কারণ, গান-বাজনা যারা করেন, তাঁরা খুবই খুবই সৃজনশীল মানুষ, তাঁরা গান-বাজনার মাধ্যমে অনাবিল এক প্রশান্তির স্তরে প্রবেশ করেন, গান-বাজনা তাঁদের উৎসাহের কেন্দ্র হয়ে যায়, তাঁরা ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি করেন না। ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্হল ছিলো মক্কা ও মদীনা; প্রথমে মদীনার মুল জনসংখ্যা ছিলো ইহুদী, এরা পড়ালেখা জানতেন, এদের সংস্কৃতি ছিলো সেই সময়ের জন্য উঁচু মানের, গান-বাজনায় খুবই দক্ষ ছিলেন; ইসলামের লোকজন ইহুদীদের জীবনযাত্রা দেখেছেন, রিফিউজি মক্কাবাসীদের উপর ইহুদী সংস্কৃতির প্রভাব দেখেছেন; এবং ভুল সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, ইহুদীরা ভোগবাদী; সেখানকার মুসলমানেরা ইহুদীদের সংস্কৃতিকে গ্রহন করেননি। আসলে, আজকেও ইহুদীরা মুসলমানদের চেয়ে অধিক ধর্মপরায়ন, তাদের সংস্কৃতি অনেক শক্তিশালী; গান-বাজনা ওদের সংস্কৃতি ও ধর্মের অংশ।
অতি সাম্প্রতিক সময় অবধি বিশ্বের বড় বড় সংগীত আলয়গুলোতে সুক্ষ্ম পিয়ানো ও বেহালা বাদকদের বেশীরভাগ ছিলো ইহুদীরা; এদের পরে ছিলো জাপানীরা ও রাশিয়ান ইহুদীরা; এখন চীনারা এগুলোতে এগিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানেরা এসব সংস্কৃতির অংগনে পেছনে ছিলেন বরাবরই। পাকিস্তান, মিশর, মরক্কোর মুসলমানরা সংগীতে বিশ্বমানের অবদান রেখেছেন।
৮০০ বছরের অটোম্যান সাম্রাজ্যে, রাজপরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য ইউরোপের সবচেয়ে দক্ষ সংগীতজ্ঞদের রাখা হতো; রাজ পরিবারের কেহ সংগীতকে পেশা হিসেবে নেয়নি, কিন্তু তাদেরকে অটোম্যান সাম্রাজ্য পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত করতে, শিক্ষার অংশ হিসেবে সংগীত শিখতে হয়েছিলো।
আরবদের জন্য আরো সামান্য একটা দুর্ঘটনা ছিল, ইহুদীদের রাজা ডেভিড ছিলেন সংগীতের লোক; জীবনের শুরুতে কৃষকের ছেলে ছিলেন, মেষ চরাতেন; উনি একতারা থেকে শুরু করে বেহালা সবই বাজাতেন। তিনি ততকালীন সময়ে ফিলিস্তিনী এলাকার আরবদের এক বড় যোদ্ধাকে একা পরাজিত করেন, এজন্য উনাকে রাজা করা হয়; উনি ইহুদী হওয়ায়, এই কাহিনীও মদীনার মুসলিমদের উপর প্রভাব ফেলেছিলো।
খৃষ্টানদের চার্চে যেসব গান গাওয়া হয়, এগুলোর বিরাট অংশ হলো "সালম", রাজা ডেভিডের রচিত গান, ইহার আরেক নাম হলো, "যবুর কিতাব"।
সংগীত সংস্কৃতির অংশ, শিক্ষিত জাতিসমুহের সংস্কৃতির সোপান সব সময়েই উঁচুমুখী। আরবেরা সংগীতপ্রিয় জাতি, পাকিস্তানীরাও সংগীতপ্রিয় জাতি। সংগীতের বিপক্ষ কথা শুনবেন বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে।
আমেরিকার সংগীতে বিশাল শক্তিশালী ধারা গড়েছিলো আফ্রিকা থেকে নিয়ে-আসা ক্রীতদাসেরা; আমেরিকায় দাসের দুর্নিসহ জীবনের কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে তারা সংগীতকে জড়ায়ে ধরে; তাদের সংগীত আজকে পুরো বিশ্বে প্রভাব রাখছে। বিশ্বের মানুষ আজ শিক্ষাদীক্ষায় আমাদের চেয়ে অনেক অনেক সামনে, ওদের সংস্কৃতি অনেক উঁচুমানের; সংগীত ওদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের জামাত-শিবিরেরা সংগীত-বিরোধী, আমাদের ইসলামের শিক্ষাকেন্দ্র মাদ্রাসাগুলো সংগীত-বিরোধী।
আমাদের দেশে যারা গানবাজনার বিরোধী, তারা ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালায়েছে। যারা গানবাজনা বিরোধী হয়, তাদের মানসিক সমস্যা হয়।