পুরান ঢাকায়, যাদের বয়স ৭০ বছর বা তার চেয়ে বেশী, তাদেরকে প্রশ্ন করে দেখেন, আইয়ুব খান কেমন লোক ছিলেন? দেখবেন, বেশীর ভাগই বলবেন যে, আইয়ুব খানের মতো এতো ভালো শাসক পাকিস্তানে কখনো ছিলো না; অথচ, বাংগালীদের পুরো সংগ্রামই ছিলো আইয়ুব খানের বিপক্ষে! আইয়ুব খান যে, রাইফেল হাতে, নির্বাচিত পাকিস্তানী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের সংবিধান-বিরোধী কাজ করেছিলো, সেটার মাথামুন্ডু এসব মানুষ বুঝে না! ১৯৫৮ সালে, পুর্ব পাকিস্তানের কতজন নাগরিক জানতেন যে, রাষ্ট্রে সংবিধান বলে একটি বস্তু আছে? এখনকার ঢাকা ইউনিভার্সিটির কতজন ছাত্র আইন ও সংবিধানের মধ্যকার পার্থক্য বুঝেন?
যাক, পাকিস্তানের ১ জন বিচারক অবশেষে বুঝেছিলেন, তিনি জেনারেল মোশারফকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন। পাকিস্তানী মিলিটারী এমন ভয়ানক যে, সেই বিচারকের চাকুরী খেয়ে ফেলেছে। পাকী মিলিটারীর কয়েক কোটি ভাই, বেরাদরণ আছে বাংলাদেশে।
রোহিংগাদের প্রতি সমবেদনা নেই, এখন এই রকম বাংগালী খুঁজে পাওয়া যাবে শুধু টেকনাফ ও কক্সবাজারে মাত্র, এবং সামু ব্লগে; এখনো দেশের মানুষ তাদের প্রতি দয়াশীল; রোহিংগাদের এই অবস্হার জন্য কে দায়ী? ওদের এই অবস্হার জন্য সেখানকার সৈন্যবাহিনী দায়ী; এবং এই ব্যাপারে প্রতিটি বাংগালী একমত হবেন; ১৯৭৯ সালে, বার্মার মিলিটারী রোহিংগাদের নাগরিকত্ব বিলোপ করে, ও ক্রমাগতভাবে তাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে আসছিলো; যা ২০১৭ সালে চরম আকার ধারণ করেছিলো।
বার্মার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিলো ১৯৬২ সালে, এবং ১৯৯০ সালের আগ অবধি তারা সেখানে খুবই পপুলার ছিলো; শুধু সম্প্রতি তারা তাদের পপুলারিটি হরায়েছে; এতদিন মগের বাচ্চারা বুঝতে পারেনি কেন?
১৯৭৫ সালে, শেখ সাহেবকে হত্যা করেছে মোটামুটি ২০/২২ জন অফিসার ও তাদের অধীনে থাকা ৪০০'এর মতো সেনা; সেনাবাহিনীর বাকীরা জেনেছে ভোর রাত্রে। বাকী ৭০ হাজার সেনা ও ৫ হাজার অফিসার কি করে তাদেরকে গ্রহন করলো? এরপর তারা হত্যা করলো যুদ্ধকালীন প্রধামন্ত্রীকে! সর্বেশেষ, তারা শেখ সাহেবের করবের উপর বিএনপি নামের একটি দল গঠন করলো, ভোটে জয়ী হলো! এরা এত সাপোর্টার কোথায় পেলো? এই বিএনপি সাপোর্টারেরা আজকাল গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি করে বেড়াচ্ছে!
যারা আজকে গণতন্ত্রের জন্য কাঁদছে, তারা কি ভুলে গেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট রাতে, ঢাকা শহরকে রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনীর সামান্য কয়েকজন অফিসার নির্বাচিত সরকার প্রধানকে হত্যা করে 'রাইফেলের গণতন্ত্র' কায়েম করেছিলো?
বিএনপি'র জন্ম হয়েছিলো ঢাকা কেন্টনমেন্টে; কিন্তু বিএনপি ভোট করেছিলো কয়েকবার, এবং সেই ভোটের জিয়ার আমলের সর্বশেষ প্রেসেডেন্ট ছিলো বিচারপতি সাত্তার সাহেব। উনাকে আইয়ুবী ষ্টাইলে রাইফেল দিয়ে সরায়ে দিয়ে, ক্ষমতা নিলো জে: এরশাদ; উনি গণতন্ত্রী হয়ে গেলেন, উনারও গণতন্ত্রী দল এখনো আছে, এবং ক্ষমতায় আছে।
জেনারেল জিয়া ও এরশাদের সাপোর্টারের অভাব হয়নি বাংলাদেশে; জেনারেলরা গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশের মিলিটারী শাসনকর্তারা পাকিস্তান, বার্মা ও মিশরের মতোই জনপ্রিয়; তবে, এই দেশের মানুষকে বার্মার মতো একদিন বুঝতে হবে, গণতন্ত্র ও মিলিটারী একত্রে যায় না, এবং জাতিকে এজন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৯