somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকীয়া এবং তারপর

১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয়নাল উদ্দিন দেখতে শুনতে টমাটোর মত গোলগাল চেহারা আর আছে একটা বড়সড় ভুড়ি।নাকের নিচে হালকা একটু গোফ রেখেছেন। সৌদি আরব বসবাস রত পুরুষের গোফ না থাকা চলেনা, মেয়ের সাথে তুলনা এসে যায়।আশেপাশের বন্ধুগন খেপায়। লজ্জায় তাই বেশিরভাগ পুরুষ. সৌদি আরব গেলে গোফ রেখে দেন জয়নাল ও রেখে দিয়েছেন |টেইলারিং ভালো জানেন জয়নাল তাই এখানে এসে একটা দোকান নিয়েছেন।দিনে দিনে আয় রোজগার বাড়ার সাথে সাথে দোকান এর পরিধি বড় করেছেন প্রথম প্রথম সব কাজ নিজেই করতেন ।এখন আর কুলাতে পারেন না তাই কর্মচারী রেখেছেন কিছু করমচারী তার নিজ গ্রামেরই পরিচিত।সউদি বসবাস রত নারীদের বড় বড় গাউন বানান জয়নাল। এখানে এসেছেন সুদীর্ঘ বার বছর ।তাই জয়নাল কে এখানে অনেকে চিনে।

জয়নাল বছরে দুইবার দেশে যান| মাস খানেক থেকে চলে আসে| স্ত্রী আইভি সুলতানা কে জান দিয়া ভালবাসেন বলা চলে| তার বাকি বন্ধুরা দুই বছর পর একবার যান আর তিনি যান চার বার| টাকা বেশ খরচ যায় তবে তার আফসোস নাই| এক ছেলের আশায় তিনটি মেয়ে হয়েছে জয়নালের শেষে আল্লাহর অশেষ কুদরতে একটি ছেলে হয়েছে কলিজার টুকরা সাত রাজার ধন| দেশে আসার টান টা যেন আরও বেড়ে গেল| স্ত্রী আইভি জয়নালের এই অতি ভালবাসায় মাঝে মাঝে কিঞ্চিত বিরক্ত বোধ করেন| পদুয়া শহরে্র রাস্তার ধারে জমি কিনে সেখানে বসতি গড়েছেন জয়নাল| কোন ভাই নেই ঘরে ছেলেমেয়েরা ছাড়া আছেন এক বৃদ্ধ মা| চোখে ছানি পড়েছে তাই একটু কম দেখেন আর সারাক্ষণ কোন না কোন কারনে খিটিমিটি করতে থাকে| জয়নালের বউ এইসব ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামায় না তাদের বউ শ্বাশুড়ির এই ক্যাচাল এই মিলমিশ|পুরনো গেরস্থ বাড়ি ছেড়ে এসে বড় একটা দালান তুলেছেন যার চার পাশে লাগিয়েছেন ফল গাছের প্রাচীর|বেশিরভাগ ই আম জাম কাঠাল লিচু| বাড়ির আঙ্গিনা পার হতেই বিশালাকার একটা নীল রঙ্গের গেইট পাশে সাইনবোর্ডে লিখা আইভি ম্যানশন| সরু একটা রাস্তা পার হয়ে বড় রাস্তা পুরনো একটা রেলপথ যেখানে রেল চলাচল হয়না |বিকেলে কিছু মানুষ অলস সময় কাটাতে এখানে এসে বসে|

বড় মেয়ে রিন্টি এখন কলেজ ফাইনাল দিবে,মেয়ে বাবার কাছে আবদার করেছে কলেজ ফাইনাল দিয়ে ঢাকা কোচিং এ ভর্তি হতে চায়|বাবা জয়নালের কোন আপত্তি নেই| বড় মেয়ে রিন্টির কোন কিছুতেই বাবা আপত্তি জানাতে পারেনা| সে সবকিছু বাবার কাছে চায় মার কাছে কোন আবদার নাই| প্রয়োজনের বাইরে খুব বেশি কথাও বলে না| ছোট ভাই বোন গুলার সাথে যা একটু কথা বলে|দাদি মারা গেল গত বছর।দাদি বেচে থাকতে দাদির সাথে গল্পসল্প করত।মেয়েটা চুপ মেরে থাকলে দাদি বকাঝকা করত। মার সাথে মেয়েটা যত বড় হচ্ছে তত দুরত্ব বাড়ছে তার বউ আইভি ও কেন জানি মেয়েটাকে একটু একটু ভয় পেতে শুরু করেছে।মেয়েকে জোর দিয়ে কিছু বলতে সাহস পায়না যেন। এসব ভেবে জয়নাল একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে| কিছু কিছু ক্ষত জয়নালের বুকেও আছে তবে তার বয়স হয়েছে তাই মেনে নেয়ার ক্ষমতা ও হয়েছে মেয়ের বয়স কম তাই কষ্ট বেশি পাচ্ছে|হয়ত বড় হলে বুঝবে মাতো মা ই তা সে যেমনই হোক!!মেয়েকে যে কি বুঝাবে তাই জয়নাল বুঝেনা তাই কিছু বলতে যায়না যেমন আছে তেমনই চলুক।মনের কোনে কোথাও কি একটু সুখ পায় এই ভেবে আইভি শাস্তি পাচ্ছে,মেয়েটা মাকে শাস্তি দিচ্ছে সে যা করতে পারেনি মেয়ে করছে।প্রতিশোধ!!

