সব কাজ কি আর JIT তে করলে হয়? এই যে, ইচ্ছাকৃত ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে এখন ইফতারটাও কিনতে পারলাম না। সিএনজি তে বসে ভাবছিলাম, “আগে ট্রেনটা ধরি, পরে ক্যান্টিন থেকে ইফতার করে নিলেই হবে।” তখন কি আর জানতাম, ইফতারের আগে ক্যান্টিনের লোকেরাও ভেগে যাবে?
শুধু শুধু এতো তাড়াহুড়া করলাম। একেবারে নিরিহের মত দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা এক্সপ্রেস। নিশ্চয় ইফতারের আগে ছাড়বে না। কি মুশকিল!আসার সময় দেখে আসলাম, ষ্টেশনের দোকানে কোন কিছুই নেই চা ছাড়া।
কি আর করা, বসে বসে সরকারের মুন্ডুপাত করছিলাম, ক্যান্টনমেন্ট ষ্টেশনকে শেষ স্টপেজ বানানোর জন্যে। কমলাপুর হলে তো কথাই নেই, কমছে কম বিমানবন্দর হলেও আমার আজকে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হত না।
নিজের আসন দেখে বসার একটু পরেই এক বৃদ্ধ এসে আমার সামনের আসনে বসলেন। অশীতীপর বৃদ্ধ। বসেই প্রশ্ন করলেন, ইফতারির কত বাকী?
আমি উত্তর দিলাম, খুব বেশি না। মিনিট দশেক।
খুব বেশি জোরে বলিনি, তবুও শুনতে পেয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে তার শ্রবন শক্তি এখনো বার্ধক্যে পৌছাতে পারেনি। ভালো। এমনটা সচরাচর দেখা যায়না।
আমি ভাবছি, কি করা যায়??? পানির বোতল ই একমাত্র ভরসা।
জোরে বেজে উঠলো লম্বা হুইসেল। চিত্রা এবার ছুটবে। প্রথম ধাক্কায় আবার পানির বোতল না পড়ে যায় চিন্তা করে আমি বসে পড়লাম সিটে, হাতে ধরে রাখলাম বোতল। প্রত্যেকবার ঈদের সময় টিভিতে দেখায় একই চিত্র, ‘বাড়ি ফিরছে মানুষ, সবার মনে একই চিন্তা, এই শহর আমার নয়।’
আমি অবশ্য কোন শহর কার, তা নিয়ে চিন্তিত না। আমার শহরে আমি ফিরছি এটাই সব থেকে বড় কথা। খুলনা-যশোরের মানুষের দূর্নাম, তারা অতিরিক্ত ‘হোম সিক’, কথা মিথ্যা না। আমার কাছে হোম সিকনেস কে দোষের থেকে গুন বলেই মনে হয়।
চিন্তার রশি আপাতত টানতেই হলো। আযান দিচ্ছে।
ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক শেষ করে দিলাম। বাকীটা থাকুক আপাতত। কখন কোন কাজে লাগে বলা যায়না। বাংলাদেশ রেলওয়ের টয়লেটেও সবসময় পানি আশা করা যায়না।
সামনের বৃদ্ধ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাবা, তোমার ইফতার কই?”
উত্তরে আমি বোতল উঁচু করে দেখালাম।
-এই টুকু পানি খাইয়েই তুমার হইয়ে যাবে? নেও, আমার থেকে একটু শিয়ার করো
- নাহ, আমার খাওয়া শেষ।
- ভয় পাচ্ছো? অজ্ঞান পার্টির লোক কিনা আমি? বাবারে, আমার যে বয়স, তাতে একা একা এতো দূরের পথ পার হইয়ে জায়গামত পৌছানোরই ভরসা নেই, তার উপর তুমার মত লম্বা-চওড়া একটা মানুষরে অজ্ঞান কইরে আর বিপদে পড়তি চাচ্ছি না। নেও। ইফতার নিয়ে এতো চিন্তার কিচ্ছু নেই।
ভালো সমস্যা তো। অজ্ঞান পার্টির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না। দেখাই যাচ্ছে, পাত্রে রাখা সকল কিছুই হোমমেড। কিন্তু উত্তরে কিছু একটাতো বলতে হবে। মাথায় আসছে একটা, দেখি কাজ হয় কিনা….
