somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাপ্ত-অসমাপ্ত প্রেম ১ম পর্ব

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পটা কবে শুরু হয়েছিলো তা ঠিকমত বলতে পারছে না সোয়েব। স্বপ্নের শুরুর কথা কি আর কারো মনে থাকে? স্বপ্ন যেমন হঠাৎ শুরু হয়ে নিজের মত চলতে থাকে, গল্পের শুরুটাও তেমনি হঠাৎ। যে ঘটনা কোন পূর্বাভাস না দিয়ে শুরু হয় আবার পুর্বাভাস না দিয়েই শেষ হয়ে যায়, তাকে স্বপ্ন ছাড়া আর কি বলা যায়?

খুবই সাদামাটা, নিরামিষ একটা ছেলে সোয়েব। বাবা-মায়ের একান্ত বাধ্য সন্তান। তবে কাজ কর্মে তার প্রমান খুব কমই পাওয়া যায়। এইতো সেইদিন, যখন ওর মা জিজ্ঞাসা করলো, “সন্ধ্যা পার হতে না হতে টিভি দেখতে বসলি কেনো?” তখন সোয়েব কোন উত্তর না দিয়ে টিভির দিকে তাকিয়েই থাকলো। কারন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচের একটা বলও সে মিস করতে রাজী নয়। চূলায় যাক পড়াশুনা।

কিছুক্ষণ পর মা বিরক্ত হয়ে বললো, “উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?”
সোয়বের সরল স্বীকারোক্তিঃ উত্তর দিয়ে কি লাভ? আমি এখন খেলা ছেড়ে উঠতে পারব না।

তর্ক করা বৃথা, তাই মা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।

বয়স আর কত? এই ২০ চলে আর কি। ছোট বেলা থেকেই ছেলেটা বইয়ের পোঁকা। এখন অভ্যাসটা কিছুটা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে আছে। স্কুলে থাকতে ওর ক্লাসের বইয়ের নিচে মধ্যে মাঝে মধ্যেই তিন গোয়েন্দার বই লুকানো থাকতো। ধরা যে খায়নি, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাতে কি? স্বভাব পাল্টায়নি। এতে অবশ্য সোয়েবের বাবার ও কিছু অবদান আছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই তিনি তার দুই ছেলেকে নিয়ে বইয়ের দোকানে যেতেন। বাবার পকেট ফাঁকা হওয়ার আগে পর্যন্ত দুইজনে বই কিনত। যদি দেখা যেতো সব গুলো বই পড়া শেষ, কিন্তু ছুটি এখনো শেষ হয়নি, তাহলে আবার বইয়ের দোকান, দোকানদারের ২ গাল চওড়া হাসি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই গল্পের বই বোধহয় শেষ পর্যন্ত সোয়েবের স্থায়ী একটা সর্বনাশ করে গেলো।

সমস্যা হলো, ছেলেটা বেশ একটু ভাবুক প্রকৃতির। কোন একটা উপন্যাস পড়ে ভালো লেগে গেলো, ব্যাস, ঐ উপন্যাস নিয়ে ভেবে ভেবে আরেকটা উপন্যাস পড়ার সমান সময় ব্যয় না করা পর্যন্ত সে ভাবতেই থাকবে। নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে সে তার পঠিত কোন উপন্যাসের সাথে মেলাতে চেষ্টা করে প্রায়ই। এটা নিয়ে সে বন্ধু মহলে ক্রমাগত সমালোচনার স্বীকার। সমালোচনাতে সব থেকে এগিয়ে আছে তার সবথেকে কাছের বন্ধু রাসেল। রাসেল তো একদিন বলেই বসলো, “বিয়ের পরে ছেলেদের বউ হয়, তোর হবে বই”।

