মৃদঙ্গবাবু ঘুম থেকে উঠে চোখ চেয়েই ভারী অবাক হয়ে দেখতে পেলেন,তাঁর পায়ের কাছে খাটের পাশেই একটা ঝাঁকামুটে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঝাঁকাতে ঝিঙে, লাউ আর বেগুনও দেখতে পেলেন তিনি। শশব্যস্তে উঠতে গিয়ে তিনি আর-এক দফা অবাক হলেন, কারণ তাঁর খাটের পাশ দিয়েই সাঁ করে একটা সাইকেল টিং টিং করে বেল বাজাতে-বাজাতে চলে গেল।
চারদিকে চেয়ে তিনি হাঁ। এ কী! তিনি যে রাস্তার উপর খাট পেতে শুয়ে আছেন! চারুবাবু থলি হাতে বাজারে যেতে-যেতে তাঁর দিকে চেয়ে বললেন, “আহা, আর একটু সরিয়ে খাটটা পাতবেন তাে, যাতায়াতের যে বড় অসুবিধে হচ্ছে মশাই!”
মৃদঙ্গবাবু ভারী লজ্জিত হলেন। ঘুম ভাঙতে বেশ বেলা হয়েছে তাঁর। চারদিকে ঝলমলে রােদ। রাস্তায় বিস্তর লােক যাতায়াত করছে। তিনি তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে দেখেন, যেদিকে নামবেন সেদিকে পরপর তিনজন ভিখিরি বসে ভিক্ষে করছে। কী বিপদেই যে পড়া গেল! অন্য দিক দিয়ে নামবার উপায় নেই। সেদিকটা খাট ঘেঁষে ঘােষেদের দেওয়াল। খাটের গা আর মাথার দিকটা উঁচু কাঠের নকশা করা রেলিং থাকায় ও দিক দিয়েও নামবার সুবিধা নেই।
কিংবা,
কন্ধকাটা এর মুন্ডু না থাকলেও তাদের কোন অসুবিধে হয়না।শোনা যায় তাদের চোখ নাক কান সবই থাকে তাদের বুকে। বাঁশবনের দুই কন্ধকাটা দাবা খেলে খেলে ক্লান্ত হয়ে একটু বেড়াতে বেরিয়েছিল। গাছে গাছের মগডাল থেকে মগডালে ঝুল খেয়ে খেয়ে তারা মনসাপােতার জঙ্গলে এসে একটা গাছ থেকে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে জিরোচ্ছিল।
তখন কন্ধকাটা ক কন্ধকাটা খ-কে বলল," ওই দ্যাখ, ভুড়ি যাচ্ছে।”
কন্ধকাটা খ বলে, "কার ভুড়ি?"
“গজপতি দারোগার ভুড়ি।”
“তা গজপতি দারোগা কোথায়?”
‘ভুড়ির পেছনে পেছনে আসছে।”
“ও বাবা, সন্ধ্যার পর গজপতি দারোগা আজ বেরোলে যে! এ তাে ঘাের দুর্লক্ষণ? দেশে অনাবৃষ্টি, মহামারী, ভূমিকম্প কিছু না-কিছু হবেই।”
“হু। সন্ধের পর গজপতিকে কেউ ঘরের বাইরে দেখেনি বটে। নিশ্চয়ই গুরুতর কারণ আছে।”
“থাকতে হবে।”
“আয় তবে, মজা দেখি।”
অথবা,
জ্যোতিষী হিসেবে জটেশ্বর ঘোষালের খুব নামডাক। গণনা করে যা বলেন বলেন একেবারে অব্যর্থ। ফলে কি ফলবে। তবে তার মধ্যেও একটু কথা আছে। ফলে বটে, তবে উলটো রকমে। এই যেমন পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগে কাঁচুমাচু মুখে পালবাড়ির ছােট ছেলে ফটিক এসে বলল, “জ্যাঠামশাই, হাতটা একটু দেখে দেবেন? রেজাল্টের জন্য বড় ভয় হচ্ছে।"
জটেশ্বর গম্ভীর মুখে খুব ভাল করে ফটিকের হাত দেখলেন, অনেক হিসেবনিকেশ করলেন, তারপর ভ্রু কুঁচকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “না রে, এবারটায় হবে না।” শুনে ফটিক লাফিয়ে উঠে দু পাক তুর্কি নাচ নেচে, “মেরে দিয়েছি! মেরে দিয়েছি!” বলে চেঁচাতে-চেঁচাতে বেরিয়ে গেল। এবং রেজাল্ট বেরোনোর পর বাস্তবিকই দেখা গেল, ফটিক বেশ ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেছে।
.................................
