশ্যও ছিল। বর্ষা চুমু খেতে গেলেন অনন্তকে। কিন্তু চুমু দেখে বাস্তবে সংসার জীবনে (বর্ষা অনন্ত জলিলের স্ত্রী) অনন্ত খুব একটা সুখে নেই বোঝা গেল, একেবারেই এমেচার মেয়েটা 

মজা লেগেছে ভাইস সিটি গেমের মতো রাস্তার মাঝখানে সহ যেখানে সেখানে অনন্তর গাড়ী পাল্টে ফেলার ব্যাপারটা।দুর্নীতি দমন কমিশনের বড় অফিসার অনন্ত বড় বড় রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতি খুজে বের করেন। কিন্তু বকচোদটা পুরো সিনেমাতেই দামি দামি গাড়ী হাকিয়েই সব কিছু করেছেন। এখানেই কাহিনীর বিরাট ভুল চোখে পড়ে। হাইফাই মুভি বানাতে গিয়ে হাইফাই গাড়ী ব্যাবহার করেছেন বুঝলাম। কিন্তু ছবিতে উনি একজন সরকারী অফিসার হয়ে কিভাবে এতো নামীদামী গাড়ী ইউজ করেন বুঝলাম না?!

তার ইংরেজি ভাষাজ্ঞান এবং প্রয়োগ অসাধারণ I I “wanna” asif’s money back(!) ভুল জায়গায় এরকম বারবার “wanna” ইউজ করতে গিয়ে যে উনি নিজেই মানুষের কাছে wannabe হয়ে গেলেন ব্যাপারটা তার উর্বর মস্তিষ্ক কখনো বুঝবে কিনা কে জানে!

“সে ইন্টারনেটের সাহায্যে হার্ডডিস্কের মাধ্যমে সব টাকা ট্রান্সফার করে ফেলেছে” এরকম একটা ডায়ালগ ছিল ছবিতে। কি আর বলবো? ট্রাস্ট মি! এটা শুনে হাসতে হাসতে সিট থেকে পড়ে গিয়ে কোমর ভাঙতাম আরেকটু হলে।

ছবির নাচ দেখে স্কুল জীবনের শারীরিক শিক্ষা ক্লাসের কথা মনে পড়ে গেল। ছবির নাচের জন্যে কি কোন কোরিওগ্রাফার আসলেই ছিল? কেন জানি মনে হয় কোরিওগ্রাফারের বদলে শারীরিক শিক্ষার কোন স্যারকে ভাড়া করেছিলেন অনন্ত।

আমি যতদুর জানি দুইটা রিভলবারে বড়জোর ছয়টি করে বারটি গুলি থাকার কথা।অনন্ত জলীল দুইটা রিভলবার দিয়ে তো মোটামুটি ব্রাশফায়ার করে দেখালেন !!

মোস্ট ওয়েলকাম ছবিতে মিস্টার অনন্ত জলীল মুহূর্তে মুহূর্তে চমক রেখেছেন দর্শকদের জন্যে। সবচেয়ে বড় চমকটা ছিল ছবির শেষ অংশে। মিশা সওদাগর যখন তার প্রেমিকা বর্ষাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে উড়ে যাচ্ছিলেন তখন অনন্ত জলীল তার পিছু নিল বাইক নিয়ে। আমরাও টানটান উত্তেজনা নিয়ে তাকিয়ে আছি সে কি তার নায়িকা ফেরত পাই কিনা দেখতে। যখন হেলিকপ্টার আকাশে উঠে গেল তখন হতাশ হয়ে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম এবার বোধহয় নায়িকাকে আর তার পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু একি! অনন্ত বাইক নিয়ে স্টান্ট দেখিয়ে আকাশে উঠে হেলিকপ্টারও ধরে ফেলল !!

