জেনারেল জিয়া মুক্তিযুদ্ধের বীর ছিলেন; মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ও মাঝখানে উনার নামে একটা বাহিনী ছিলো, এটি ছিলো ফ্রন্ট-ফাইটারদের বাহিনী, "যেডফোর্স"; দেশ ব্যাপী সেক্টর গঠন করা হলে, যেডফোর্স এলাকাটি ১ নং সেক্টর (ফেনী থেকে টেকনাফ ) নাম পায়; ততকালীন মেজর জিয়া ১ নং সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন; ত্রিপুরার "হরিনা গ্রাম"এ ইহার হেড-কোয়ার্টার স্হাপিত হয়; দেশ থেকে আগত যুবকদের এখানে গেরিলাযুদ্ধ ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়, ট্রেনিং শেষে, বেশীরভাগই গেরিলাযুদ্ধ করার জন্য ১ নং সেক্টর এলাকায় প্রবেশ করেন ও যুদ্ধে অংশ নেন।
যথাসম্ভব জুন মাসে, মেজর জিয়ার স্হানে কামন্ডার হিসেবে নিযুক্তি পান মেজর রফিক সাহেব; মেজর জিয়া তখন ২০০ সৈনিক (ইপিআর, বেংগল রেজিমেন্ট, ছাত্র ) নিয়ে ফ্রন্ট ফাইটে থাকেন, আবারো বাহিনী যেডফোর্স নামে ১ নং সেক্টরএলাকায় যুদ্ধ করতে থাকেন; ইহার হেড-কোয়ার্টার ছিলো "পংবাড়ী"তে। মেজর রফিক ১ নং সেক্টরকে দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেনিং সেন্টার ও সেক্টরে পরিণত করেন, এখানে সর্বমোট ২০ হাজারের বেশী যোদ্ধাকে ট্রেনিং দেয়া হয়।
মেজর জিয়াকে ১ নং সেক্টরের কামন্ডার পদ থেকে সরায়ে দেয়ার কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হন, এবং সিএনসি জেনারেল ওসমানীর হুকুম অমান্য করতে থাকেন। আগষ্ট মাসের শেষদিকে মেজর জিয়াকে ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়; কিন্তু তিনি উহাতে যোগ দিচ্ছিলেন না; পংবাড়ীতে থেকে সীমান্তে যুদ্ধ করছিলেন।
জেনারেল ওসমানী ও তাজুউদ্দন সাহেবের চাপে, তিনি অনেকটা অনিচ্ছার সাথে অক্টোবরের শুরুর দিকে উনার ফাইটারদের একাংশকে নিয়ে ১১ নং সেক্টরে যোগদান করেন। তাঁহার শেখ হত্যা ও বাংলাদেশে মিলিটারী শাসনের একটা কারণ হতে পারে, ১ নং সেক্টর নিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টি।
যাক, যুদ্ধ শেষে তিনি নিজগুণের পুরস্কার পান, খুব সামান্য সময়ে জেনারেল হয়ে যান ও বাংলাদেশ বাহিনীর 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' হন, খেতাব পান; শেখ সাহেব "বাকশাল" করলে উহাতে কি একটা পোষ্ট পেয়েছিলেন।
সিআইএ তাঁকে খুঁজে নিয়েছে, নাকি তিনি সিআইএ'কে খুজে নিয়েছিলেন, এটা এখন একামত্র জীবিত কর্ণেল অলি আহমেদ হয়তো বলতে পারবেন; কর্ণেল অলি ১ নং সেক্টরে জিয়ার অধীনে এডমিনিষ্ট্রেটর ক্যাপ্টেন ছিলেন। জেনারেল জিয়া শেখকে হত্যা করে যেই অপরাধ করেছেন, ইহার মতো অপরাধ কোন বাংগালী কোন সময় করেনি; হয়তো, মীর জাফর করেছিলো; তবে, মীর জাফর উনার মতো বুদ্ধিমান ও দক্ষ ছিলো না।
জিয়ার বিচার করেছে সেনা বাহিনী নিজেই; কারণ, সেনাবাহিনী ব্যতিত সাধারণ মানুষ উনার অপরাধের ভয়াবহতা বুঝার অবস্হানে ছিলো না; সর্বোপরি, উনি ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ বাহিনীর "মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের" ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে যাচ্ছিলেন; তিনি ৩০০ বেশী মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের ফাঁসী দিয়েছিলেন।
আপনি যদি "যেডফোর্সে"র সদস্য না'হয়ে থাকেন, জেনারেল জিয়াকে আপনার জানার কথা নয়, বুঝার কথা নয়; আপনি যদি যেডফোর্সের সদস্য না হয়ে থাকেন, এবং জিয়া আপনার বীর হয়ে থাকেন, এটা হবে বিশাল এক আজগুবি সম্পর্ক।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