সোয়েব এর উত্তরে দার্শনিকের মত বলে বসলো, “তাতে আমার আপত্তি নেই। নারী হৃদয়ের পাঠোদ্ধার করার থেকে পুস্তক পাঠ অনেক সহজ কাজ”
রাসেল বললো, “তা তুই খারাপ বলিসনি। কিন্তু তোর মাথায় ও যে নারী হৃদয় নিয়ে টেনশন আছে জানতাম না।”
-তোর টেনশন নেই?
-আছে মানে!!!! তুই জানিস আমার ড্রিম গার্ল………
- এলিজা কাথবার্ট, জানি জানি। দিনে অন্তত ১২ বার তোর মুখে এটা শুনতে হয় আমাকে।
-ভালো কথা মনে করেছিস। আজকে তোর ড্রিম গার্লের বিষয়ে শুনব।
-শুনলে তোর ভালো লাগবে না।
-এইসব বলে তুমি সব সময় এড়াইয়া যাও মামমা, আজকে না কইলে আমি বানাইয়া লমু।
-আরে না না, আমি বলব তো। আচ্ছা তুই বলতো, ড্রিম গার্ল মানে কি?
-স্বপ্ন বালিকা।
-এটাতো আক্ষরিক অনুবাদ। ভাবানুবাদ হলো ‘স্বপ্নের নায়িকা’। যার ডেজিগনেশান হলো স্বপ্নের নায়িকা, তার সাথে তো শুধু স্বপ্নেই দেখা হতে পারে।
-ওই, তুই আমার সাথে চালাকি করছিস নাকি? স্বপ্নের কথা বলে আসল ঘটনা সাইড করে যাওয়ার ধান্দা?
-না, সবুর কর বন্ধু। মেওয়া এতো তাড়াতাড়ি ফলে না। ‘তাতার রাজপুত্র’ নামে একটা গল্প ছোট্ট বেলায় পড়েছিলাম। আমার ইচ্ছা, আমার ড্রিম গার্লের সাথে আমার ঐ গল্পের মত দেখা হবে।
-ঐ গল্পে কিভাবে নায়ক নায়িকার দেখা হয়েছিলো?
- মোঙ্গলীয়ান রাজপুত্র প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখতো, তার মাথার কাছের জানালায় একটা টিয়া পাখি বসে আছে। টিয়া পাখির মুখে একটা ছবি। রাজপুত্র জানালার সামনে গিয়ে দাড়ালেই টিয়া পাখিটা কথা বলে উঠত, আর ছবিটা রাজপুত্রের সামনে পড়ে যেতো। ছবি দেখেই রাজপুত্র বুঝত এটা কোন রাজকন্যার ছবি। টিয়া পাখিটা শুধু একটা কথাই বলত,
পূর্ব দিকের জঙ্গল যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু রাজকন্যের দেশ।
রাজপুত্র একদিন সাহস করে বের হয়ে পড়ল। ঘোড়া ছুটিয়ে সকল বাঁধাকে জয় করে ৩ দিন পর সে এক নতুন দেশে পৌছালো। সেখানকার রাজসভায় গিয়ে জানলো, আজ রাজকন্যার সয়ম্বর সভা হবে। বিভিন্ন দেশের রাজপুত্ররা সেখানে এসেছে। ৩ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজপুত্র তখন ধরাশায়ী। কিন্তু বসে থাকা চলবে না। এতো কষ্ট করে খালি হাতে ফিরবে নাকি? তাকে জানতেই হবে এই রাজকন্যা ছবিতে দেখা সেই রাজকন্যা কিনা। সে রাজার অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়ল সয়ম্বর সভায়।