বলছি, অদ্ভুতুড়ে সিরিজের কথা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা চমৎকার এক সিরিজ। শিশু-কিশোর, বুড়া-বুড়িদের জন্য লেখা মজারু সব গল্পের ভান্ডার। উপরের গল্পের অংশগুলো এই সিরিজেরই কয়েকটা বই থেকে নেওয়া। ভূত-প্রেত, অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার, কল্পবিজ্ঞান, ইতিহাস, হাস্যরসে ভরা এক সিরিজ। একবার পড়তে বসলে ওঠা দায়।বাচ্চা বুড়ো সকলের জন্য নিঃসন্দেহে সুখপাঠ্য।
লেখক পরিচিতিঃ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময়, তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরীরত পিতার সঙ্গে তিনি বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে ঘুণ পোকা নামক তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম উপন্যাস মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানবজমিন উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান।
প্রাপ্ত পুরস্কারসমূহঃ
১/ বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৮৫) - শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য।
২/আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৩ ও ১৯৯০)
৩/সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৮)- মানবজমিন উপন্যাসের জন্য।
৪/বঙ্গবিভূষণ (২০১২)
☞তাঁর লেখা শিশু-কিশোরদের জন্য বইঃ (বেশিরভাগই অদ্ভুতুড়ে সিরিজের অন্তর্ভুক্ত)
পাতালঘর
কুঞ্জপুকুরের কান্ড
দুধসায়রের দ্বীপ
পটাশগড়ের জঙ্গলে
ঝিলের ধারে বাড়ি
সোনার মেডেল
অদ্ভুতুড়ে
মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি
বিপিনবাবুর বিপদ
নৃসিংহ রহস্য
বক্সার রতন
গজাননের কৌটো
গোঁসাই বাগানের ভূত
গৌরের কবচ
চক্রপুরের চক্করে
নবাবগঞ্জের আগন্তুক
নবীগঞ্জের দৈত্য
পাগলা সাহেবের কবর
বনি
ভূতুরে ঘড়ি
ষোলো নম্বর ফটিক ঘোষ
হিরের আংটি
হেতমগড়ের গুপ্তধন
ঝিকরগাছার ঝঞ্ঝাট
সাধু বাবার লাঠি
হারানো কাকাতুয়া
উঁহু
অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার
ময়নাগড়ের বৃত্তান্ত
হাবু ভুঁইমালির পুতুল
গোলমেলে লোক
মদন তপাদারের বাক্স
ভোলু যখন রাজা হল
সর্বনেশে ভুল অঙ্ক
নন্দীবাড়ির শাঁখ।
বইগুলো কিনতে চাইলেঃ
বিদেশেঃ
Amazon এ পাবেন। লেখকের নাম দিয়ে সার্চ করতে হবে।
দেশেঃ
সকল বইয়ের দোকানে।
অনলাইনঃ
রকমারি
আর চাইলে নেট থেকে খুঁজে PDF পড়তে পারেন।
সোর্সঃ
১/ উইকিপিডিয়া।
২/ রকমারি ডট কম।
৩/ অদ্ভুতুড়ে সিরিজেই কিছু বই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৩১