তিনবছর আগের কথা দেশ থেকে চাচা ফোন করে জানালো তার প্রিয় তম বউ আইভির চরিত্র হীন হাতে নাতে ধরা খেয়েছে হুজুরের ছেলের সাথে শালিস হবে সে যেন তাড়াতাড়ি দেশে আসে|জয়নালের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কি করবে কিছুই বুঝতে পারেনা| এমন এক মান ইজ্জতের ব্যাপার এখানে কোন আপন জনের সাথে বলা যাবে না|না বললেও তারা একসময় জেনে যাবে।একবার ভাবলো গ্রামে যাবে না ওই দুশ্চিরিত্রার মুখ আর দেখবেনা তাকে শাস্তি গ্রামের মানুষ দিক| তারপর ছোট ছোট বাচ্চা গুলোর মুখ মনে পড়লো | বড় মেয়েটা নাইনে পড়ে উপযুক্ত মেয়ে সব বুঝার কথা|মেয়েটার মনের উপর দিয়ে কেমন তুফান যাচ্ছে জয়নাল অনুমান করলো|বাকি দুজন এখনো ছোট একজন তৃতীয় শ্রেণীতে অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণী এমন নোংরামী বুঝার সঠিক বয়স তাদের হয়নি বুদ্ধি করে দুরে রাখা যাবে| আর ছেলেটাতো একেবারেই ছোট ছেলেটার তিন বছর বয়স| ভেবে কুল পায়না কিভাবে আইভি এমন কাজ করতে পারলো তার পনের বছর সংসার জীবনে ভালোবাসায় কোথাও কি কমতি ছিলো? ?

জয়নাল চারদিনের মাথায় দেশে হাজির |শালিস বসলো হুজুরের ছেলে দিদারের অন্যায় এর শাস্তি স্বরুপ হুজুরের পরিবার কে একঘরে করা হল|জয়নালের খারাপ লাগলো এই হুজুর মক্তবে তার ছেলেমেয়ে সহ আরও অনেকেই আরবি শিক্ষা দেয় মসজিদে আযান দেয় আর আজ তার ছেলের কুকৃর্তি কারনে তাকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হল একঘরে করা হল| হুজুর তার নিজের ছেলেকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে ব্যার্থ এই তার গুরু অপরাধ|জয়নাল কে সুযোগ দেয়া হল সে চাইলে এই বউকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করতে পারে কেউ তার উপর আরোপ আনবেননা|

জয়নালের. মা কর্কশ স্বরে জানান দিল এই বউকে এক্ষুনি তালাক দিয়া বাপের বাড়ি পাঠাতে এমন দুশ্চরিত্রা বউ ঘরে রাখার কোন মানে নাই ছেলেকে তিনি আবার বিয়ে করাবেন |তারপর ই.মুখে কাপড় চেপে হু হু করে কেঁদে দিল হয়ত এতদিন এক সাথে থাকার কারনে যে মায়া জন্মেছে তার জন্য এই কান্না তারপর ও মন এই দুশ্চরিত্রা বউকে মেনে নিতে চাইছেনা|

জয়নালের সিদ্ধান্তের পালা জয়নাল দেখলো তার বউ আইভি এক কোনায় মাথা নিচু করে অপরাধীর মতন দাড়িয়ে আছে|মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে আইভিকে ঘরে এনেছে তার সাথে বউয়ের বয়সের ব্যবধান কিঞ্চিত বেশি তাও মন প্রান উজাড় করে বউকে ভালবেসেছে| এক বছরের মাথায় রিন্টি হল তারপর জয়নালের বিদেশ গমন| মাঝে বউটার শারিরীক সমস্যা দেখা দিল অনেক দিন বাচ্চা হলনা তারপর ঘর আলো করে পিঙ্কি আর লিজা| জয়নাল মনে মনে ছেলের আশা করেছে তবে কখন বউকে দুকথা শুনায়নি অন্য সবার মতন জয়নালের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা xy এর কথা জানা না থাকলে ও স্বল্প জ্ঞানে এতটুকু জানা ছেলে হওয়া নির্ভর করে বাবার উপর মায়ের উপর নয়|বউটা তিন সন্তানের জননী তাও যৌবন তার দেহে খেলা করে এখনও ছিপছিপে হ্যাংলা পাতলা গড়ন।|ভুল টা জয়নালের গতবার দেশে এসে দিদারকে বলেছিল তার মেয়েগুলো কে একটু পড়া দেখিয়ে দিতে| দিদার আইভিকে চাচী সম্মোধন করতো| তাছাড়া হুজুরের ছেলে দিদার। হুজুরের সংস্কারে বড় হয়েছে সেই ভেবে মনে কোন সন্দেহ কাজ করেনি|অনেক ভেবেচিন্তে জয়নাল আইভিকে ক্ষমা করে দিল| মন থেকে কি করতে পেরেছে? জয়নাল জানেনা|

যে বিশ্বাস একবার নষ্ট হয়েছে তা কি আর ঠিক হবে??পনের বছরের যে বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে তাকি আর ফিরে আসবে কখনো??তার কিছুদিন পর জয়নাল সৌদি ফেরত গেল কিন্তু মন আর কিছুতেই টিকেনা ভেবেচিন্তে সব বেচে দিয়ে একেবারের জন্য দেশে চলে এল এখানে দোকান নিল| ছেলেটার দিকে মাঝে মাঝে সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকায় তারপর আবার মনে হয় নাহ ছেলেটা তার দাদাজানের চেহারা পেয়েছে তাকে যখন বাবা বলে ডাকে সব সন্দেহের উর্ধ্বে গিয়ে জয়নাল ছেলেকে কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলে!!
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×