- আঙ্কেল, আমি ইফতারে শুধু পানিই চালাই। ডায়েট কন্ট্রোলে আছিতো, তাই।
- বুঝলাম, তুমি খাবা না। তবে বাবা, এই বয়সে ঐসব লাগে না। কাজ-কর্ম একটু বাড়ালিই হইয়ে যায়
- আপনার কথাও ঠিক
- সেহেরির সুমায় কি করবানে? খালি পানি?
- না, ব্যাগে আপেল আছে অনেক গুলো।
আমি ব্যাগ খুলতে যাচ্ছি দেখে বৃদ্ধ আবার বলে উঠলেন, “অযথা কষ্ট করতিছো, আমার একটাও দাঁত নেই”
নাহ, আমি জলজ্যান্ত একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার বসে আছি, যাকে ফাউল করার আগে সবাই চিন্তা করে ‘নিজের পা না ভেঙ্গে যায়, সেই আমাকে কাটিয়ে একের পর এক গোল দিয়ে যাচ্ছে এক অশীতীপর বৃদ্ধ!!! সহ্য করা যায়???
ইতিমধ্যে চিত্রা এক্সপ্রেস বিমানবন্দর ষ্টেশন ছেড়ে এসেছে। ঢাকার ব্যস্ততা এখন পিছে। সামনে কয়েকটা দিন অপরিসীম আনন্দের ডাক। ফিরে যাচ্ছি সেই চিরচেনা চার দেয়ালের মাঝে, যেখানে আমার জন্যে অপেক্ষায় থাকে তিন জোড়া চোখ। দূর থেকে আমাকে দেখে ছুটে আসে একটা চতুষ্পদ প্রাণী। সাধারণ এক দেশী কুকুর। কিন্তু শখ করে লরা ঈঙ্গলসের কুকুরের নামে নাম রাখা হয়েছে ‘জ্যাক’। লরা’র জ্যাকের মত না হলেও জ্যাকের মধ্যে আজব এক গুন আমি লক্ষ্য করেছি। আমার কাউকে ভালো লাগছে না, সেটা আমার আচরনে প্রকাশ না করলেও জ্যাক ঠিকই টের পেয়ে যায়।
বাড়ির এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গালো বেরসিক টিটি। “টিকেট দেখি”
টিকেট বের করছি আর ভাবছি, হেড়ে গলাটা আরেকটু পরে চালালে কি এমন ক্ষতি হতো? ঢাকা থেকে উঠে কেউ কি আর জয়দেবপুর নামে??? যত্তোসব!
আরেকজন টিটি আমার সামনের বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলেন। কি আশ্চর্য ঘটনা। ঈদের আগে আগে এতো সিট ফাঁকা কেনো?
- “টিকেট নাই” নির্লিপ্তভাবে জানালেন বৃদ্ধ।
- “নাই মানে? মষ্করা করেন? এক পা কবরে, তাও ভালো হবেন না আপনারা?
- আমার টিকেট লাগে না
- উউউউউউহ, উনি দিল্লিশ্বর আকবর। টিকেট লাগে না। টাকা বের করেন। মোট ৪৭০ টাকা
- টাকা লাগবে না। আমি মুক্তিযোদ্ধা
গন্ডগোল ভালো লাগছিলো না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। বাইরে অন্ধকারের অসীমতা আমাকে সব থেকে দূরে রাখছিলো। কিন্তু বৃদ্ধের শেষ কথাটাতে আমি সহ সম্পূর্ণ কামরার সকল যাত্রীর চোখ তার দিকে ঘুরে গেলো।
আটকে গেছে সময়। সবাই তাকিয়ে আছে বৃদ্ধের দিকে, বৃদ্ধ তাকিয়ে আছে সরাসরি টিটির চোখে। গর্বিত দৃষ্টি, সকল অহংকার চূর্ণ করে দিতে ঐ দৃষ্টিপাতই যথেষ্ট। কোন ভুল নেই, অবশ্যই এ এক মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টি। সবাই থমকে গেছে।
সবার আগে স্বাভাবিক হলো সেই টিটি, যে আমার টিকেট চেক করেছিলো। সে বললো, “যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার কার্ড আছে? নাহলে হবে না, জয়দেবপুর নেমে যাবেন, নাহলে...............”
