সব ধর্মের মুখবন্ধে আছে, মানুষ সময় সময় তাদের সৃষ্টিকর্তা কর্ত্তৃক প্রদত্ত ধর্মকে ভুলে গিয়ে, কিংবা বাদ দিয়ে, নিজেদের মনগড়া কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ায়, সমাজ পাপ ও অরাজকতায় ডুবে যাবার পর, সৃষ্টিকর্তা বারবার নতুন করে পয়গম্ভর পাঠায়েছেন, নতুন করে পরিত্র গ্রন্হ পাঠায়েছেন।
এই মুখবন্ধটা কার, বা কাহাদের লেখা; ইহা কি সৃষ্টিকর্তা কর্ত্তৃক লিখা, নাকি মানুষের লিখা? আসলে, মানুষ কি সময় সময় তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গেছে, নাকি মানব সভ্যতা সর্বদা বিবর্তনের মাঝ দিয়ে ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের দিকে গেছে? উদাহরণ হিসেবে, খৃষ্টান ধর্মের উদ্ভবকে একটু এনালাইসিস করে দেখা যাক: ঈসা (আ: )'এর জন্মের কয়েক'শ বছর আগে, পশ্চিম বিশ্বে বেশ কয়েকটি বড় বড় সভ্যতা ছিলো: রোমান, গ্রীক, মিশরীয় ও পারসিক সভ্যতা; সেই সময়ে, কিতাবী ধর্ম ছিলো 'জুডাইজম' (ইহুদী ধর্ম), ইহা মুলত ছিলো জেরুসালেমের আশেপাশে, ইয়েমেনে, মদীনায় ও মিশরে।
ঈসা (আ: )'এর জন্মের ৬৪ বছর আগে, রোমানরা মিশরীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়ে, মিশর, জেরুসালেম, সিরিয়া এলাকা(পারর্য সাম্রাজ্যের অংশ) দখল করে নেয়; মিসরীয়রা সেই সময়ে আসলে, নিজেদের ধর্ম ও গ্রীক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলো; মিশরীয়রা সুর্য মুর্যকে তাদের ভগবান হিসেবে মানতো, ও ক্ষমতাসীন ফেরাউনকে সৃষ্টিকর্তার সন্তান হিসেবে জানতেন, মানতেন; গ্রীকধর্ম ও রোমান ধর্ম ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রূপকথার ধর্ম। ফলে, মিশরীয়দের জন্য গ্রীক, বা রোমান ধর্ম বিরাট সমস্যা ছিলো না; রোমানদের ধর্ম কিন্তু জুডাইজমের জন্য ভয়ংকর চ্যালেন্জ ছিলো; কারণ, জুডাইজম ছিল ১ম কেতাবী ধর্ম, যাহা এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতো ; এবং তাদের এলাকা ছিল রোমানদের হাতে। যাক, রোমানরা স্হানীয় ইহুদীদের ধর্মের যায়গায় রোমান ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেনি।
নবী ঈসার (আ: )'এর মৃত্যুর পর, তাঁর অনুসারীরা খৃষ্টান ধর্ম প্রচার শুরু করেন; এই ধর্মের প্রচারের সুচনায় সেই এলাকার মানুষজন কি সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়েছিল, অত্যাচার, অনাচারে লিপ্ত হয়েছিলো? ইতিহাস বলে যে, ইহুদীরা মিসরীয় ও রোমানদের ভয়ংকর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অত্যাচার সহ্য করেছে, কিন্তু নিজের ধর্মকে ত্যাগ করেনি, তাদের জীবনের মান, ধর্মের মান তারা রক্ষা করেছে, তারা পাপাচারে বা পংকিলতায় ডুবে যায়নি! রোমানরা কি তাদের ডজন ডজন সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়েছিলো? না, ইতিহাস মতে, গ্রীক ও রোমানরাই সভ্যতার ভিত্তি স্হাপন করেছে!
সময়ের সাথে, গ্রীক, রোমান ও মিশরীয় ধর্মের সম্পুর্ণ বিলুপ্তি ঘটে, এরা সবাই মোটামুটি খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হন; তা'হলে, দেখা যাচ্ছে যে, ধর্মের ভালো বিবর্তন ঘটেছে; রূপকথার ধর্ম থেকে এরা বেরিয়ে এসে, এক সৃষ্টিকর্তার ধর্মকে গ্রহন করেছেন। এরা ইহুদী ধর্মে গেলো না কেন? ইহুদীরা নিজেদের গোত্রের বাহিরের লোকদের ইহুদী ধর্ম নিতো না, তারা ধর্ম প্রচার করতো না।
তা'হলে, যেইভাবে ধর্মগুলোর মুখবন্ধে বলা হয়েছিলো যে, মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে অত্যাচার অনাচারে লিপ্ত হয়েছিলো, সেটার প্রমাণ নেই; খৃষ্টান ধর্মের বিকাশের ফলে, সভ্যতার ধারক, বাহক গ্রীক, রোমান ও মিশরীয়রা তাদের রূপকথার ধর্মের বদলে এক সৃষ্টিকর্তার ধর্ম গ্রহন করেন; সেই সময়ে রাজত্ন্ত্রের সমস্যা ব্যতিত অন্য কোন জানা সমস্যায় রোমান, গ্রীক ও মিশরীয়রা ছিলো না; তারা অন্ধকারে নিপতিত জাতি ছিলো না; আসলে, তারাই ছিলো সভ্যতার ধারক ও বাহক। সময় ও সভ্যতার সাথে তাল মিলানো হচ্ছে বিবর্তন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৮