রাজকন্যা এলো মালা হাতে নিয়ে। এই মালা যার গলায় দেবে, সে ই হবে ভবিষ্যৎ রাজ-জামাতা । রাজ কন্যা চিন্তিত মুখ তুলে খেয়ালী চোখে ঘরের সব রাজপুত্রদের দিকে তাকাতে লাগলো। আমাদের নায়ক রাজপুত্রের সাথে চোখাচোখি হতেই সে থমকে গেলো।বুঝতেই পারছিস, এই রাজকন্যাই ছিলো রাজপুত্রের ড্রিম গার্ল। প্রথম দর্শনে তারা একে অপরের দিকে চেয়ে থাকলো অপলক। তারপর রাজকন্যা তাতার রাজপুত্রে গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো অন্দর মহলে।
“গল্প শেষ?” জিজ্ঞাসা করলো রাসেল।
“প্রায়”। “বিয়ের পর রাজপুত্র জানতে পারলো, রাজকন্যাও প্রতি রাতে ঐ পাখিটাকে স্বপ্নে দেখত। পাখিটা বলতো,
বল মহারাজকে, হবে সয়ম্বরা
তবে আসবে রাজকুমার ছুটিয়ে ঘোড়া”
-তোর স্বপ্নে টিয়া পাখি আসে নাকি?
-টিয়া পাখি আসবে কিভাবে? আমি কি রাজপুত্র নাকি? আসলে ব্যাপারটা হলো, আমার ড্রিম গার্লের সাথে আমার কখনো দেখাই হবে না।
-আচ্ছা তুই কি আমাকে ঘাশ খাওয়া প্রানী মনে করিস?
-কেনো?
-একবার বললি কখনো দেখা হবে না, আবার বললি স্বপ্নে দেখা হবে। বলবি না ভালো কথা, উল্টা পাল্টা বলিস কেনো?
-শোন, আমি কিন্তু এখনো বলিনি আমার ড্রিম গার্লটা আসলে কে। বললে বুঝতে পারবি কেনো দেখা হবে না। আমার ড্রিম গার্ল হলো শিউলি।
-হুহ, কি পছন্দ! শিউলির যা চেহারা !
-আরে তোর ক্লাসমেট শিউলি না, গর্ধভ। নজরুল ইসলামের শিউলি
-নজরুল ইসলামের শিউলি মানেটা কি? শিউলি নামে তার কোন মেয়ে ছিলো নাকি?
-জ্বী না। নজরুল ইসলামের ‘শিউলিমালা’ গল্পটা পড়িসনি? ঐ গল্পের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র। যাকে স্মরণ করে প্রতি বছর একটা শিউলিমালা ভাসিয়ে দিত নায়ক মহাশয়। প্রতিবছর একটা বিশেষ দিনে নদীতে সে ভাসাতো সেই মালা, যদি শিউলি সেই মালা পায়, এই আশায়।
-তো মিস্টার পুস্তক, শিউলিকে আপনার ভালো লাগলো কেনো?
-পরে শুনিস। এখন চল বাইরে। ক্রিকেট খেলার টাইম হয়ে গেছে।