এবার দ্বিতীয় টিটি কথা বললো, “কার্ড লাগবে না। চাচা, আপনি বসেন। কিন্তু এই সিটের যাত্রী আসলে আপনি কি করবেন?”
বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন, যে কাজটি আমি করছিলাম কয়েক মূহুর্ত আগে। কিছুক্ষণ আগের সেই এটম বোমা দৃষ্টি আর নেই। সেটা উড়ে গিয়ে কিছুটা অসহায়ত্বকে জায়গা করে দিয়েছে।
টিটি ২ জন যখন চলে গেলো, বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা তখনো বাইরে তাকিয়ে আছে।
আমার প্রিয় উপন্যাস ‘ক্রাইম এন্ড দ্যা পানিশমেন্ট’ এ লেখক বলেছিলেন এই দৃষ্টির কথা, “বৃদ্ধ খুব শুষ্কভাবে হাসলেন। আলোক বর্ণালী ভরা কোন আসরে এক টোকাই হঠাৎ ঢুকে পড়লে, অনধিকার প্রবেশের অপরাধে তাকে তাড়িয়ে দিলে, সে এভাবেই হাসে। বোঝা যায় এই চোখে একদিন ছিলো অহংকারের নিত্য আনাগোনা। কিন্তু তার কিছুই আজ অবশিষ্ট নেই।”
বইটা আমি পড়েছি কতবার তার হিসাব নেই। কিন্তু হাজার হাজার দূর্বোধ্য বিষয়ের সাথে এই দৃষ্টির ব্যাপারও আমি বুঝিনি। আজ বুঝলাম, বার্ধক্যে উপনীত এই সূর্য্য সন্তানের প্রথমে দৃষ্টি পরে হাসি দেখে।
আমার ঘোর তথনো কাটেনি। এই লোকটা, যার অবদানে আজ এই দেশ, মাটি সব পেয়েছি, তাকে নিয়ে একটু আগেও আমি কোন ভালো কথা ভাবিনি। বরঞ্চ আমার দিকে সে সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলো, অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়েছি।
সম্পূর্ন অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সিট কতক্ষণ ফাঁকা থাকবেনে বলতি পারো?”
আমি তখন বরফ হয়ে গেছি। শরীরের ভিতরে কোথার থেকে একটা অপরাধবোধের স্রোত বের হয়ে মিশে যাচ্ছে সম্পূর্ণ চিন্তায়। অনেক কথাই বলতে চাইছি, জিজ্ঞাসাও করার আছে অনেক। কিন্তু আমার ঠোট নড়ছে না। অনেক কষ্টে উত্তর দিলাম, “সর্বোচ্চ ঈশ্বরদী পর্যন্ত। কোথায় যাবেন আপনি?”
- ঈশ্বরদী গেলি বাকীটা হাইটে হাইটে পার করে দিতি পারবানি
- হাটতে হবে না। কিছু একটা ব্যবস্থা করা যাবে তখন
[বৃদ্ধ আর কোন কথা বললেন না। আমিও না। অনেক্ষণ চুপ করে থেকে আমি আবার আমার চিন্তার জগতে চলে গেলাম।]
বাড়ি যাবার সময় হলে জন ডেনভারের গানটা মনে পড়ে, ‘কান্ট্রি রোডস টেক মি হোম…..’