তারপর আবার ঢিশুম ঢিশুম। নায়িকা মুক্ত হল। অনন্ত এবার অনন্ত আর বর্ষা দেখাল আরেক চমক। কোন প্যারাসুট ছাড়াই দুজন সাঁই করে আকাশ থেকে দিল ঝাঁপ! দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। কয়েক হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ঢেই ঢেই করে দুজন অক্ষত অবস্থায় পড়ল পানিতে। কে বলেছে মানুষ অক্সিজেন ছাড়া পানির নিচে থাকতে পারে না? এরপর তো জলীল আর বর্ষা তো পানির নিচে ঢলাঢলি করে মিনিট চারেকের একটা গানই করে ফেলল।


এতোটুকু পড়ার পর নিশ্চয়ই ছবিটা দেখার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন? নাহ হারানো উচিত না। পুরো ছবিতেই হলিউড আর বলিউড কায়দা অনুসরণ করা হয়েছে।প্রচুর টাকা ঢালা হয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। মারামারির দৃশ্যে চিরচারিত বাংলা সিনেমার ঢিশিয়া ঢিশিয়া সাউন্ডটা চেঞ্জ হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। স্লো মোশনের ব্যাবহারও রিয়েলিস্টিক হয়েছে। নায়িকা বর্ষাও নতুন হিসেবে অনেক ভালো করেছেন। ঘিয়ে পানি যা ঢালার তা ঢেলেছে তার জামাই অনন্ত সাহেব! আর ছবি নিয়ে আমার এতোসব নেগেটিভ কমেন্টের একটা কারন আমি খুজে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে বাংলা সিনেমার প্রতি বিশ্বাসের অভাব। এরকম অনেক দৃশ্য আমরা কৃশ/ ওয়ান্টেড মুভিতে দেখে বাহবা দিয়েছি! কিন্তু এখানে না দিয়ে উল্টো বদনাম করছি!
বাংলা সিনেমাতে এরকম দৃশ্য না দেখার অনভস্ত্যতার কারনেই হয়তো ছবির সাথে বাংলা ভাষা শুনে বেমানান মনে হয়েছে। কারন আমার চোখে বাংলা সিনেমা মানেই তো ভারী ভারী সংলাপ। নিজের চোখ বিশ্বাস করতে পারছিলাম না হলিউডে দেখা মুভির মতো বাংলা মুভি দেখছি। তবে যতোই সুনাম আর বদনাম করিনা কেন আর আট-দশটা বাংলা সিনেমা আর এটার কাহিনীর মধ্যে কোন পার্থক্য খুজে পেলাম না। সেই একই কাহিনী। এতো টাকা ঢালার পর অনন্ত যদি নিজে নায়ক হওয়ার লোভটা সামলাতে পারতো তাহলে হয়তো এর থেকে অনেক ভালো কিছু পাওয়া যেতো !

এতকিছু দেখে এতো হাসাহাসি করেও শেষ মুহূর্তে যখন হল ছাড়ছিলাম ততক্ষনে বুকের মধ্যে জমে গেছে অনেকখানি আশা। হ্যাঁ সিনেমা হলের বাইরে মানুষের ঢল। বাংলা সিনেমা আসলেই বদলাতে শুরু করেছে। অনন্ত জলীল দেখিয়ে দিলেন শুধু একটা চেষ্টা করলেই অনেক আগেই হলিউডকে টেক্কা অতো সহজে দিতে না পারলেও বলিউডকে টেক্কা দিয়ে মুভি বানাতে পারতাম। এককালের গার্মেন্টস শ্রমিক অনন্ত যেটা দেখিয়ে দিলেন সেটা আমাদের দেশের মিলিয়নিয়াররা করে দেখাতে পারেননি। তাই অনন্ত জলীলের ভুল ইংরেজিতে বলা আলোচিত ডায়ালগ শুদ্ধ করে আমাদের বলতেই হয়-
“উই হ্যাভ টু রেস্পেক্ট মিস্টার অনন্ত জলীল”
ফেসবুক ব্লগে উনাকে নিয়ে উপহাস আমরা করেছি ভালো কথা।কিন্তু আমাদের স্বার্থেই এখন উপহাস বন্ধ করে এই মানুষটিকে উৎসাহ দিয়ে যাওয়া দরকার।
শেষমেশ বাংলা সিনেমার সুদিন দেখার প্রত্যাশায় রইলাম 
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×