রাস্তার একই পাশে, একই সারিতে, একটার পেছনে আরেকটা গাড়ী রেখে পার্কিং করাকে প্যারালাল পার্কিং বলে; এটা সোজা কাজ, ব্লগার নুরু সাহেবও পারবেন; কিন্তু নুরু সাহেব সমস্যায় পড়বেন, যখন আগের থেকে পার্কিং করা ২টি গাড়ীর মাঝখানে খালি যায়গায় উনার গাড়ীটাকে রাখতে যাবেন; আমি জানি, উনি সামনের ও পেছনের গাড়ীতে ধাক্কা লাগাবেন; তখনই শুরু হবে গন্ডগোল!
আমার গাড়ীতে যদি কেহ থাকেন, তাঁরা আমার প্যারালাল পার্কিং'এর সুনাম করেন সব সময়, আমি নিজের দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করি; ২ গাড়ীর মাঝখানের খালি যায়গাটার দৈর্ঘ্য আমার গাড়ীর দৈর্ঘ্য থেকে যদি ১০ ইন্চি বেশী হয়, তাহলে, আমি এমনভাবে পার্কিং করি যাতে সামনের ও পেছনের গাড়ী টেরও পাবে না। সমস্যা হলো, আসলে আমার সমস্যাটা নুরু সাহেবের সমস্যাটার চেয়েও বড়, যখন গাড়ীতে আমি একা থাকি, তখন ২টি পার্কিং-করা গাড়ীর মাঝেখানে ২ গাড়ীর সমান খালি যায়গা থাকলেও, আমার গাড়ী সামনের ও পেছনের গাড়ীকে ধাক্কা দেবেই দেবে, মাফ নেই; এটা নিয়ে দুনিয়ার অশান্তি!
আমি কুইন্সে এসেছি একটা কাজে, কাজটা হয়নি; গাড়ীটা অনেকটা জনহীন রাস্তায় প্যারালাল পার্কিং'এ; টাইট পার্কিং; অক্টোবর মাসে ফিনফিনে বৃষ্টি হচ্ছিল, বৃষ্টির চেয়ে মেঘ ও বাতাস বেশী, সন্ধ্যার আগেই অনেকটা অন্ধকার হয়ে গেছে; গাড়ীতে উঠে পার্কিং থেকে বের হচ্ছি, গাড়ীর কাঁচগুলো ঝাপসা; সামনের গাড়ীতে লাগলো ১ বার, পেছনের গাড়ীতে লাগলো ২ বার; গাড়ীর মাথাটা সামনের গাড়ী থেকে ক্লিয়ার হয়নি তখনো, এমন সময় দেখি, কে একজন আমার পাশ থেকে গাড়ীর জানালায় থাপ্পড় দিচ্ছে; আমি দরজার কাঁচ নামালাম, ছোটখাট চাইনীজ, নাকি ভিয়েতনামী একটা; প্রশ্ন করলাম,
-কি ব্যাপার, গাড়ীর কাঁচ ভাংগার চেষ্টা করছ নাকি?
-তোমার কাঁচ ভাংছি না, তুমি ধাক্কা দিয়ে আমার গাড়ীটা ভেংগে দিয়েছ!
আমি গাড়ী থেকে বের হলাম; সামনের গাড়ীটা তার; ওর দাদার আমলের কচ্চপের মতো ফক্সওয়াগেন। তার হাতে আধা হ্যাম-বার্গার, মুখেও হ্যাম-বার্গার; সে বললো,
-দেখ, তুমি ধাক্কা মেরে আমার গাড়ীর কি অবস্হা করেছ!
গাড়ীটি অনেক পুরাতন, পেছনের বাম্পার আগে কোন এক সময় পড়ে গিয়েছিলো; টেলিফোনের তার দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো, এখন আমার গাড়ীর ধাক্কায় ভুমিতে পড়ে আছে! আমি বললাম, তোমার গাড়ী কোথায়?
-তুমি কানা নাকি? ফক্সওয়াগেনটা দেখছ না?
-উহা তো গাড়ী নয়, জাংক! তুমি উহাকে এখানে এনেছ কি করে, ঠেলে এনেছ? এই গাড়ীকে রাস্তায় আনার পারমিশন কে দিলেো তোমায়? তোমার লাইসেন্স ও রেজিষ্ট্রেশন দেখাও আমাকে!
-হেই, চুপ করো; তুমি পুলিশ নও যে, তোমাকে আমার ডকুমেন্ট দেখাতে হবে! ক্ষতিপুরণ দাও, না হয় পুলিশ ডাকবো!
-ভাংগা গাড়ী রাস্তায় এনে ট্রাপিক সমস্যার সৃষ্টি করছো, আবার তোমাকে ক্ষতিপুরণ দিতে হবে? টেলিফোনের তার দিয়ে বাম্পারকে গাড়ীর সাথে বাঁধতে তোমার কত খরচ হয়েছে?
-শোন, তুমি আমার বাম্পার নষ্ট করেছ; ইহার জন্য ৩০০ ডলার দিতে হবে!
-তোমার পুরো গাড়ীর দামও ৩০ ডলার হবে না; ইহাকে রাস্তা থেকে জাংক-ইয়ার্ডে নিতে তোমার পকেট থেকে ২০০ ডলার খরচ হবে; ইহাকে এখানে রেখে বাড়ী চলে যাও!
এই সময় ফক্সওয়াগেনের অন্য দরজা খুলে হালকা পাতলা এক চাইনীজ, কিংবা ভিয়েতনামী সুন্দরী বেরিয়ে আসলো; সেও হ্যাম-বার্গার খাচ্ছিলো; সে কড়া মেজাজে আমাকে বললো,
-হেই তুমি, তুমি গাড়ী ভেংগে এত বড় বড় লেকচার দিচ্ছ কেন?
-এই গাড়ীর সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
-সম্পর্ক দিয়ে তুমি কি করবে? এটা আমার বয়ফ্রেন্ডের গাড়ী!
-এটা তোমার বয়ফ্রেন্ড? তোমাকে ১ ডলারের হ্যাম-বার্গার কিনে দিয়েছে, এই ডিনারের সময়? তুমি নিজকে এত সস্তা করছো কেন? কাল থেকে তুমি আর এর সাথে বের হতে পারবে না! তোমার মতো মেয়েকে ফ্রেন্চ রেষ্টুরেন্টে নেয়ার দরকার আছে।
-তুমি আমাদের ব্যাপার নিয়ে লেগে যাচ্চ কেন? তুমি গাড়ী ভেংগেছ, সেটর সমাধান কর!
-শোন, তুমি এই ভাংগা গাড়ীতে আর উঠতে পারবে না; ও স্পোর্টসকার যতদিন না কিনে, তার সাথে দেখাও করতে পারবে না।
আমার কথা শুনে সে যথাসম্ভব হতাশ হয়ে গেছে, বেচারী চুপ হয়ে গেলো।
ছেলেকে বললাম,
-তুমি পুলিশ ডাকলে, পুলিশ আসবে মাঝ রাতে; তারপর এই গাড়ী রাস্তায় আনার জন্য ২০০ ডলারের টিকিট দেবে। আমি ৫ ডলার দিচ্ছি, মেয়েটাকে একটা বিগ-ম্যাক ও ১টা কোক কিনে দিও, আর তুমি আরেকটা হ্যাম-বার্গার খেয়ো; এখন আমার গাড়ীর সামনে থেকে সর।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৮