তবে ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়াতো দেখিনি, জানিনা কি সেই সৌন্দর্য্য। তবে আমার জন্যে আমার সাত নাম্বার ঘাট ই যথেষ্ট। আর নদীর ওপারে, কাটাবন, সেখানে গেলে আমার মন যত খারাপ থাকুক, চিন্তা যতই বিক্ষিপ্ত থাকুক, সব ধুয়ে যায় নদীর ঘোলা পানিতে।
কেনো এতো ভালো লাগে জায়গাটা? একদিকে ভৈরবের স্রোত নেমে আসছে ভাটিতে, তার সাথে মিশেছে রূপসার ঘোলা পানি। আর এই দুই মহারথীর মিলনমেলা থেকে আরেকটা নদী ছুটে চলেছে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের দেশ বরিশালে। যেনো ৩ ভূবনের মিলন মেলা। আর এই আত্রাই নদীই বোধহয় প্রাচীন ভৈরবের শেষ চিহ্ন, যার প্রবাহ ছিলো পূর্ব থেকে পশ্চিমে, যার তীর ধরেই গড়ে উঠেছিলো খলিফাতাবাদ – জাহানাবাদ শহর দুটি । সেই নদী পথ ধরেই মির্জা সহন এসেছিলেন প্রতাপাদিত্যকে গ্রেপ্তার করতে। তার সেই অভিযানের কাহিনী নিয়েই রচিত হয়েছে ‘বাহারীস্থান’,
একজন হবু প্রকৌশলীর জন্যে ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামানো কি ধৃষ্টতা? না বোধহয়। কিন্তু খুব বিরক্ত লেগেছিলো সেদিন, যেদিন শুনেছিলাম খুলনার ইতিহাস বিষয়ে সতীশ চন্দ্র মিত্র রচিত ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’ ব্যাতীত কোন ভালো সংকলন নেই। নিজের ইতিহাস নিয়ে এতো উদাসীন কেনো আমরা?
আচ্ছা, জীবনানন্দ রূপসাকে নিয়ে কবিতা লিখতে গেলেন কেনো? তিনি কি কাটাবনে বেড়াতে এসেছিলেন?
ধূর, আর ভালো লাগছে না। ঘুমানো দরকার।
যেই ভাবা সেই কাজ। আমি আমার হাতের কাছের লাইটের সুইচটা অফ করলাম। চোখ বন্ধ রেখে ঘুমানোর আগেই টের পেলাম একে একে সব লাইটই অফ হয়ে যাচ্ছে।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম কে জানে। হঠাৎ কেনো ঘুম ভাঙ্গলো তাও বুঝতে পারছি না। বলতে গেলে সম্পূর্ণ কামরা অন্ধকার। ২ লাইট জ্বলছে ২ মাথায়। তাতে অন্ধকার আরো ভৌতিক হচ্ছে। চলনবিলের মধ্যে দিয়ে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে নিরন্তর ছুটছে চিত্রা। সকাল হবার আগেই তাকে পৌছাতে হবে গন্তব্যে, সে কাজে মোটেই ফাঁকি দিতে চায়না সে।
প্রায় সকল যাত্রীই ঘুমিয়ে আছে বোধহয়। শুধু দুই জনের কথা শোনা যাচ্ছে। তাদের কথপকথন এরকমঃ
- দোস্ত, তোর মন খারাপ কেন?
- আর কইস না। চোর বাটপারে দেশটা ভইরে গেলো
- কেন? আবার কি হইলো?
- দেখিস না সব শালা মুক্তিযুদ্ধা?
- ও, কাকার কথা কচ্ছিস?
- তোর কাকা হয়? তোর কাকা এতো বড় বাটপার? টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠে?
