somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংল্যান্ড - ইটালী নন স্টপ প্রেম পিরিতি

০৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস থেকে নেমে অন্য সবার মতো দ্রুত গতিতে এয়ারপোর্টের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেলো না তানহা, কিছুক্ষন সাইডওয়াকে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো ডানের গেট দিয়ে প্রবেশ করবে নাকি বাম পাশেরটা? সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাটা তানহার কাছে নতুন কিছু না তার উপর আজকে ওর জীবনের গুরুত্বপূর্ন একটা দিন এবং সম্ভবত তার ভবিষ্যতের জন্ম আজকের দিনেই হতে যাচ্ছে........ "নাহ এতো কিছু মাথায় আনবো না" বলে বিড়বিড় করে কাধের ব্যাগটা বাম পাশ থেকে ডানে এনে গটগট করে কাছের গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালো এক মুহূর্ত আর কি মনে করে যেনো দ্রুত সরে গিয়ে আরো কয়েক ফিট দুরের ডানের গেট দিয়েই ঢুকে গেলো এয়ারপোর্টের ভেতর । অদ্ভুত একটা ছেলে! কোনো কিছুই ঠিকভাবে করতে পারে না! এয়ারপোর্টে ঢুকার মতো ছোট্টো একটা ব্যাপারে এতগুলো সময় নষ্ট করলো!

"এ৩" কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস নিতে ৩ মিনিটের মতো সময় লাগলো! এই ৩ মিনিট সামনে থাকা চশমাওয়ালী সুন্দরীর পপড আউট বুকজোড়া থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে নিজের সাথে মোটামুটি যুদ্ধ করতে হলো! শত হলেও পুরুষ জাতি! বোর্ডিং পাস নিয়ে চেকপয়েন্টের টার্মিনালের দিকে হাটতে হাটতে নিজেকে উল্লুক প্রজাতির সাথে তুলনা করতে লাগলো আর গাদাখানিক গালি দিলো মন ভরে! "বুবস দেখলে মাথা নষ্ট হয়া যায় শালা উল্লুকের বাচ্চা! সব লিষ্ট কইরা রাখ গাধার গাধা! কার কার দিকে চাইছস কোনখানে চোখ বুলাইছস সব লিষ্ট কইরা রাখ! ওরে দেখার লগে লগেই কানে ধইরা পুরা লিষ্ট কইবি আর মাফ চাইবি! নায়লে তর কপালে উষ্টা তর ভালোবাসার কপালে উষ্টা!" ...... "সিনোরে ইল তুও পাসসাপোর্তো পের ফাভোরে" - কানের কাছে গাঢ় সাউথ ইটালিয়ান একসেন্ট শুনে বাস্তবে ফিরলো তানহা! মানিব্যাগের চিপা থেকে আইডেনটিটি কার্ডটা বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেল্ট পড়ে নিলো আর ল্যাপটপটা পুনরায় ব্যাগে ঢুকালো! শালার ইটালিয়ান গুলা আরেক বদমাশ! বাদামী চামড়া দেখলেই বদমাইশি শুরু করে দেয়। যদিও তেমন কিছুই ঘটলো না তানহার সাথে!