সোয়েব এখন না বললেও ওর ডায়েরী থেকে আমরা সত্যটা আগে ভাগেই জেনে নিয়েছি। এই ব্যাপারে তার কাছে পরে সরি বলে নিলেই হবে।
‘শিউলি, সন্ধ্যায় ফুটে ঝরে যায় সকাল হতে না হতেই। ভোরের শিশির যেন ধঁরায় নেমে আসে শিউলিকে একবার ছুঁয়ে দেয়ার জন্যেই। কিন্তু ছুঁয়ে দিতে না দিতেই শেষ হয়ে যায় শিউলির ছোট জীবন। পৃথিবীতে সে আসে অনন্ত যৌবনা হয়ে, বার্ধক্য তাকে ছুঁতে পারে না কখনো। স্বল্প সময়ের জীবনে শিউলি তার গন্ধে মাতাল করে রাখে ধরণীকে। ঝরে পড়ে গেলেও রেখে যায় পিছু টান, আবার কখন ফিরে আসবে সেই সুগন্ধ? আরেকটি সন্ধ্যার জন্যে অপেক্ষা......। মনে প্রশন জাগে, সত্যিই কি আবার ফিরে আসবে এই সন্ধ্যা? নাকি এটাই শিউলির সাথে শেষ দেখা? কিন্তু যখন প্রথম দেখা হয়, দেখে মনে হয়েছিলো, শিউলিতো আমার চিরচেনা। অনন্ত কাল যার জন্যে অপেক্ষা, এইতো সে। কিন্তু তাহলে শিউলি হারিয়ে যায় কেনো? হারিয়ে যায়, কারণ শিউলি যে বড় লাজুক। তাহলে কেনো সেই ফুলকে যত্ন করে আগলে রাখি না? কারণ, তাকে যে ধরে রাখা যায় না, সে বারবার আমাকে হারিয়ে দিয়ে নিজেই হারিয়ে যায়। তাকে আগলে রাখা চলে না, তার সৌন্দর্য্য তার স্বাভাবিক জীবনেই নিহিত। তারপর? যা হবার তাই। বিচ্ছেদ! কিন্তু বিচ্ছেদের আগে শিউলি যে প্রশ্নটা করে গেলো, “আবার কি দেখা হবে?” তার উত্তর কি? জানি হয়ত আর দেখা হবে না। তবুও তার প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে তার জন্যে অপেক্ষা করা। প্রতি বছর ভাসিয়ে দেয়া একটি শিউলি মালা। আশা, যদি এই মালা তার হাতে গিয়ে পৌছায়। তাকে জানিয়ে দেয় আমার না বলা সকল কথা। যা তাকে বলতে চেয়েছিলাম প্রথম দেখায়, কিন্তু বলা হয়নি আজও’।
কাকে উদ্দেশ্য করে সোয়েব এইসব লিখেছে কে জানে! মানুষের খেয়াল বড় অদ্ভুত। এর সাথে যদি ওর জীবনের প্রবাহ মিশে যায়, ক্ষতি কি? কিন্তু তা তো আর হচ্ছে না। সে এখনো আশায় আছে, কবে তার শিউলির সাথে দেখা হবে। দেখা হলে গল্পের নায়কের মত সে ভুল করতে রাজী নয়। সে নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়ে দেবে শিউলিকে। তারপর যা হবার হবে, সেসব নিয়ে সে ভাবতে চায় না।

বিকাল হলে ক্রিকেট খেলা সোয়েবের একটা অভ্যাস। এই ছোট জীবনে আর কোন ক্ষেত্রে রুটিন করে চলতে না পারলেও এই একটা ব্যাপারে সে ‘ব্যাপক’ সিরিয়াস। সেদিনও তো ক্রিকেটই খেলছিলো, যখন ফোনটা আসলো। উইকেট পড়েছে কেবল, অনেক ভাব নিয়ে, নিজের ব্যাটিঙ্গের প্রশংসা করে যখন সে কেবলমাত্র দাড়িয়েছে, ফোনটা বেজে উঠলো বেরসিকের মত। সোয়েবের তখন ফোন ধরার তেমন ইচ্ছা নেই। চেচিয়ে বললো, “শাওন, দেখতো কে ফোন করেছে”
শাওন আম্পায়ার হয়েছিলো। সঙ্গত কারনেই এখন তার কাছে ১০ থেকে বারটা ফোনসেট। তার মধ্যে থেকে সোয়েবের ফোন খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগলো। ততক্ষণে ফোন কেটে গিয়েছে।
শাওন সেটা সোয়েবকে জানালো। “ভাই, ফোন কেটে গেছে”।
সোয়েব ঝাঁঝের সাথে বললো, “দেখ না, কে করেছে”।
- নাম উঠেনি
- ভালো হয়েছে,
সোয়েব ব্যাটে দাড়ালো। প্রথম বলটা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে, গুড লেংথের বল। সজোরে ব্যাট চালিয়ে সোয়েব আবিস্কার করলো, সে কট বিহাইন্ড হয়েছে। নাহ, কিছুদিন যাবত কোনভাবেই সে ব্যাটিঙ্গে মনযোগ দিতে পারছে না। মাঠে তখন দুই ধরনের চিল্লাপাল্লা চলছে। একদিকে প্রথম বলে আউট হওয়ার কারনে সোয়েবের তীব্র সমালোচনা চলছে, অন্যদিকে এরপর কে নামবে তাই নিয়ে বিতর্ক। সোয়েব কোন দিকেই কান দেবার প্রয়োজন বোধ করছে না। ভাবছে, ব্যাটিংটা ঠিক করতে গেলে একবার চাচার কাছে যেতে হবে। চাচা ঠিক বলে দেবে সমস্যা কোথায়। চাচার কাছে গেলে আবার মনে পড়বে সেইসব দিনের কথা, যখন সোয়েব ভাবত একদিন সে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হবে। আজকাল পড়ালেখা নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকতে হয়, চাচার কাছে যাওয়ার সময় ই হয় না।