- দেখ, মুক্তিযুদ্ধা কাকারে যা কবি ক। মাগার আমার কাকারে নিয়ে কিছু কলি খবর আছে কইয়ে দিলাম
- ঘোড়ার আন্ডা করবি তুই। আমার যুদ্ধা কাকা আছে না?ও কাকা, কাকা,… ও মুক্তিযুদ্ধা কাকা
যথেষ্ট হয়েছে। আর আমার সহ্য হলো না। উঠে দাঁড়িয়ে লাইটের সুইচ দিলাম। সোজা তাকালাম সেই দিকে, যেদিক থেকে কথাগুলো আসছিলো। এই সময়ে বৃদ্ধ আমার হাত ধরে ফেললেন। সামলে নেয়ার ইঙ্গিত।কিন্তু সেদিকে নজর দেয়ার টাইম আমার নেই।
কারন? আর কোন কথা শুনতে পাচ্ছি না । আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে সুইচ দিতে দেখেই চুপ হয়ে গেছে রাজাকারের দল।
ধূর, এরকম একতরফা কিছু ভালো লাগে? আমি আরো কোথায় ভাবছিলাম ছুটে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করব, স্কুলে থাকতে মারামারির অভ্যাসটা আবার একটু ঝালিয়ে নিতাম। তা না, ছাগলগুলো চুপ করে গেলো।
কিন্তু কিছু একটা করতে তো হবেই। তাই আমি সজোরে হেসে উঠলাম। একেবারে আলিফ-লায়লা হাসি। যাত্রীদের ঘুম ভাঙ্গবে? ভাঙ্গুক। নাহলে শয়তান চিনবে কিভাবে?
হাসি থামানোর পর পূনরায় আসন গ্রহন করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ঘুম থেকে উঠলেন কখন?”
- আমিতো ঘুমাইনি বাবা। তুমি ঘুমাইছো অনেক। খুব ক্লান্ত নাকি তুমি?
- তা একটু আছি। আপনি আমাকে থামতে বললেন কেনো?
- ওরাতো দুইজন
- তো? আপনি এতো ভীতু? সত্যিই আপনি মুক্তিযোদ্ধা?
- আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধা
শেষের কথাগুলো বলার সময় তিনি তার ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করলেন। বুঝতেই পারছি কি হতে পারে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার কার্ড!!!!!
আবার গোল খেয়েছি আমি। আত্মঘাতী গোল।
কিন্তু এই গোল খাওয়াতে কোন গ্লানী নেই।
রমজানের এক রাতের জন্যে কি এটাই যথেষ্ট নয়? মুক্তিযোদ্ধার দাম্ভিক হাসি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার কার্ড, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে সহযাত্রী হিসাবে পাওয়া, সব মিলে আমি তখন এতো বেশী পূলকিত, মনে হচ্ছে আমি বোধহয় স্বপ্নের ঘোরে আছি। উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের ‘আ মিড সামার নাইটস ড্রিম, কোথা থেকে কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু সবই উপভোগ করছি।
শেক্সপীয়ারকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। যখন ঘুম ভাঙ্গলো, তখন চিত্রা এক্সপ্রেস কোটচাঁদপুর ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সামনের সিটে সেই মুক্তিযোদ্ধা আর নেই। সামনের সবগুলো সিটে মানুষ বসে আছে, আমার পাশের ২ টাও ফাঁকা নেই।
কোথায় গেলেন তিনি? নেমে গেলেন নিজ গন্তব্যে? নাকি তাকে কেউ টিকেটের অধিকার ফলিয়ে উঠিয়ে দিয়েছে?
**** কখনো আর জানা হয়নি এই প্রশ্নের উত্তর। কেটে গেছে ৪ টি বছর। জানি না সেই মানুষটি কোথায় আছেন, জীবিত আছেন নাকি পরপারে চলে গেছেন। তবে যেখানেই থাকুন না কেনো, আবার যদি দেখা হয় কখনো, যদি না ও হয়, একটা কথাই শুধু বলার আছে আমার, “হয়ত সেদিন আপনার অপমানের প্রতিবাদ করতে পারিনি, কিন্তু আপনার চোখে সেদিন যে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক দেখেছিলাম আমি, সেই দৃষ্টি সারা জীবন বিচরন করবে আমার চিন্তা জগতে। সময়ে-অসময়ে অনুপ্রেরণা দেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার।******