somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি ২ : তিরোধানদিবসে কবি জীবনানন্দ দাশের চারটি কবিতা

২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সে এক সময় ছিল। শীতলক্ষ্যাপাড়ের শহর নারায়ণগঞ্জে প্রতি শুক্রবার সকালে 'ধাবমান'-এর সাহিত্য আড্ডা বসত (এখনও বসে; যাওয়া হয় না)। প্রায়ই যেতাম। আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন রনজিত কুমার। আমাদের সবার প্রিয় 'রনজিতদা'। একসময় বামরাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই মানুষটি আড্ডার প্রতিটি সদস্যকে ছায়ার মতো আগলে রাখতেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি আর আগের মতো সময় দিতে পারেন না 'ধাবমান'এ। কর্মজীবনের ধাক্কায় আমরাও ছিটকে পড়েছি রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে। ছিটকে পড়লেও 'ধাবমান'এর আড্ডার কথা কোনওদিনই ভোলার নয়। সকালের আড্ডা 'শ্রুতি'র হারমোনিয়াম-তবলা ছুঁয়ে কোনও-কোনও দিন শীতলক্ষ্যায় গড়াত। নৌকা নিয়ে ওপারের পাটগুদাম মাঠেও গেছি দল বেঁধে। সঙ্গে প্রিয় কোনও কবির কবিতার বই থাকলে তা থেকে পাঠ করেছি কেউ একজন। শুনেছি সবাই। অভ্যাসটি এখনও রয়ে গেছে।

সঙ্গী পেলে তো ভালো, না-পেলেও নিজের সঙ্গে নিজেই আড্ডা দিতে কবিতার জুড়ি নেই। সবার নয়, কারও-কারও কবিতার সঙ্গে। জীবনানন্দ দাশের সেই বিখ্যাত কথাটির মতো-- 'সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি'।

নিজের এবং 'সামহোয়ার ইন'এর কবিতাপ্রিয় পাঠকদরে জন্য আমার নতুন সিরিজ পোস্ট : 'সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি'। যার কথা ধার করে এই শিরোনাম, আজকের পর্বে সেই জীবনানন্দ দাশের চারটি কবিতা। কবিতাগুলো 'বনলতা সেন' বই থেকে নেওয়া। আজ কবির ৫৪তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে 'রূপসী বাংলা' থেকে একটি কবিতা তুলে দিয়ে দুদিন আগে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছি কবিকে পোস্টে। আবারও শ্রদ্ধা।


হায় চিল

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে !
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে;
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চ'লে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!
হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে।

বুনো হাঁস

পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে
জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহ্বানে
বুনো হাঁস পাখা মেলে-- সাঁই-সাঁই শব্দ শুনি তার;
এক-- দুই-- তিন-- চার-- অজস্র--অপার--

রাত্রির কিনার দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া
এঞ্জিনের মতো শব্দে; ছুটিতেছে-- ছুটিতেছে তা'রা।
তারপর প'ড়ে থাকে নক্ষত্রের বিশাল আকাশ,
হাঁসের গায়ের ঘ্রাণ--দু-একটা কল্পনার হাঁস;

মনে পড়ে কবেকার পাড়াগাঁর অরুণিমা সান্যালের মুখ;
উড়ুক-উড়ুক তা'রা পউষের জ্যোৎস্নায় নীরবে উড়ুক
কল্পনার হাঁস সব; পৃথিবীর সব ধ্বনি সব রং মুছে গেলে পর
উড়ুক উড়ুক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জ্যোৎস্নার ভিতর।


শ্যামলী

শ্যামলী, তোমার মুখ সেকালের শক্তির মতন;
যখন জাহাজে চ'ড়ে যুবকের দল
সুদূর নতুন দেশে সোনা আছে ব'লে,
মহিলারি প্রতিভায় সে ধাতু উজ্জ্বল
টের পেয়ে, দ্রাক্ষা দুধ ময়ূরশয্যার কথা ভুলে
সকালের রূঢ় রৌদ্রে ডুবে যেতো কোথায় অকূলে।

তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো
আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রের নীল,
দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা,
বিকেলের উপকণ্ঠে সাগরের চিল,
নত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব--
শ্যামলী, করেছি অনুভব।

অনেক অপরিমেয় যুগ কেটে গেলো;
মানুষকে স্থির-- স্থিরতর হ'তে দেবে না সময়;
সে কিছু চেয়েছে ব'লে এতো রক্ত-নদী।
অন্ধকার প্রেরণার মতো মনে হয়
দূর সাগরের শব্দ;-- শতাব্দীর তীরে এসে ঝরে;
কাল কিছু হয়েছিলো;-- হবে কি শাশ্বতকাল পরে।

পথ হাঁটা

কী এক ইশারা যেন মনে রেখে একা-একা শহরের পথ থেকে পথে
অনেক হেঁটেছি আমি; অনেক দেখেছি আমি ট্রাম-বাস সব ঠিক চলে;
তারপর পথ ছেড়ে শান্ত হ'য়ে চ'লে যায় তাহাদের ঘুমের জগতে :

সারারাত গ্যাসলাইট আপনার কাজ বুঝে ভালো ক'রে জ্বলে।
কেউ ভুল করে নাকো-- ইঁট বাড়ি সাইনবোর্ড জানালা কপাট ছাদ সব
চুপ হ'য়ে ঘুমাবার প্রয়োজন বোধ করে আকাশের তলে।

একা-একা পথ হেঁটে এদের গভীর শান্তি হৃদয়ে করেছি অনুভব;
তখন অনেক রাত-- তখন অনেক তারা মনুমেন্ট মিনারের মাথা
নির্জনে ঘিরেছে এসে; মনে হয় কোনোদিন এর চেয়ে সহজ সম্ভব

আর-কিছু দেখেছি কি : একরাশ তারা-আর-মনুমেন্ট-ভরা কলকাতা ?
চোখ নিচে নেমে যায়-- চুরুট নীরবে জ্বল-- বাতাসে অনেক ধুলো খড়;
চোখ বুজে একপাশে স'রে যাই-- গাছ থেকে অনেক বাদামি জীর্ণ পাতা

উড়ে গেছে; বেবিলনে একা-একা এমনি হেঁটেছি আমি রাতের ভিতর
কেন যেন; আজো আমি জানি নাকো হাজার-হাজার ব্যস্ত বছরের পর।

৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×