ক্রিং ক্রিং

আবার বেজেছে ফোন। সোয়েব ভুলেই গিয়েছিলো কে ফোন করেছে সেটা দেখা হয়নি। অপরিচিত নাম্বার। অপরিচিত নাম্বার দেখলেই হার্ট বিট ২/৩ টা মিস হয়ে যায় তার। কারন তার কেন জানি মনে হয় শিউলির সাথে তার একমাত্র ফোনের মাধ্যমেই যোগাযোগ হতে পারে। যদিও সে স্বাভাবিক থাকার আপ্রান চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করলো।

সোয়েবঃ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছিলেন?
-জ্বি আমি ঐশীকে চাচ্ছিলাম।
- (সত্যিই তো একটা মেয়ে ফোন কেরেছে। কোমল নারী কন্ঠ শুনে ইতিমধ্যে কয়েকটা হার্টবিট সোয়েব মিস করে ফেলেছে)সরি আপু, আপনি ভুল করেছেন। এটা ও.ও…ঐশীর নাম্বার না।
- ওহ সরি, কিছু মনে করবেন না।

ফোন কেটে গেলো, যদিও সোয়েব তখনও মাঝে মাঝে হার্টবিট মিস করে চলেছে। নিশ্চয় ডিজিট ভুল করেছে মেয়েটা। আচ্ছা, একটা ভুল মাত্র একবারই করতে হবে, এরকম কোন কথা আছে কি? এমনকি ক্ষতি হত, ভুলটা আবার করলে? কিন্তু যদি আর ভুল না করে? না করলে সোয়েব মেয়েটাকে ফোন দেবে, জিজ্ঞাসা করলে বলবে ভুল করে কল চলে গিয়েছে……

ধুর, কি সব আজে বাজে চিন্তা শুরু করেছে। একটা মেয়ে ভুল করে ওর কাছে ফোন করেছে, সেটাকে অপব্যবহার করা কোনভাবেই ঠিক কাজ নয়। দিবা স্বপ্নে ডুবে গিয়ে সে এখন কোথায় আছে, কি করছে সব ভুলে গিয়েছিলো। চিন্তা করছিলো চাচার সাথে দেখা করার ব্যাপারে। চাচা খুব যত্ন করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেন। একসময় ক্রিকেট খেলতেন তিনি, সেটা অনেক আগে। তখন ক্রিকেটের এতো জনপ্রিয়তা ছিলো না। এখন বয়স হয়েছে, খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে পারেন না। তবে তার কাছে কেউ উপদেশের জন্যে আসলে তিনি কখনো নিরাশ করেন না। এই জন্যেই তিনি সবার চাচা। সোয়েবের মধ্যে খেলোয়াড় হবার যে সুপ্তবাসনা একসময় ছিলো, ওর বাবার ধারনা, সেই স্বপ্ন ওকে এই চাচা মিয়াই দেখিয়েছিলেন। সে কথা সত্য কিনা তা অবশ্য তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি নি।
সেদিন আর তেমন কিছু ঘটল না, একটা ছাড়া। সোয়েব ঐ নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করে রাখলো। কিন্তু কি নামে সেভ করল? সে নাম দিলো UKA । এটা বোধহয় Unknown Application এর সংক্ষিপ্ত রূপ । সোয়েব কি আশা করেছিলো মেয়েটা আবার ভুল করবে? তা না হলে সেভ করলো কেনো?

