চুল
অনেক, অনেকক্ষণ ধ'রে তোমার চুলের গন্ধ
টেনে নিতে দাও আমার নিশ্বাসের সঙ্গে;
আমার সমস্ত মুখ ডুবিয়ে রাখতে দাও তার গভীরতায়
ঝর্ণার জ্বলে তৃষ্ণার্তের মতো;
সুগন্ধি রোমালের মত তা নাড়তে দাও হাত দিয়ে
যাতে স্মৃতিগুলো ঝ'রে পড়ে হাওয়ায়।
তুমি যদি জানতে যা-কিছু আমি দেখি! যা-কিছু আমি শুনি!
যা-কিছু আমি অনুভব করি তোমার চুলের মধ্যে!
আমার আত্মা উড়ে চলে যায় তার সৌগন্ধে
যেমন অন্যদের, সংগীতের পাখায়।
তোমার চুলে সম্পূর্ণ একটি স্বপ্ন বিজড়িত,
সেখানে পালের আর মাস্তলের ভিড়;
তার মধ্যে অনেক বিশাল সমুদ্র, যাদের উপর দিয়ে
মৌসুমী আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় মোহময় দেশে
আকাশ যেখানে আরো নীল,
আরো গভীর
যেখানে বায়ুমণ্ডল ফলে-ফলে সুরভি,
আর পাতায়, আর মানুষ্যচর্মে।
তোমার চুলের মহাসমুদ্রে আমি দেখেছি
বিষণ্ন গানে-গানে গুন্জ্ঞিত এক বন্দর,
সেখানে সমস্ত জাতির বলশালী মানুষ,
আর সমস্ত রকম আকারের জাহাজ
তাদের সূক্ষ্ম, জটিল স্থাপত্য খোদাই করছে বিশাল আকাশে-
চিরন্তন উত্তাপের সেই ধাত্রী।
তোমার চুলের আদরের রাশিতে আমি ফিরে পেয়েছি
ভালো একটা জাহাজের কেবিনে
অনেক ফুলদানি আর ঠাণ্ডা জলের কুঁজোর মাঝখানে
ডিভানে শুয়ে কাটানো দীর্ঘ ঘণ্টার আলস্য,
বন্দরের অলক্ষ্য চন্ধলতায় দোল খেতে-খেতে।
তোমার চুলের উজ্জ্বল চুল্লিতে
আমি আফিম আর চিনি মেশানো তামাকের ঘ্রাণ নিচ্ছি;
তোমার চুলের রাত্রিতে আমি দেখেছি,
ঝলমল করছে গীষ্মমণ্ডলের অসীম নীলিমা;
তোমার চুলের পালক-নরম প্রান্ত বেয়ে-বেয়ে
আমি মাতাল হ'য়ে যাই
আলকাতরা আর মৃগনাভির আর নারকোল তেলের মিশানো গন্ধে।
আমাকে কামড়াতে দাও, অনেকক্ষণ ধ'রে, তোমার ঘন কালো গুচ্ছ-গুচ্ছ চুল।
স্প্রিং-এর মতো বেশামাল, বিদ্রোহী তোমার চুল
আমি যখন দাঁত দিয়ে কুটুকুটু ক'রে কাটি
আমার মনে হয়, আমি একটু-একটু ক'রে স্মৃতিগুলোকে খাচ্ছি।
অনুবাদক: বুদ্ধদেব বসু
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১০:১৬