খুনিরা ছাত্রদের ধরে দুই কব্জি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ সময় তারা চিৎকার করলে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় চকোলেট বোমা। দেয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুখের ভেতরই চকোলেট বোমা বিস্ফোরিত হয়। ছয় ছাত্রের তিনজনের ওপর এভাবেই পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। যন্ত্রণায় তারা যখন কাতরাচ্ছিল, খুনিরা তখন উল্লাস করছিল।
ঢাকার অদূরে আমিনবাজারের কেবলার চরে ছয় ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নির্যাতনের রোমহর্ষক এসব ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ওই ছয় ছাত্র যে গণপিটুনিতে নিহত হয়নি, তা পুলিশ ও তদন্ত দলের কাছেও স্পষ্ট হচ্ছে। খুনিরা দীর্ঘ সময় নিয়ে ছয় ছাত্রকে পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা করে। তাদের ওই বর্বরোচিত নির্যাতন খুলনার এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার নিহত স্বজনদের সাক্ষ্য নিতে গিয়ে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেছেন, আমরা নিশ্চিত, ওরা ডাকাত হতে পারে না। তাদের ডাকাতি করতে যাওয়ার কোনো অবকাশই নেই। নিহত টিপুর বাবা আবদুর রশিদ জানান, সেদিনের ঘটনা কখনোই গণপিটুনি ছিল না। গণপিটুনি হলে কারও দুই হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করা হতো না। তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হতো। কিন্তু নিহত টিপুর দুই হাত বিচ্ছিন্ন ছিল। পুলিশ, তদন্ত দল ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, পবিত্র শবেবরাতের রাতে সাত বন্ধু কেবলার চরে ঘুরতে গেলে মাদক ব্যবসার পাহারাদারদের নজরে পড়ে তারা। তারা সাতজনকে র্যাবের সোর্স ভেবে আটকে দেয়। তাদের মোবাইল ফোনসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় তারা। মাদকের পাহারাদাররা মাদক ব্যবসায়ীদের খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সাতজনকে আটকে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাটিতে ফেলে কোপাতে থাকে। সাতজনের মধ্যে তিনজন রক্তাক্ত অবস্থায় উঠে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তারা সেখানকার বালু তোলার একটি ড্রেজিং মেশিনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। তাদের পিছু নেয় মাদক ব্যবসায়ীদের একটি দল। রাতের আঁধারে তন্ন তন্ন করে খোঁজ করতে থাকে তিনজনকে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তিনজনকে ড্রেজিং মেশিনের আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসে। ধরা পড়ে যাওয়ার পর তারা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চায়। কিন্তু সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উন্মাদনা যেন আরও বেড়ে যায়। টেনে-হিঁচড়ে আখড়ায় নেওয়া হয় তাদের। ইতোমধ্যে বাকি চারজনকে পিটিয়ে-কুপিয়ে বালুর ওপর ফেলে রাখে তারা। তাদের ওপর লাফিয়ে কেউ কেউ উল্লাস করতে থাকে। বালুর ওপর পড়ে থাকা চারজনের দেহ একটু নড়েচড়ে উঠলেই লাঠিসোঁটা দিয়ে আবার পেটাতে শুরু করে খুনিরা। অপরদিকে ওই তিনজনের ওপর দীর্ঘ সময় নিয়ে চলে পৈশাচিক নির্যাতন। চাপাতি দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। একজনের দুই কব্জি ও পুরুষাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ সময় তারা চিৎকার করলে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় চকোলেট বোমা। দেয়াশলাই কাঠি জ্বালিয়ে তাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুখের ভেতরই চকোলেট বোমা বিস্ফোরিত হতে থাকে। একে একে তিনজনের ওপরই চলে বর্বরোচিত নির্যাতন। আঘাতের পর আঘাত সহ্য করতে না পেরে ছয় ছাত্রের প্রাণ বেরিয়ে যায়। লাশের ওপর উল্লাস করতে থাকে খুনিরা। এরপর তারা ডাকাতির নাটক সাজিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসে। বিগত কয়েক মাসে যাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল, তারা ঘটনাস্থলে এসে লাশের ওপরই লাঠিসোঁটা দিয়ে প্রহার করতে থাকে। খুনিদের নেতৃত্বদানকারী আবদুল মালেক ও তার দলের সদস্যদের পুলিশ চিনলেও এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে নিহত ছাত্রদের পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বড়দেশী গ্রামবাসীর অনেকেই ঘটনা জানতে পেরে তদন্ত কমিটির কাছে গোপনে সাক্ষ্য দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
মুখে চকোলেট বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তোমাকে লিখলাম প্রিয়
আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন