somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্ডগোল করতে চাইলে গন্ডগোল নিজেই এসে উপস্হিত হয়?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বয়স বাড়লে ঘনঘন ডাক্তারের কাছে যেতে হয়; বছর তিনেক আগে, এক সোমবার সকালে এক নতুন স্পেশালিষ্টের অফিসে যেতে হলো; রোগীদের বসার রুমে প্রবেশ করে দেখি সবগুলো বয়স্ক, হতাশ হওয়ার মতো ব্যাপার, কারো মুখ তেমন প্রশান্তি নেই; এক কোণে বসে এক আফ্রিকান আমেরিকান কালো চশমা চোখে, হাতে-ধরা একটা ডিভাইসে সিনেমা দেখছে; মনে হয়, ভয়ের সিনেমা, এক মেয়ের ভীতিপুর্ণ চীৎকার শোনা যাচ্ছে! তারপাশে গিয়ে বসলাম; মনে হয়, তার সাথে আলাপ জমানো যাবে!

-কেমন আছ, ভয়ের সিনেমা দেখছ?
-না, সাধারণ ডিটেকটিভ!
-কালো চশমা পরে, ডিটেকটিভ সিনেমা দেখছ, পুলিশ কি তোমাকে খুঁজছে?
-আরে না, পুলিশ টুলিশ না, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ডান চোখ ফুলে গেছে!
-বামহাতী গার্লফ্রেন্ড নিয়ে রবিবারে পার্টি করে বেড়ালে ডান চোখ তো ফুলবেই, সৌভাগ্য যে, একটা ভালো আছে!
-পার্টি মার্টি আরো ১০ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছি!
-গতকাল তো ঠিকই কয়েক গ্লাস হুইস্কি চালান করে দিয়েছ; তারপর, অন্যের মেয়ে নিয়ে টানাটানি করেছ নিশ্চয়!
-আরে না, এখন সেই বয়স, আর সেই আয় আছে নাকি! ৪/৫টা বিয়ার খাইছি মাত্র।
-তো, ঘুষি কে মারলো, তোমার গার্লফ্রেন্ড, নাকি অন্য মেয়ের বয় ফ্রেন্ড?
-আরে না, সেই রকম কিছু ঘটেনি; ঘুম থেকে উঠে দেখি চোখ আপনা-আপনিই ফুলে গেছে!
-৪/৫ টা বিয়ারের পর এই অবস্হা, কে ঘুষি মারছে, সেটারও খবর নেই; চোখ আপনাআপনি ফুলে নাকি?

আমাদের আলোচনায় বাকী রোগীরা জেগে উঠেছে; আমাদের কথা শুনছে মনোযোগ দিয়ে, ২/১ জন হাসছে; আফ্রিকান মিয়ার ডাক পড়লো, ডাক্তার এসে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলো; আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখালাম বাকীগুলোর সাথে জমবে না; আমার সামনে ৬/৭ জন রোগী, হাতে ঘন্টাখানেক সময় আছে; বাইরে গিয়ে হেঁটে আসি, সম্ভব হলে, ছোটখাট গন্ডগোল মন্ডগোল করা যাবে।

রাস্তার উল্টোদিকে একটি বেকারী, ভেতরে গেলাম; লোকজন তেমন নেই; দুইটি কিশোরী অর্ডার-লাইনে; তাদের পেছনে লাইনে দাঁড়ালাম; কাউণ্টারের কাছে, এক টেবিলে দুইজন বয়স্ক মহিলা কফি নিয়ে বসেছে; দুরের কোণে একটি তরুণ আইসক্রিম খাচ্ছে ও ফোন চেক করছে। কিশোরীদের অর্ডার সম্পুর্ণ হয়েছে, একজন ২ টি কেকের টুকরা নিয়ে এক টেবিলে গিয়ে বসলো; অন্যজন পয়সা দিয়ে, কোকের গ্লাস নেয়ার জন্য হাত বাড়ানোর সময়, হাতে লেগে গ্লাস পড়ে গেলো নীচে।

ক্যাশের মধ্যবয়সী মহিলা ছোট মেয়েটাকে ধমক দিলো,
-পংগু নাকি, হাত থেকে গ্লাস পড়ছে কেন?
-স্যরি! মেয়েটা হতাশ।
-সর, সামান্য কোকের গ্লাসও ধরতে জান না; মা কিছুই শিখায়নি?

মহিলা দ্রুত যায়গাটা পরিস্কার করে আমার অর্ডার নেয়ার জন্য ক্যাশে দাঁড়ালো। মেয়েরা বসে কেক খাচ্ছে। বয়স্ক মহিলা ২ জন ক্যাশিয়ারের আচরণে খুশী নন; কিন্তু কিছু বললেন না।

আমি বললাম,
-আমার অর্ডার নেয়ার আগে তুমি মেয়েদের কোক দাও!
-কিসের কোক? ওরা নতুন করে কোকের অর্ডার দিয়েছে নাকি?
-যেটা পড়ে গেছে, সেটা তুমি পুরণ করে দেবে না?
-এটা রেডক্রস নয়, এটা ব্যবসা! মেয়ে ফেলেছে কোক, আমি ফেলিনি!
-মেয়ের হাত থেকে কোক পড়েছে বলে তুমি মেয়েদের কোক দেবে না?
-দরদ লাগলে তুমি পয়সা দাও, আমি কোক দেবো।

আমি কোকের পয়সা দিলাম; কোক নিয়ে মেয়েদের টেবিলে রাখলাম; ২ জনই ধন্যবাদ দিলো। আমি ফিরে এসে মিডিয়াম কফির অর্ডার দিলাম। কফি কাউন্টারে রাখতেই, পয়সা দেয়ার আগেই আমি কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম,
-এই বিশ্রী কফি তুমি বিক্রয় কর এখানে?
সে কিছু উত্তর দেয়ার আগেই আমি পাশের গার্বেজ ক্যানে কফিটা ফেলে দিলাম। মহিলার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,
-তুমি কফি কেন ফেলেছ?
-উহা কফি নয়, উহা বলদের মুত্রের মতো বিস্বাদ!

মহিলা কাকে উঁচু গলায় ডাকলো,
-রিক এদিকে আস, এক লোক গন্ডগোল করছে।
কাউন্টারের পেছনে দরজা খুলে ৫০/৫৫ বছরের একটা লোক ক্যাশে আসলো; গায়ে আটা ময়দা লেগে আছে; মনে হয়, বেইকিং করছিলো। সে ক্যাশিয়ারকে বললো,
-কি হয়েছে?
-এই লোক কফির অর্ডার দিয়েছিল, আমি কফি দেয়ার পর, সে এক চুমুক খেয়ে, কফি ডাস্টবীনে ফেলেছে; বলছে, কফি নাকি বলদের মুত্রের মতো।

লোকটা আমাদে দিকে তাকালো। আমি বললাম,
-স্যরি, মহিলা আমাকে খুবই বিস্বাদ কফি দিয়েছে।
-তা বলে তুমি কফি ফেলে দেবে? তুমি চাইলে বদলে দেয়া যেতো শতবার! কফি ফেলা কিন্তু অপমানের সমান; এখান থেকে চলে যাও।
-আমি কোথায়ও যাচ্ছি না; আমি এখানে বসার জন্য এসেছি।
-ঠিক আছে, বসে থাক'গে!
-আমাকে এক কাপ চা দাও!

মহিলা বললো,
-তোমাকে কোন চা দেয়া হবে না।
লোকটা গিয়ে চা বানালো, জিজ্ঞাসা করলো, "দুধচিনি লাগবে?"
-না।
আমি পয়সা দিতে গেলাম; মহিলা ক্যাাশ থেকে সরে গেলো! লোকটা পয়সা নিলো।

মহিলা লোকটাকে বললো,
-তুমি তো কাহিনী জানো না!
-আমার জানার দরকার নেই; আমার কাজ আছে! তোমার কাজ তুমি করো।

আমি চা নিয়ে বসলাম; কিশোরীরা অনেক আগেই কেক শেষ করেছে; বসে আমাদের কান্ড-কারখানা দেখছিলো; যাবার সময় আমাকে হাত নাড়লো। মহিলা রেগেমেগ মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-এখানে তোমাদের আর যেন না দেখি!


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×