somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩৫ বছর পর সাগরে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো

১০ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমুদ্রসীমা নিয়ে জাতিসংঘের সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন অনুযায়ী সমুদ্র কিনার থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত নিজস্ব সীমানা। এরপর ১৫০ নটিক্যাল মাইল মহিসোপান এলাকা।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম তামিম গতকাল সমকালকে বলেন, সরকার দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, এখন পাশের দেশগুলো আর অবাধে অমীমাংসিত এলাকায় অনুসন্ধান কাজ করতে পারবে না। তাদেরও সমস্যা সমাধানে সালিশি আদালতে যেতে হবে।
জাতিসংঘ সমুদ্র আইনের আর্টিক্যাল ৭৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ সমুদ্র তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক জোন। এ অর্থনৈতিক
জোন বাংলাদেশের এমনিতেই নিজস্ব এলাকা। কিন্তু এই জোনের পুরো এলাকায় বর্তমানে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব নেই। প্রাথমিকভাবে এ এলাকায় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সালিশ আদালতে যাওয়া। এ অর্থনৈতিক জোনের পর আরও ১৫০ নটিক্যাল মাইল মহিসোপান এলাকা। এ এলাকায় দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১১ সালের মধ্যে তথ্য-উপাত্তসহ জাতিসংঘে দাবি তুলবে বাংলাদেশ।
এসব দাবি তোলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিষয়টি পর্যালোচনার দায়িত্ব পালন করছে পররাষ্ট্র মল্প্পণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে সরকারের অন্য কয়েকটি সংস্থা। এগুলো হলো নেভি, জিএসবি, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, বিআইডবি্লউটি, পেট্রোবাংলা, স্পার্সো।
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল সমকালকে বলেন, 'বঙ্গোপসাগরে বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ নালিশ জানাতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।' ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তির কারণে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, 'তাদের আপত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার সম্প্রতি তিনটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দুটি কোম্পানিকে নির্বাচিত করেছে। এরপরও যদি তারা আপত্তি তোলে তাহলে ওই এলাকাটুকু বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হবে।
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সমুদ্রসীমায় নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক আগেই জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়টি আমলে নেয়নি। যে কারণে সমুদ্রের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা আজ হুমকির মুখে। তিনি বলেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘে যেতে হবে। ভারত বা মিয়ানমারের প্রমাণপত্রের কাছে হেরে গেলে বিপদ হবে। কারণ বারবার দাবি জানানো যাবে না। আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ভারত ও মিয়ানমারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাষ্য কী তা এখনও জানতে পারিনি। আমরা এটি জানতে চাই।'
এদিকে পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার সাগরে বিরোধপূর্ণ এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে না। তবে যেসব ব্লকে পাশের দেশগুলোর কোনো আপত্তি নেই সেখানে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাবে। বর্তমানে ২৮টি ব্লকের অধিকাংশ এলাকায় পাশের দেশগুলোর আপত্তি রয়েছে। আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে বাংলাদেশের সীমারেখা চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন করে বড় আকারে অনুসন্ধান কাজ করা হবে। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমারও বিরোধপূর্ণ কোনো এলাকায় খনিজসম্পদ অনুসন্ধান কাজ করতে পারবে না।
সালিশ মীমাংসায় ফল কী হতে পারে_ এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম তামিম বলেন, ফল যেটাই আসুক, তা বাংলাদেশের জন্য খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি সীমারেখা সব দেশের জন্যই জরুরি। পাশের দেশগুলো গভীর সাগরে অনুসন্ধান করছে, আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি।
সালিশ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত প্রথমে একটি সালিশি বোর্ড নিযুক্ত করবে। এরপর সেখানে আইনজীবী নিয়োগ, শুনানি হবে। এই সালিশি বোর্ড শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত জানাবে। সেটি সবাইকে মানতে হবে। এতে ৫ বছর মতো সময় লাগতে পারে।
সরকারি সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সাগরে ভূতাত্তি্বক জরিপ কাজ করার জন্য মন্ত্রিসভায় একটি প্রস্তাবনা তোলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ের সরকার এটি বাতিল করে দেয়। সূত্রমতে, ওই সময়েও জরিপ কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে সাগরে আমাদের ন্যায়্য হিস্যা প্রতিষ্ঠা করার কাজটি এগিয়ে থাকত। কিন্তু পাশের দেশগুলোর সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়_ এরকম ভেবে বিগত সরকার সে সাহস করেনি।
চলমান বিডিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মুক্তাদির আলী গতকাল সমকালকে বলেন, সালিশ চলতে থাকবে। এদিকে অব্যাহত থাকবে আমাদের বিডিং প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে তিনটি ব্লকে পিএসসি আলোচনা চলছে। আগামীতে অন্যান্য ব্লকেও দরপত্র আহ্বান করে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে বিরোধপূর্ণ এলাকায় আমরা অনুসন্ধানে যাব না। এটি বিদেশি কোম্পানিকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তথ্য: http://www.shamokal.com/
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×