somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যদের নিষ্ঠুরতাই যখন জীবনের সাথী

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তৃতীয় শ্রেণীর ফাইনাল দিয়েছি; এখন কাজ হলো, খামারে গরুছাগল দেখা আর বিকেলে ফুটবল খেলা। সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছিলো, খেলায় ছেলেপেলে কম, বেলা ডোবার আগেই খেলা শেষ করে, গরুগুলোকে ঘরে নিচ্ছি; মেঠো পথ ধরে একটি কমবয়সী মহিলা আমাদের উ্ত্তর গ্রামের দিকে যাচ্ছেন, হাতে একটি পুটলী; আগে কখনো দেখনি, মোটামুটি ভালো কাপড়, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেল, হাতে ছাতা। আমি গরুগুলোকে ঘাস টাস দিয়ে, পানি টানি খাওয়ায়ে, ছাগলগুলোকে ঘরে নেয়ার সময় দেখি একটি মা-ছাগল তখনো মাঠে; উহাকে আনতে গিয়ে দেখি, মহিলা একই পথে ফিরে যাচ্ছেন; আমার পাশ দিয়ে যাবার সময়, আমাকে বললেন,

-শোন, তুমি কোন বাড়ীর ছেলে?
আমাদের বাড়ীটা এখান থেকে দেখা যায়, আমি হাতের ইশারায় দেখালাম; মনে হলো, উনি চিনেন। এরপর, উনি আমাকে বললেন,
-তুমি নাসের উল্লাহদের বাড়ী চেনো?
-হ্যাঁ, উনাদের বাড়ীটি চিনি, পাশেই আমাদের স্কুল।
-তুমি একটা কাজ করতে পার? নাসের উল্লাহ আমার বাবা, আমি শহরে (চট্টগ্রাম শহর) থাকি, মাকে দেখতে এসেছিলাম; বাড়ির কাছে গিয়ে দেখি, বাবা বাড়ির সামনে বসে আছেন; উনার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো নয়, আমি বাড়ী যাইনি; শহরে ফিরে যাচ্ছি; তুমি এই পুটলিটা আমার মাকে দিও।
-এখন সন্ধ্যা, আপনি কি বাস পাবেন? আমাদের বাড়ীতে থেকে যান।
-না, এই এলাকায় আমার থাকা নিষিদ্ধ; আমি বাস পাবো। বাড়ীতে বাবা থাকলে তুমি যেওনা।

উনি পুটলিটা খুলে ৩/৪ টা লজেন্স আমার হাতে দিলেন; পুটলিতে একখানা শাড়ী, একজোড়া স্যান্ডেল ও একটা কাগজের প্যাকেটে কিছু লজেন্স। পুটলিটা আমার হাতে দিয়ে উনি ট্রাংক রোডের দিকে চলে গেলেন। রাতে খাবার সময় ঘটনাটা আমি মাকে বললাম। মা বললেন, মেয়েটা আরো ২ গ্রাম দুরের এক বেবীট্যাক্সী ড্রাইবারের সাথে চলে গিয়েছিলো; ছেলেটা শহরে বেবীট্যাক্সী চালায়; কিন্তু শেষে মেয়েটাকে বিয়ে করেনি। গ্রামের লোকজন রটায়েছে, মেয়েটা দেহপসারিনী। আমি পরদিন ২ বার চেষ্টা করে, পুটলিটা মহিলার মায়ের কাছে পৌঁছায়ে দিলাম; মহিলার মা পুটলিটা হাতে নিয়ে কাঁদলেন; পুটলি খুলে, ভেতরে লজেন্স দেখে আমাকে দিতে যাচ্ছিলেন, আমি বললাম যে, উনার মেয়ে আমাকে দিয়েছেন; উনি ১ গ্লাস সরবত বানায়ে আমাকে দিলেন।

এরপর, বছর কেটে গেছে; সামনে চতুর্থ শ্রাণীর পরীক্ষা; স্কুলে ফুটবল খেলে দেরীতে বাড়ী ফিরছি; দুর থেকে দেখছি নাসের উল্লাদের বাড়ীর সামনে কয়েকজন লোক চীৎকার দিয়ে কথা বলছে, কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঠা। বাড়ীর সামনে আসার পর দেখি; সেই গ্রামের কয়েকজন লোক একজন মহিলাকে টানাহেঁচড়া করে বাড়ী থেকে বের করছে। আমি কাছে গিয়ে দেখি, গত বছর আমার দেখা সেই মহিলা, নেসার উল্লাহ'এর মেয়ে; নেসার উল্লাহ'র বউ কাঁদছে। তাদের পাশের বাড়ীর এক লোক, হাতে লাঠি, সে মেয়েকে লাঠি দেখায়ে বলছে,

-তুই এখন গ্রাম চড়ে যা, না হয়, তোর পিঠের চামড়া থাকবে না।

আমি লোকটাকে লক্ষ্য করে চীৎকার করে বললাম,
-আপনি কি পেয়েছেন, গ্রাম কি আপনার? আপনি এখান থেকে যান, না হয় ভয়ংকর কিছু ঘটবে।

লোকটা মহিলাকে ফেলে আমার দিকে তেড়ে আসছিলো, আমি বইগুলো ছুঁড়ে ফেলে, তৈরি হলাম; বাকী লোকজন লোকটাকে থামালো। আমি মহিলাটির পেছনে পেছনে এলাম। মহিলা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আমাকে বললো,

-এসবের ভেতর আসা তোমার ঠিক হয়নি।
-এক'শ বার ঠিক হয়েছে, আমি বললাম।

মহিলা মেঠো পথ ধরে বাসের রাস্তার দিকে যাচ্ছেন; আমি খামার বাড়ী অবধি আসলাম উনার সাথে। আমি বললাম,
-আগামীতে আপনি আপনার মায়ের সাথে দেখা করতে আসলে, আমাদের খামারে আসবেন, আমি আপনার মাকে এখানে নিয়ে আসবো।

উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ট্রাংক রোডের দিকে চলে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৩
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×