২ দিন পর

রাসেল এসেছে সোয়েবের কাছে। খুব ব্যাস্তভাবে বললো,
- দোস্ত, উচ্ছাসকে একটা ফোন দে না। একটু দরকার, কিন্তু আমার ফোনে ব্যালান্স জিরো।
- এই নে, তুই ই খুঁজে ডায়াল কর।
রাসেল ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ টেপাটেপি করলো, তারপর চেচিয়ে উঠলো,
- এই রকম ফোন কোন ভদ্র লোক ইউজ করতে পারে??!!!!!!!!!!!
“কেনো, কি হয়েছে?” চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলো সোয়েব।
- কি আর হবে, উচ্ছাস এ ডায়াল করতে গিয়ে ডায়াল হয়েছে ইউকে তে। এতোবার কেটে দেবার চেষ্টা করছি, কিন্তু ‘এন্ড’ বাটন কাজ করছে না। কতবার বললাম ফোনটা......
- সর্বনাশ!!!!! কল চলে যায়নি তো?
- মিসকল গেছে মনে হয়
- বলিস কি!!!!
- কেনো রে? ওইটা কার নাম্বার? এতো চমকে ওঠার কি আছে?”
কি আর করা, যা করে ফেলেছে তা তো আর ফেরানো যাবে না, নীরব দর্শক হয়েই সে বসে থাকলো। রাসেলের কথা বলা শেষ হলে যখন ফোন আবার সোয়েবের হাতে ফিরলো, সে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলো, ‘Sorry, it was a mistake’
কিছু সময় পর পাল্টা বার্তা আসলো, ‘You should mend your ways. Stop disturbing me.’
ব্যাস, বারোটা বেজে গেলো। কি ঘটলো, আর ওইপাশে কি ভেবে বসে থাকলো!!! এখন সে কি করবে? ফোন করবে? কিন্তু যদি না ধরে কিংবা ফোন পেয়ে আরো বিরক্ত হয়? সব ভেবে চিন্তে সোয়েবের মনে হলো, আরেকটা মেসেজ পাঠানোই একমাত্র সমাধান। সে আবার মেসেজ পাঠালো এই লিখে, ‘Sorry again, it was really a mistake. I’ve no intention to disturb you’
এরপর পাল্টা বার্তা আসলো, ‘Don’t try to be innocent. If you are not intended to disturb me, why you saved my number? Try to grow some sense and oil on your own machine’
নাহ, সোয়েবের বিপদ আপাতত কেটে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সে এবার লিখলো, ‘Don’t know, why I’m unable to make you believe that, the miscall was not intentional. I’m using a faulty cell phone set. So, this type of accident happens very frequently. And finally, saving your number was not to disturb you, I thought any of my relatives is making fun of me. If I’ve disturbed you right now by saying sorry, I’m sorry again.’

