ধুপ ধুপ ! কোথাও কিছু পড়লো। চারদিকে অন্ধকার সাথে একটা কটু গন্ধের রেশ। পুরোনো বইয়ের ঘর হতে পারে। একটা টেবিলের সাথে কিছু চেয়ার। একটা চেয়ারে হাত -মুখ বাঁধা কেউ। টুঁশব্দটি বের হচ্ছে না। শুধু হৃদয়ের ধুকপুক ধুকপুক ছাড়া। বাকি সবকিছু সুনশান। যেন কাজ শেষ হওয়ার পর কর্মস্থল। নিরবতার সুনিবিড় চাদরে ঢাকা এক জগত।
চেয়ারে বাঁধা লোকটির দিকে চোখ ফেরানো যাক। বয়স ৩৪-৩৫। গায়ের রং মাঝারি। ব্যাকব্রাশ করা চুল। মুখে একটা মোটা টেপের স্তর। চেহারা ভালোই। চোখে ভীত দিশাহীন এক চাহনি। ভয় ভয় ভয় ! সমগ্র শরীরে ভয়ের আভাস। লোকটা বোধহয় জীবনের ভয় করছে। তবে শত মৃত্যুর ভীড়ে জীবনের কথা ভাববার সময় কোথায় ! লোকটারও শেষ পরিনতি হতে পারে ঐ লোকটার মতো, যাকে সেতুর রডের সাথে ঝুলিয়ে গুলি করা হয়েছিল। যার শরীর দিয়ে বৃষ্টি ঝরার মতো রক্ত ঝরেছিল কিছুকাল। তারপর এক অক্লান্ত নিরবতা......
*************
"আমি ৫ তারিখের পরে আর বাসায় যাইনি। আজ গেলাম... " একটু বলেই ও থেমে গেল। অভয় দিলাম।
"বাসায় যেয়ে দেখি সবকিছু এলোমেলো। যেন কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। ভাইয়া নেই। টেবিলে কিছু ভাত -তরকারি পড়ে আছে। ওরা ওরা.... আমার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে। "
তারপর?
"ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে ! বিশ্বাস করেন, আমার ভাই নির্দোষ। কোনো কিছুর সাথে ওর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নিতান্তই আত্মভোলা এক মানুষ ! "
চিন্তায় অস্থির হয়ো না। বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখা ফরয।
**************
আমি রোকসানা। তুমি? সাবের। ছোট্ট করে বলেছিলো সাবের। তারপর জল বহুদূরে গড়িয়েছে। সহপাঠী হয়ে গেছে স্ত্রী। প্রথম পরিচয়ের ব্যাপারটা আজো সুস্পষ্ট, অমলিন হয়ে মনের মাঝে আছে। এক চিলতে আনন্দের কথা যে! ভুলবে কিভাবে। তবে দিনকাল সবসময় ভালো যায় না। কালো শকুনের চলাচলে জীবন অনেক সময় বিপর্যস্ত হয়ে যায়। তখন কেবল দুঃখ, দুঃখ আর দুঃখের অসীম ধারা। সুখের কথা মনে করলেও মনে হয় স্বপ্ন। রঙিন স্বপ্নগুলো অধরা হয়ে যায়। সবকিছুই হয় সাদাকালো - ধূসর।
***********
"এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?"
রেডিওতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান বাজছে। দিনটা আসলেই মেঘলা। হালকা বৃষ্টি পড়া লক্ষ্য করা যায়। তবে এই বৃষ্টি ভেজার উপযোগী নয় !
"এইরে.... বৃষ্টি এসে গেল। রোকের শুকতে দেওয়া জামাকাপড়গুলো তুলে ফেল তাড়াতাড়ি " - মায়ের কথায় রোকসানা এগিয়ে যায়। তুলে ফেলে আধভেজা যত কাপড়। ততক্ষণে গানটা ফুরিয়ে গেছে। রয়ে গেছে কেবল স্নিগ্ধ এক রেশ।
বিঃদ্রঃ এই লেখার প্লট, চরিত্র সবকিছু কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কেউ মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:৫৭