যাদের হার্টে ব্লক ধরা পড়ে সাধারণত ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর ৯৯.৯ পার্সেন্ট রোগী সুস্থ হয়ে যায়| যেহেতু একটা মেজর অপারেশন শরীরের উপর দিয়ে করা হয় একটু শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে| বাকি ০.০১পার্সেন্ট অভাগার আবার নতুন করে ব্লক ধরা পড়ে| এটা আমার নয় ডাক্তারদের ভাষ্যমতে | মানে মোটের উপর কথা হল অপারেশন আনসাকসেসফুল|
দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই ০.০১ পার্সেন্ট অভাগার দলে পড়েছেন আমার মামা আবুল কাশেম বাবুল|যার অপারেশনের পরের দিনই নতুন করে ব্লক ধরা পড়ে|
মামার অতি আদরের ভাগ্নি আমি ।ছোট বেলায় মামা আমাকে আদর করে ডাকতেন মৌসুমী| নায়িকার নামে নাম আমার বেশ লাগতো|ছোট বেলায় মামার হাত,পা, মাথা টিপে দিতে গেলে মামা খিল খিল করে হাসত আর বলত আমার টিপা নাকি ছোট পিঁপড়ার কামড়ের মতন।আমাকে উপদেশ বানী দিতেন “মৌসুমি মামুনি ঠিক মত দুধ কলা খাবা শরীরটা ফিট রাখতে হবে”।মামার তিন ছেলে হৃদয় আবির অনিক।আর এক মেয়ে আমি মৌসুমি।একবার আমার জন্মদিনে মামা ঢাকা ছিলেন কি কাজে যেন এসেছিলেন| আমি তখন সেভেনে পড়ি| এই বয়সে জন্মদিন গুলো একটু অন্যরকম বয়সটাই অন্যরকম অল্পতে অভিমান, চাপা ক্ষোভ ,কেউ উইশ না করলে অথবা আপন জন জন্মদিন ভুলে গেলে খুব মন খারাপ হয় , মনের ভেতর চাপা অভিমান কাজ করে মনে হয় আমার কোন গুরুত্বই নাই কারো কাছে| একবার আমি আমার এক ছাত্রী র জন্মদিনে একটা গিফট কিনে ওর বাসায় গেলাম উইশ করলাম।ওমা! একি আমার উইশ আর গিফট দেখে সে দিলো কেঁদে কারণ তাকে কেউ এখন পযর্ন্ত উইশ করেনি ( বোকা মেয়ে জানেই না তার জন্য সারপ্রাইজ পার্টি আছে)| জন্মদিনের বাকিসব আয়োজন শেষ শুধু কেক আসা বাকি আর আমার মামা জন্য অপেক্ষা | মামা ফিরলেন কেক হাতে| আমি একটা বেগুনি রঙের আমার প্রিয় স্কার্ট পরেছিলাম|মামার নিয়ে আসা কেক কেটে আমার জন্মদিন পালন করা হল|অনেক উপহার অনেক অভিনন্দন।অনেক অনেক ভাল লাগা।প্রথম বেলায় কেউ যদি খুব ভালো লাগার কিছু দেয় সেটা সহজে ভোলা যায়না।প্রথম বেলার সবকিছু বড় মধুময়। তারপর থেকে সুচনা হল আমার কেক কেটে জন্মদিন পালন করা এবং এরপর এক একটা জন্মদিন অনেক অনেক ধামাকা |কিন্তু ওই সুক্ষ ভালো লাগা এখনও মনে গেঁথে আছে।
আমার সেই প্রিয় মামার বাইপাস সার্জারি করার পর থেকে আমি মামাকে কখন স্বাভাবিক ভাবে চলতে ফিরতে দেখিনা সবসময়ই ডান হাতের পাচ আঙ্গুল দিয়ে বুকের বাম পাশটা খামচে ধরে রাখেন|যেন শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখছেন|প্রকৃতি মানুষকে কেন এত অসহায় করে দেয়?? আমার সেই গর্জে উঠা বড়সড় শরীরের অধিকারী মামা এখন দুর্বল চিত্তের একজন মানুষ | রোগে আক্রান্ত মানুষও অনেক বেশী অভিমানী হয়ে যায় বাচ্চাদের মতন তখন মামার ফর্সা গাল লাল হয়ে যায় বড় বড় চোখের কোনে অশ্রু জমা হয়। আমি চুপ করে মাথা নিচু করে মামার কথা শুনি যদি মামার মনটা একটু হালকা হয়। যখন আমি মামাকে দেখতে যাই মামা যখন বলে “মামুনি আমাকে মাঝে মাঝে এসে দেখে যেও” আমার বুকের ভেতর হু হু করে গরম বাতাস বয়ে যায়| কিছু সময় আবেগাপ্লুত হয়ে যান জীবনে যাদের জন্য করেছেন প্রতিদানে কিছু পান নাই হয়তো তারা মামাকে এক পলকের জন্য দেখতে আসেন না তখন অভিমান করে নিজের নামটাটা উল্টো করে বলেন আমি হলাম বাবুল হোসেন আবুল| মামা হয়তো খুবই অসুস্থ বিছানায় কাতরাচ্ছে আমি যখন মামাকে আকুপ্রেশার দিতে যাই মামা সরল সুন্দর একটা হাসি দেন| মামার হাসি দেখে মামিও হাসেন| আমারও ভীষণ তৃপ্তি লাগে|আমি জানি মামা কেন হাসেন মামার এই ছোট ভাগ্নি ছোট হাত দুইটা দিয়ে মামার সেবা করছে এটাই মামার হাসির উৎস|

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


