somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেলাঃ অমরত্বের অমরগাঁথা

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে,
মানবের তরে আমি বাঁচিবারে চাই,
এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে,
জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।

অমর হবার বাসনা মানুষের চিরন্তন। অমরত্বের বাসনা যার মাঝে নেই, সে নিঃসন্দেহে মহামানব। পৌরানিক কাহিনীগুলোতে সেই প্রাচীনকাল থেকেই বর্নীত হয়েছে অমরত্ব বিষয়ক কত ঘটনা। যুগে যুগে কত মানুষ মাথা নষ্ট করেছে অমর হবার রাস্তা খুঁজতে গিয়ে। অনেকে আবার রাস্তা খুঁজেও পেয়েছেন। অনুধাবন করেছেন, মানব কল্যানে জীবন ব্যয় করাই অমর হবার একমাত্র উপায়। নশ্বর দেহকে ভুলে নিজ কর্মগুণে তারা অমর হয়ে থেকেছেন।

তবে এই উপায় ছাড়াও অমর হয়েছে হেলা।

হেলা একটি কোষের নাম, যা যুগান্তরে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে মেডিক্যাল সায়েন্সের বিভিন্ন পরীক্ষায়। এটিই সম্ভবত চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত সব থেকে পুরাতন মানব কোষ।



চিত্র১ঃ স্ক্যানিং ইলাক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে হেলার ছবি

এই কোষ প্রথম সংগ্রহ করা হয় যার শরীর থেকে, তার নাম হেনরিয়েটা লাকস। হেনরিয়েটা সারভিকাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন ১৯৫১ সালে। তার শরীর থেকে এই কোষ সংগ্রহ করেন জর্জ অটো গে। অটো এই কোষের নমুনা সংগ্রহ করেন ১৯৫১ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারী। আর হেনরিয়েটা মারা যান একই বছরের ৪ ঠা অক্টোবর।


চিত্র২ঃ হেনরিয়েটা লাকস

কি এমন বিশেষত্ব ছিলো এই কোষের, যা এটিকে অন্য সকল কোষ থেকে আলাদা করেছে? তা হচ্ছে এই কোষের 'অমরত্ব'।
কোষ বিভাজন মানব দেহের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বার্ধক্যে উপনীত হবার পর এই পক্রিয়া কমে আসতে থাকে এবং জীবনের সমাপ্তিতে এই ঘটনারও সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু অটো লক্ষ্য করেন, এই কোষের বিভাজন থামে না। অসীম কাল পর্যন্ত বিভাজিত হয়ে এই কোষ তার সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলে।

অটো এই কোষের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর নমুনা বিভিন্ন গবেষণার কাজে দান করা শুরু করেন। এবং এই কাজ তিনি শুরু করেছিলেন হেনরিয়েটার মৃত্যুর আগেই। ফলস্বরূপ হেনরিয়েটা এবং তার পরিবারবর্গ এই কাজে অটো কে বাঁধা প্রদান করতে থাকে।

এই কোষ সর্ব প্রথম 'ইন ভিট্রো' তে সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়।

'ইন ভিট্রো' বলতে এমন এক জৈবিক পরীক্ষাকে বুঝানো হয়, যেখানে মানব দেহের কোন অঙ্গের অংশবিশেষ কে তার পারিপার্শিক অবস্থা থেকে আলাদা করে সেই অংশের উপর পরীক্ষা চালানো হয়, যাতে করে পরীক্ষা লব্ধ ফলাফল পরবর্তীতে ঐ অংগের উপর প্রয়োগ করা যায়।

হেনরিয়েটার নামানুসারেই তিনি এর নাম দেন 'হেলা'। অটো এই কোষের নমুনা এই ভেবে দান করেন যে, এটি হতে পারে গবেষোণার জন্যে এক নতুন মাইলফলক। তার এই দানকে হেনরিয়েটার পরিবার সোভন মনে করেনি। তাই তারা অটোকে এই নমুনা কোষের সংখ্যাবৃদ্ধির ব্যাপারে তাদের মতানৈক্যের কথা জানিয়ে দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্দা অটো শুধু তাদের এই পরোক্ষ নিষেধকে অবজ্ঞাই করেননি, তিনি এই কোষের বাণীজ্যিকীকরণ করেন।

ফলে ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। the Supreme Court of California এই মর্মে রায় দেয়ঃ 'a person's discarded tissue and cells are not their property and can be commercialized.'

তারপরও হেনরিয়েটার নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে স্থির থাকার চেষ্টা করেন অটো। এজন্যে প্রচার করে দেয়া হয় যে, হেলার নামকরণ করা হয়েছে 'হেলেন লেইন' এর নামে। কিন্তু
প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যানে হেনরিয়েটার মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই তার আসল নাম-পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে।

এবার জেনে নিই, মানব সভ্যতার কি কি উপকারে এসেছে 'হেলা'

Jonas Edward Salk ১৯৫০সালে সর্বপ্রথম সফল পোলিও ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন। এই ভ্যাক্সিন সাফল্যের সাথে পরীক্ষা করা হয় হেলার উপর। এরপর থেকে হেলাকে ব্যবহার করা হয়েছে ক্যান্সার, এইডস সহ আরো অনেক রোগ বিষয়ক গবেষণায়। মানব দেহের উপর তেজস্ক্রিয়তা ও ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাব অনুসন্ধানেও ব্যবহৃত হয়েছে হেলা এবং আজও ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।

যেহেতু ক্যান্সার আক্রান্ত মানবদেহ থেকে এই কোষ সংগ্রহ করা হয়েছিলো, ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণাতেই এর ব্যবহার হয়েছে সর্বাধিক।

হেলার সকল কোষের উৎস-ই হেনরিয়েটার শরীর থেকে অপসারিত সেই টিউমার।আজও চলেছে হেলার বিভাজন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে হেলা, বিভিন্ন গবেষণাগারে। ভয়ানক সব রোগের শ্ত্রু হিসাবে আজও ব্যবহৃত হয়ে চলেছে মানুষের দীর্ঘায়ূ অর্জন করার সংগ্রামে।

অমর হয়েছে হেলা। সেই সাথে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, অমর করেছে হেনরিয়েটা ও জর্জ অটো গে নাম দু'টিকেও.............................


চিত্র৩ঃ জর্জ অটো গে

মেডিক্যাল সায়েন্সের উপর ব্লগ লেখা আমার জ্ঞান বহির্ভুত। হেলার ঘটনা আমার মনকে নাড়া দেয়, তাই উইকিপিডিয়া সার্চ করে নিজের মত বঙ্গানুবাদ করার চেষ্টা করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×