somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বীনের বাদশাহ (পুনরায় প্রকাশ )

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই পোষ্টটি আমাদেরে এলাকার পিতামাতাহীন এক ছেলের জীবন সংগ্রামের সামান্য অংশ:

আমি ষষ্ট শ্রেণীতে পড়ার সময়, ধানের মওসুমে, মাদ্রাসার জন্য চাঁদা তুলতে আসা মাদ্রাসার এক দরিদ্র ছাত্রের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো, নাম ছিলো আবদুল করিম; মনে হচ্ছে, স্কুলে পড়ার আগ্রহ ছিলো তাঁর; কিন্তু বাবা না থাকায় খরচ চালানোর উপায় ছিলো না। তিনি মাদ্রাসাও শেষ করতে পারেননি, মাদ্রাসা ছেড়ে, দিনমুজুরী করে সংসার চালাতেন; তাঁর বড় বোনের বিয়ে হওয়ার পর, তার মায়ের মৃত্যু হয় কম বয়সে। বড় বোন ব্যতিত তাঁর আর ভাইবোন ছিলো না; মনে হয়, দারিদ্রতা তাঁকে হতাশ করে তুলেছিলো, ১৫/১৬ বছর বয়সে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান; এবং ১১ বছর পর তিনি বাড়ীতে ফিরে আসেন।

যখন বাড়ীতে ফিরে এসেছিলেন, তাঁর হাতে টাকা পয়সা ছিলো, তিনি বাড়ীতে নিজের ঘর করেছিলেন ও বাড়ীর সামনে একখানা মসজিদ করেছিলেন; তিনি মানুষের সাথে তেমন আলাপ আলোচনা করতেন না; নিজের মসজিদে ইমামতী করতেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন, হাতে থাকতো একখানা বড় লাঠি; তাঁর আয়ের ব্যাপারে কেহ কিছু জানতো না, মানুষ মনে করতো যে, তাঁর টাকার উৎস হলো জ্বীন; তাঁকে জ্বীনের বাদশাহ নাম দেয় গ্রামের লোকেরা।

আমার চাকুরী জীবনের প্রথমদিকে তাঁর সাথে কথা হয়, পরেও আমি দুর থেকে তাঁকে হেঁটে যেতে দেখেছি, কিন্তু আলাপ হয়নি। সম্প্রতি আমি উনার উপর একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম; ব্লগার জুন উনার সম্পর্কে আরো জানতে চেয়েছিলেন; আমি উনার খবর নিয়েছি: ২ বছর আগে উনার মৃত্যু হয়েছে; ৩ জন ছেলে আছে, ছেলেগুলো পড়ালেখা করেছিলো, চলছে।

নিরুদ্দেশ থাকাকালীন সময়ে, আসলে তিনি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে এক নির্জন পাহাড়েই ছিলেন; তিনি কখনো হাটবাজারে যেতেন না বলেই কেহ তার খবর জানতো না। ভাটিয়ারীতে, শিল্পপতি একে খানের কিছু পাহাড় ছিলো, সেগুলো অনাবাদী পড়েছিলো; সেখানে স্হানীয় একজন লোক ২টি গাভী পালন করতো; সেই লোক করিমকে গাভীগুলোর দায়িত্বে নিয়োগ করে। গরুর ঘরের পাশেই একটি কুঁড়ে ঘরে করিম থাকতেন, মালিক বাজার সাজার করে দিতেন, করিম নিজে রান্নাবান্না করে খেতেন। এক সময় করিম ৮টি গাভীর দেখাশোনা করতেন। দীর্ঘদিন সেখানে থাকার সময়, নিজেই কুঁড়ে ঘরটাকে ভালো করে বাঁধেন ও অনেক ধরণের ফল গাছ লাগিয়েছিলেন পাহাড়ে।

পাহাড়ে করিমের ১১ বছর কাটার পর, একদিন একে খান সাহেব নিজের পাহাড়গুলো দেখতে এসে করিমকে ও গরুর খামার দেখতে পান; করিম তাঁকে খুব সন্মানের সাথে দুগ্ধ দিয়ে আপ্যায়ন করেন। একে খান করিমকে এককালীন ভালো পরিমাণ টাকা দেন ও উনার কারখানার শ্রমিক হিসেবে চাকুরী দেন। কিন্তু করিম বাড়ী গিয়ে মসজিদ করে ইমামতি করতে চান; একে খান বিনা কাজেই করিমকে প্রতিমাসে শ্রমিক হিসেবে বেতন দিতে বলেন উনার ম্যানেজারকে; ইহাই ছিলো করিমের আয়ের পথ। করিম নিজের কোন ব্যাপারে মানুষের সাথে আলাপ করতো না, মানুষ মনে করতো যে, জ্বীন করিমকে টাকা দিয়ে যায়।






সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×