কবি শামসুর রাহমান ছিলেন একজন মানবতাবাদী কবি। আর সে-কারণেই ধর্মান্ধরা দেশবরেণ্য এই কবিকে সহ্য করতে পারত না। হরকাতুল জেহাদীরা তাঁকে হত্যাও করতে চেয়েছিল। সিলেটের মাটিতে কবিকে নিষিদ্ধ করেছিল ঐ বর্বররা। কবিকে শত্রু জ্ঞান করত তারাই, যারা আজ ভাস্কর্যকে 'মূর্তি' জ্ঞান করে সহ্য করতে পারছে না। কবি ও ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আজাদকেও অসময়ে চলে যেতে হয়েছে এই জঘন্য বর্বরদেরই কারণে। ধর্মান্ধরা মানবতার শত্রু। 'সামহোয়ার ইন'এ ওদের সদম্ভ বিচরণ দেখে বিস্ময় জাগে!!! ওদের বিরুদ্ধে এ-টিম একটি জ্বলন্ত প্রতিবাদ। নন-এটিম সদস্য হয়েও আমি এই প্রতিবাদকে সমর্থন করি। যদিও প্রতিবাদের পদ্ধতির সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। আবার এ-ও মনে হয়, ইতরদের প্রতিহত করার এটাও বোধহয় একটা ভালো উপায়। তবে সব ছাপিয়ে একটি প্রশ্নই আজ উঁকি দিচ্ছে মনে, 'সামহোয়ার ইন' কর্তৃপক্ষের কি এ ব্যাপারে কিছুই করণীয় নেই? যাঁরা মুক্তচিন্তার ব্লগার, প্রশ্নটি তাঁদের কাছেও (কোনও ইতরের কাছে নয়)। বাঙলা ভাষা যে-ফোরামের প্রকাশমাধ্যম, সেখানে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং হাজার বছরের সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞাপ্রকাশকারীরা কীভাবে প্রশ্রয় পায়?
২৩ অক্টোবর ২০০৮ শামসুর রাহমানের ৮০তম জন্মদিন। আসুন দিনটিকে সকল প্রকার ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ উদযাপন করি। কবির 'এক ফোঁটা কেমন অনল' বইয়ের 'পান্থজন' কবিতাটি দিয়ে তাঁকে স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায় :
বহু পথ হেঁটে ওরা পাঁচজন গোধূলিতে
এসে বসে প্রবীণ বৃক্ষের নিচে কান্তি মুছে নিতে।
গাছের একটি পাখি শুধায় ওদের--
"বলো তো তোমরা কারা? প্রশ্ন শুনে পান্থজন
ঝুঁকে পড়ে নিজের বোধের
কাছে; বলে একজন, "হিন্দুত্বের প্রতি আজন্ম আমার টান।"
দ্বিতীয়জনের কণ্ঠ বাঁশির মতন
বাজে, "আমি বৌদ্ধ হীনযান।"
এবং তৃতীয়জন বলে, "আমি এক নিষ্ঠাবান
বিনীত খ্রীষ্টান।"
চতুর্থ পথিক করে উচ্চারণ, "আমার ঈমাণ
করেছি অর্পণ আমি খোদার আরশে,
আমি তো মুসলমান।"
পঞ্চম পথিক খুব কৌতূহলবশে
কুড়িয়ে পতঙ্গ এক বলে স্মিত স্বরে, "আমি মানব সন্তান।"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:২৪