ফ্লাইটের আরো ৪০ মিনিট বাকি! এক কোনার চেয়ারে বসে আশে পাশের মানুষ ভুলে গিয়ে গ্লাস দিয়ে বাইরের অন্ধকারে বিমান উঠানামা দেখতে লাগলো আর মনের মধ্যে শতো চিন্তার আনাগোনায় কোথায় যেনো হারিয়ে যেতে লাগলো! "দেইখাই কি জড়ায়া ধরমু ওরে? কিছু মনে করবো নাতো আবার? যদি রাগ করে? জীবনে দেখি নাই শুনি নাই আর হুট কইরা জড়ায়া ধরলাম এইডা কিছু হইলো?? আমি আসলেই উল্লুক! আগে অন্তত একটু কথা কইতে হইবো তারপর হাত ধরা তারপর যদি চান্স দেয় তায়লে জড়ায়া ধরার একটা চেষ্টা নেওয়া যাইতে পারে ........ ধুঊঊউর কিসের কি, মনে করলে করবো আর কি ২ বছর ধইরা কথা কই, ক্যামে দেখি ঘন্টার পর ঘন্টার আড্ডা মারি ফোনে এর পরেও কি আর মাইন্ড করলো না করলো এতো কিছু দেখা লাগে? যা করে আল্লায় ধইরাই ঠোটে ঠোট চাইপা ধরমু!...." জীবনে কোনো মেয়ের হাত ধরা হয় নাই যেই তানহার সেই তানহার স্বপ্ন-বাস্তব, ভূত-ভবিষ্যৎ সবকিছু যেই অপরাজিতাকে ঘিরে তাকে চুমু দেওয়ার কথা চিন্তা করেই একটু কেঁপে উঠলো! তবে চিন্তার সুর কাটলো না! আগের মতোই চলতে লাগলো স্বপ্ন বুনার মেশিন তানহার উল্লুক ব্রেইন! কি রংয়ের ড্রেস পড়বে অপরাজিতা, ঠোটে লিপস্টিক থাকবে কিনা, চুলে খোপা থাকবে নাকি খোলা চুলে আসবে? অবশ্য ও সবসময় স্কার্ফ পড়ে মাথায় তাই চুল দেখা যায় না। প্রায় দেড় বছর ধরে অপরাজিতার সাথে তার রিলেশন কিন্তু ক্যান জানি তানহা সবসময় ২ বছর ভাবে! অপরাজিতাকে বকার সময় বলবে "২ বছরেও আমারে চিনলা আর কবে চিনবা? ২ বছর পরে আইছো খোচাইতে এতোদিন মনে আছিলো না?" আবার ফেসবুকে ওয়াল পোস্টে লেখবে "২ বছর ধইরা তোমারে চিনি আর কোনহানকার কোন পোলাপাইন আইছে তোমারে চিনাইতে!" ....... আহহহহহহ অপরাজিতায় ডুবে থাকা তানহার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলো যেনো এয়ারপোর্টের খসখসে মাইকের বিকট আওয়াজ । আবার বাস্তবে ফিরে এসে কালো রংয়ের ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে লম্বা লাইনের প্রায় শেষ প্রান্তে দাড়ালো! রাত ১০ টার ফ্লাইটে এতো লোক ইটালী থেকে লন্ডনে পাড়ি জমাচ্ছে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো তানহা! মানুষের কি কোনো কাজ নাই ? সবাই ইউকে যায় ক্যান?

২ নং গেট দিয়ে বেরিয়ে বাসে ঠাসাঠাসি করে করে কোনোমতে জায়গা পেলো! রায়ান এয়ারের বিমানের গেট পর্যন্ত যেতে ৪ মিনিটের মতো লাগলো! সে এক এলাহি কারবার! বিমানের ভিতরেও সিট রিজার্ভড! ইমার্জেন্সী এক্সিটের পাশের সিটে বসতে হলে বিমানে উঠে আপনাকে আরো ১০ ইউরো দিতে হবে, ক্যাশ নেই? নো টেনশন বিমান বালা হাসিমুখে আপনার দিকে ক্রেডিট কার্ড রিডার মেশিন এগিয়ে দিবে। বাংলাদেশের ৩ নম্বর বাসের সিটিং সার্ভিসের কথা ভাবতে ভাবতে ভুল করে রিজার্ভড সিটে বসতে গিয়েও কি ভেবে যেনো পেছনের সিটে গিয়ে বসলো! কালো ব্যাগটা উপরে রাখতে না পেরে পায়ের কাছে রেখে সিটের নিচে ঠেলে দিলো! সিটে হেলান দিয়ে হুট করেই হারিয়ে গেলো নিজের ভাবনাগুলোতে! এতো দিনের অপেক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে সত্যিই??? সত্যিই কি অপরাজিতাকে দেখতে যাচ্ছে তানহা? ৯০০ কিলোমিটারের বেশি দুরত্ব পেরিয়ে শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে একবার নিজ চোখে অপরাজিতাকে দেখার জন্য, তার কুচুমুচু হাত দুটো একবার ধরে চোখে চোখ রেখে ভালোবাসি বলার জন্য তানহা ছুটে চলেছে?? সব কি সত্যি?? বিমানের মাটি ছেড়ে উঠার মৃদু ধাক্কা আর বিকট শব্দও পারলো না তানহার চিন্তার সুর কাটাতে! ভয়, নার্ভাসনেস, প্রবল ভালোবাসা আর স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক মিশেল অনুভূতি তানহাকে গ্রাস করে ফেললো।

হালকা মেঘলা অর্ধচন্দ্রময় টুরিনের রাতের কালো আকাশে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো বিমানের ফ্লাশিং লাল নীল আলো! আর একটু একটু করে অপরাজিতা নামের স্বপ্নের তরুনীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো তানহা নামের এক স্বপ্নীল যুবক!


(সত্য ঘটনা হইলেও হইতে পারে!)
to be continued.....
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৪৯
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×