somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতি যখন মাতাপিতা

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের গ্রামের দরিদ্র মামা-মামীর সংসারে বড় হওয়া এক কিশোরীর জীবনের কষ্টকর একটি রজনীর কথা।

আমাদের গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায় আমাদের একটা ছাড়া-বাড়ী ছিল; বাড়ীটি বেশ বড়; ওখানে কোন ঘর ছিলো না, ৪ টুকরো উঁচু জমি ও মাঝারী আকারের একটি পুকুর ছিলো; আমরা ওখানে নিজেদের জন্য ও বিক্রয়ের জন্য কয়েক ধরণের সবজী করতাম। বাড়ীটির চারিদিকে পাটিপাতা, কাঁটালতা, বেত, বিবিধ ফলগাছ, কলাগাছ, ঝোপঝাড় ছিল অনেক; বাহির থেকে ভিতরটা তেমন দেখা যেতো না, কিছুটা ভুতুড়ে ভুতুড়ে মনে হতো; আবার চারিপাশে চওড়া নালা থাকায়, শুধু মাত্র প্রবেশ পথ ব্যতিত ভেতরে যাওয়া যেতো না।

আমি তখন নবম শ্রেণীতে, ছাড়া-বাড়ীর একটা জমিতে বেগুন করা হয়েছিলো, সেইবারের বেগুনের জাতটা ভালো ছিলো না; গাছ বেশ উঁচু হয়েছিলো, এবং শাখা-প্রশাখা বেশী বিস্তার করেছিলো। শীত শেষ হয়ে আসছে, খেজুরের রসও শেষ হওয়ার পথে; আমাদের বুড়োমিয়া সন্ধ্যার দিকে খেজুর গাছে বাটালী করে, হাঁড়ি লাগায়; আমি খুব ভোরে গিয়ে রস নামিয়ে আনি। এক ভোরে আমি একটা উঁচু গাছ থেকে রস নামানোর সময়, বেগুন খেতের দিকে আমার দৃষ্টি যায়; মনে হচ্ছে, বেগুন গাছের সারির মাঝে শাড়ীপরা কেহ একজন পড়ে আছে, কিংবা শুয়ে আছে! আমি রসের কথা ভুলে গেলাম, তাড়াহুড়া করে নেমে, বেশ উদ্ভিগ্ন হয়ে কাছে গিয়ে দেখি ঠিকই একটি মেয়ে শুয়ে আছে, শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকা; খড়ের গাদা থেকে বেশকিছু খড় এনে, বিছায়ে দিয়ে উহার উপর শুয়ে থাকায়, আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে, সে নিজেই এই ব্যবস্হা করেছে, এবং শোয়ার ভংগি থেকে বুঝা যাচ্ছে, সে জীবিত! আমি আরো কাছে গেলাম, বুঝা যাচ্ছে সে শ্বাস নিচ্ছে, আমার চিন্তা কেটে গেলো।
-এটা কে?
মেয়েটি মুখের উপর থেকে কাপড় সরায়ে, উঠে বসলো; আমাদের পশ্চিম পাড়ার আবুল কাকার ভাগনেয়ী শমসু, ১২ বছরের কিশোরী।
-কিরে শমসু, কি হয়েছে, তুই এখানে ঘুমায়েছিস কেন?
-আমি রাতে ঘরে যাই নাই, মামী মারবে।
-কি হয়েছে?
-আমি দুপুর বেলায় চুরি করে আনু মামীদের ভাত খেয়ে ফেলেছি।
-বাড়ী থেকে কখন পালিয়েছিস?
-কাল দূপুরে?
-রাতে তো না খেয়ে আছিস?
-তোমাদের জমি থেকে একটা মুলা তুলে খেয়েছি।
-ক্ষুধা লাগছে?
-না।
-ঠিক আছে, এখন বাড়ী চলে যা।
-না, আমি যাবো না, গেলে মারবে।
-আমি তোর সাথে যাবো, তোকে মারবে না।
-তুমি চলে গেলে মারবে। তুমি গিয়ে দেখ, মামা ঘরে আছে, নাকি পাহাড়ে চলে গেছে; মামা থাকলে যাবো।
-খেজুরের রস খেতে পারবি?

সে উঠে গিয়ে কলসী থেকে খেজুরের রস খেলো অনেকটুকু। আবুল কাকাদের একটি মাত্র বোন, বিয়ে টিকেনি, ছয়-সাত বছরের মেয়ে নিয়ে বড় ভাইয়ের কাছে এসে উঠেছিল; মেয়েসহ কেহ বিয়ে করতে চাহে না, সেজন্য বিয়ে বসেনি চার-পাঁচ বছর; অবশেষে, একদিন বিয়ে বসতে বাধ্য হয়েছে, গরীব ভাই কতদিন টানবে! মেয়েটা এখন মামার পরিবারে।

মেয়ে পুকুরের ঘাটে বসে রলো; আমি তার মামার বাড়ী গেলাম; আবুল কাকা পাহাড় থেকে পাথর নামায়, ভোরে ভোরে কাজে চলে গেছে; মেয়েকে হয়তো খুঁজেছিলো; কিন্তু এই ভুতুড়ে বাড়ীতে লুকিয়ে থাকতে পারে তা ভাবেননি।

আমি ফিরে এসে দেখি,শমসু আবারো সেই খড়ের উপর শুয়ে আছে; রাতে ভয়ে ঘুমায়নি নিশ্চয়।
আমি বললাম,
-আমাদের বাড়ী চল।
-কেহ দেখলে মামীকে বলে দেবে।
-তোর মামী তোকে খুঁজতে আমাদের পাড়ায় যাবে না, চল।

এত ভোরে শমসুকে আমার সাথে দেখে আমার মা বুঝতে পারলেন, কিছু একটা ঘটেছে; মাকে বললাম যে, সে মামীর ভয়ে পালিয়ে আছে। মা বললেন,
-তুমি খেয়ে পড়তে যাও, আমি ওর ব্যবস্হা করবো।

বিকেলে আমি স্কুল থেকে ফিরে আসার পর মা বললেন যে, শমসুর মামীকে ডেকে আনিয়ে বুঝায়ে বলেছেন, মেয়েকে যেন না মারে।



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×