জাপানীরা ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর আমেরিকার পার্ল-হারবার আক্রমণ করেছিলো, তদের ভুল ধারণা ছিলো যে, তারা প্রথমে আমেরিকা আক্রমণ করে, আমেরিকাকে দুর্বল করে দিবে; ফলাফল, ২টি এটম বোমা। জাপানীরা ২৪০০ আমেরিকানকে হত্যা করেছিলো সেই আক্রমণে, কিন্তু তারা পার্ল-হারবার দখল করার অবস্হানে ছিলো না, দরকারী জনবল নিয়ে পার্ল-হারবার পৌঁছার সম্ভাবনা কোনদিনও ছিলো না; জাপানীদের ভুল বিশ্বাসের কারণে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এটম বোমা পড়েছিলো।
ফ্রান্সের লোকজন ও নেপোলিয়ন ভুল-বিশ্বাস থেকে রাশিয়া আক্রমন করেছিলো: নেপোলিয়ন ১৮১২ সালের জুন মাসে, ৫ লাখের বেশী সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আক্রমন করে; সেই বছর সেপ্টেম্বরে নেপোলিয়ন মস্কো জয় করে নগরে প্রবেশ করে; নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন যে, রাশিয়ার জার(সম্রাট) আত্মসমর্পন করতে আসবে; কিন্তু রাশিয়ান সম্রাট ও মস্কোবাসীরা নগর ছেড়ে চলে যায়; নেপোলিয়ন ১ মাস মস্কোতে থেকে দেশে রওয়ানা দেন; দেশে পৌঁছেন ১ লাখের কম সৈন্য নিয়ে। একই ভুল করেছিলো জার্মানরা, ফলাফল ভয়ংকর: ৪ বছর যুদ্ধ করে জার্মানরা ভয়ংকরভাবে পরাজিত হয়েছিলো, জার্মানী ২ ভাগে বিভক্ত হয়েছিলো।
পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে ততকালীন সরকার ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক অদ্ভুত জাতী গঠনের দিকে মনোনিবেশ করে: তারা বিশ্বাস করতো যে, পাকিস্তানীরা মুসলিম হিসেবে একই ধরণের পোশাক-পরা উচিত, একই ভাষায়(উর্দু'তে) কথা বলা ও একই সংস্কৃতি অনুসরণ করা উচিত। যেখানে সব যায়গায় ইংরেজী চলছিলো, সেখানে উর্দু'কে রাষ্টভাষা করার ঘোষণা দেয়া, এটা বিশাল ভুল ধারণা ছিলো। বাংগালীরাও মগজ হারিয়ে, বাংলাকে রাষ্টভাষা করার জন্য লেগে যায়; বাংগালীরা ইংরেজীকে রাষ্টভাষা হিসেবে চাইলে ততকালীন সরকারের জন্য সমঝোতার পথ খোলা থাকতো; ২ পক্ষই চরম পথ অবলম্বন করায় ৪ জনের বেশী বাংগালীকে প্রাণ দিতে হয়; ১৯৫১/৫২ সালে, উর্দু বা বাংলা'কে রাষ্টভাষা চাওয়া ছিলো ভুল ধারণার বিকাশ।
৩০ লাখ মানুষের প্রানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে, ১৯৭২ সালেই চরমপন্হীরা মানুষ মেরে ক্ষমতা দখলে নেমে যায়; সিরাজ শিকদারের লোকেরা দেশের গ্রামগুলোতে জোতদার নাম দিয়ে সাধারণ চাষীদের হত্যার শুরু করে; নতুন দেশে এগুলো ভয়ংকর ধারণা; এরপর, একই কাজে নেমে পড়ে জাসদ'এর গণ-বাহিনী; তাদের ধারণা ছিলো, তারা লেনিন বা মাও'এর মতো বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে নেবে; ফলাফল, অপ্রয়োজনীয় রক্ষীবাহিনীর জন্ম, জাসদের ১০/১২ হাজার তরুণের মৃত্যু।
শেখ সাহেবকে হত্যা করে, জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করার পর, দেশে ৩ ভাগের ১ ভাগ লোকজন জিয়াকে বীর হিসেবে মেনে নেয়, এটা ছিলো ভংকর ভুল; মিলিটারী ক্ষমতায় থাকায়, বাকীরা চুপ হয়ে যায়; জেরারেল জিয়া হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে মিলিটারী এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে প্রেসিডেন্টে পরিণত হয়; মিলিটারীর সাপোর্টারেরা উনাকে 'জাতীয়তাবাদী' হিসেবে প্রচার চালায়, এটা জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বিশাল আক্রমণ ছিলো, কিন্তু এই ধারণা আজও চালু আছে। এই ধারণা জাতিকে ২ ভাগে বিভক্ত করেছে; আজকে দেশে যা ঘটছে, তার পেছনে এই ভুল ধারণাও কাজ করছে।
জাতীয় বিশ্বাসগুলোকে তলিয়ে দেখার জন্য, জাতির বর্তমান চরিত্র বুঝার জন্য, জাতির ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য, জাতির একটা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকার দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