১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে কবি জীবনানন্দ দাশকে শম্ভুনাথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার ফলে কবির কণ্ঠা, পাঁজরা ও ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ কবি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জীবনানন্দ দাশের জন্ম বরিশালে। ১৮৯৯ (মতান্তরে ১৮৯৮) সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন। মৃত্যুর আগেই 'ধূসর পাণ্ডুলিপি', 'বনলতা সেন', 'মহাপৃথিবী' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বোদ্ধা পাঠকদের মনোযোগ কাড়লেও মৃত্যুপরবর্তী প্রকাশনা 'রূপসী বাংলা'র মাধ্যমেই তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। কবিতা ছাড়াও গল্প-উপন্যাস লিখেছেন তিনি অনেক।
জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে প্রচুর উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। আবার, বাজারে জীবনানন্দের কবিতার ভুলে-ভরা অনেক সংকলনও রয়েছে। বাংলাদেশে জীবনানন্দের কবিতার প্রথম নির্ভরযোগ্য সংকলন রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদিত 'জীবনানন্দের কাব্যসম্ভার'। এরপর অপ্রকাশিত-অগ্রিন্থত কবিতার বিপুল ভাণ্ডার নিয়ে বাজারে আসে আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত 'জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতা সমগ্র'। মূল পাণ্ডুলিপি এবং কবিকৃত 'শ্রেষ্ঠ কবিতা'র বানানরীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য প্রকাশনা আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত 'জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতা সমগ্র'।
শুধু জন্মদিন আর মৃত্যুদিনেই নয়; জীবনানন্দর কবিতা আমাদের প্রতিদিনের পাঠ্য হোক। আসুন, জীবনানন্দের কবিতার পংক্তি দিয়েই ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জীবনানন্দকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই :
যেদিন সরিয়া যাবো তোমাদের কাছ থেকে-- দূর কুয়াশায়
চ'লে যাবো;-- সেদিন মরণ এসে অন্ধকারে আমার শরীর
ভিক্ষা ক'রে ল'য়ে যাবে-- সেদিন দুদণ্ড এই বাংলার তীর
এই নীল বাংলার তীরে শুয়ে একা একা কি ভাবিবো হায়
সেদিন রবে না কোনো ক্ষোভ মনে-- এই সোঁদা ঘাসের ধুলোয়
জীবন যে কাটিয়েছে বাংলায়-- চারিদিকে বাঙালির ভিড়
বহুদিন কীর্তন ভাসান গান রূপকথা যাত্রা পাঁচালির
নরম নিবিড় ছন্দে যারা আজো শ্রাবণের জীবন গোঙায়
আমারে দিয়েছে তৃপ্তি : কোনোদিন রূপহীন প্রবাসের পথে
বাংলার মুখ ভুলে খাঁচার ভিতরে নষ্ট শুকের মতন
কাটাইনি দিন, মাস, বেহুলার খুল্লনার মধুর জগতে
তাদের পায়ের ধুলো মাখা পথে আমি যে বিকায়ে দিছি মন
বাঙালি নারীর কাছে-- চালধোয়া স্নিগ্ধ হাত, ধানমাখা চুল
হাতে তার শাড়িটির কস্তা পাড়;-- ডাঁশা আম, কামরাঙা কুল।
('রূপসী বাংলা' থেকে)