কি হলো এরপর কে জানে, আর কোন প্রত্যুত্তর আসলো না। সোয়েব অবশ্য একটু রেগে আছে এখন। তার ঝাল বোধহয় রাসেলের উপর পড়তে যাচ্ছে এখন।
“ব্যাটা অথর্ব, তোর জন্যে আজ এতো কথা শুনতে হলো!” চেচিয়ে উঠেছে সোয়েব।
“কেনো? আমি কি করলাম? কার কাছে কথা শুনতে হলো? কখন শুনলি?” খুব নির্লিপ্তভাবেই রাসেল উত্তর দিলো। কিন্তু ফলাফল হলো সুদূর প্রসারী। কারণ, সোয়েবের মুখ অন্ধকার হয়ে যেতে দেখেছে সে। তাই আবার জিজ্ঞাসা করলো,
-দোস্ত, কার নাম্বার ওইটা? দে, আমি আবার ফোন করে সরি বলে দেই।
-না, লাগবে না।
-কার ফোন নাম্বার ওইটা? মিসকল গেলে কথা কেনো শুনতে হবে?
-বাদ দে। যা হওয়ার হয়েছে।
-না না, তা হবে না। আমার জন্যে তুই কথা শুনবি তা হয় না। ফোন দে।
-দোস্ত, বললাম তো লাগবে না। আমি সরি, তোর সাথে এইভাবে কথা বলার জন্যে।
- সরি বলার দরকার নেই। তবে কাজটা তুমি ঠিক করলে না বন্ধু।
-রাগ করলি?
-মেয়েটা কে, বন্ধু?
[রাসেলের শেষ প্রশ্ন শুনে সোয়েবের মুখ হার্ট বিটের সময় হার্ট যেভাবে সংকুচিত হয়, ঠিক তেমনিভাবে ছোট্ট হয়ে গেলো।]
-ক.ক..কোন মেয়ে?
-সেই মেয়ে, যার নাম্বার তোমার ফোনে, যে তোমারে কথা শুনাইছে।
-কি…কি বলিস?
-দোস্ত, তোতলাইতে হবে না। পরে বললেও হবে। কিন্তু সাবধানে থাকিস। কারন তোর তো আর খুব বেশি মেয়েদের সাথে কথা বলার অভ্যাস নেই।
-মানে?
-মানে, নিজের অনুভুতিগুলো একটু নিয়ন্ত্রনে রাখিস।
রাসেল চলে গেলো। সোয়েব আর কি করবে, বিগত কয়েক মিনিটে যা ঘটে গেলো, তাই নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো।
রাসেল বুঝল কিভাবে যে এটা কোন মেয়ের নাম্বার? সোয়েবের আচরন কি ওর মনে কোন সন্দেহ জাগিয়েছে? রাসেল কি সব বন্ধুদের বলে দেবে?

ধূর, কি বলবে? কিছু ঘটলে তো বলবে। অযথা চিন্তা না করে নিজের কাজে মনযোগ দেয়াই ভালো। কিন্তু মেয়েটাই তো মেজাজ বিগড়ে দিলো। মেয়েগুলো এমন হয় কেনো? ভালো কথা বলতে গেলেও মনে করে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। ভুলটা সোয়েব করেছে মেসেজ পাঠিয়ে। চিন্তা করে আর কি হবে?
সারাদিনে সোয়েব এই ঘটনা ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করলো। না পেরে সে তার প্রিয় উপন্যাস, ফিওদর দস্তয়েভস্কি রচিত ‘বঞ্চিত-লাঞ্চিত’ আবার পড়া শুরু করলো। এই বইটা পড়া শুরু করলে সোয়েবের আর কিছু খেয়াল থাকে না। প্রথমবার পড়ার পর সে ভেবেছিলো, ‘নিজের ব্যর্থ প্রেমের গল্প একটা মানুষ কিভাবে এতো চমৎকারভাবে লিখতে পারে?’ কিন্তু ইদানিং তার মনে হচ্ছে, নিজের জীবনে না ঘটলে এমন ঘটনা এভাবে কেউ লিখতে পারে না। তবে লেখকের সীমাহীন ভালোবাসা উপেক্ষা করে নাতাশার চলে যাওয়া কখনোই ভালো লাগে না সোয়েবের। আজ এই ঘটনা তার কাছে আরো বেশি তিক্ত লাগল। আবারো মনে হতে লাগলো, “মেয়েরা এমন কেনো? সবসময় মনে করে ছেলেরা তাদের মনের ঠিকানা ধরতে পারে না।”

না, এই বই আজকে আর সে পড়তে পারবে না। মন আজ বড় অস্থির। অদৃশ্য কারো উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।

রাত প্রায় দশটা বাজে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কেবল নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তখনই আবার ফোন।
................................................................................ [চলতে পারে]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×