কুয়ালালামপুর থেকে গত ১লা সেপ্টেম্বর ২০২২, দেশে ফিরছিলাম।
US-Bangla Airlines ফ্লাইটটি আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ঃ১৫টার দিকে বাংলাদেশের আকাশসীমায় পৌছানোর মিনিট দশেক পর থেকেই একটি বিষয় আমাকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ও রাগান্বিত করে তুলছিল। আগে বেশ অনেকবারই মিডিয়াতে পড়েছি যে বিশেষ করে রাতের ফ্লাইটের বৈমানিকেরা একটি বিষয়ে প্রায়শঃই তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন আর তা হল ভূমি থেকে আকাশে উড্ডীয়মান বা অবতরনকারী বিমানগুলির দিকে লেজার লাইটের প্রক্ষেপণ বিষয়ে। এই লেজার লাইটের আলো অতিমাত্রায় উজ্বল বা তীক্ষ্ণ বলে এটি সরাসরি পাইলটের চোখে এসে পড়লে বৈমানিকেরা স্বল্পসময়ের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন বা এমনকি স্থায়ীভাবে দৃষ্টিহীন হয়ে যেতে পারেন।
আমাদের ফ্লাইটটি মায়ানামারের রেঙ্গুন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের হাত থেকে ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাছে হস্তান্তরের পর পাইলট যাত্রীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণায় সেটি জানিয়ে দেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর থেকেই বিরাম্বনাটি শুরু হয় এবং আমার সিট জানালার পাশে হওয়াতে ঘটনাগুলি স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। ঢাকায় অবতরণ করার আগে মোটামুটি ৪০ মিনিটের ভিতর কম করে হলেও ২৫-৩০ বারের মত আমাদের বিমানের দিকে লেজার লাইট মারা হয়েছে। কোথাও কোথাও এমনও হয়েছে এক থেকে দেড় মাইলের ব্যবধানে দুই দিক থেকে দুইটি লাইট একই সময়ে মারা হয়েছে; এমন হওয়াটা কাকতালীয়ও হতে পারে।
দুঃখের বিষয়, সন্ধ্যার অন্ধকার বলে ঠিক কোথা থেকে এই লাইটগুলি মারা হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
তবে ইদানীংকালে আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যথেষ্ট আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি রয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেই, প্রয়োজনে Reconnaissance বিমান বা হেলিকপ্টারের সাহায্যে সন্ধ্যার পর ঢাকা বা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণকারী উড়োজাহাজগুলি্র গতিপথ অনুসরণ করলেই যেসব এলাকা থেকে লেজার লাইট মারা হয় সেগুলি চিহ্নিত করা যাবে এবং পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সাহায্যে উপদ্রবকারীদেরকে শনাক্ত করা যাবে। আমরা নিশ্চয়ই সম্প্রতি উত্তরার রাস্তায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মত আর কোন বেদনাদায়ক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবো না। Prevention is better than cure.
শিশু-কিশোর বা তরুণেরা শুধুমাত্র মজা করার জন্যই এটা করে থাকে - অজ্ঞতা বা উগ্র স্বভাবের ফলে। বাংলাদেশের বাজারে লেজার লাইট মোটামুটি সহজলভ্য এবং যে কেউই খুব সহজে কিনতে পারে। অথবা আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা দেশে ফেরার সময় তাদের আদরের সন্তান বা পরিবারের ছোট সদস্যদের জন্য উপহার হিসাবে এগুলি নিয়ে আসেন। কিন্তু এই লেজার লাইটের ক্ষতিকর মারাত্মক প্রভাবগুলি সম্পর্কে তারা যে অবগত নয় এর চেয়ে বরঞ্চ বলা ভাল যে তারা উদাসীন। মোটকথা - বড়/ অভিভাবকদের গাফিলতি বা উদাসীনতার কারণে ছোটরা আস্কারা পেয়ে পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এর কারণে ঘটে যাওয়া মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা থেকে যতদিন পর্যন্ত না তাদের নিজেদের কেউ হারিয়ে যাবে তার আগে তারা সাবধান হবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে একটা বিমান বিধ্বংস হলেতো কেউ একা মরবে না, ফ্লাইটের আরও ২৭০-৪৩০ জনের মত যাত্রী এবং বিমানকর্মীও মারা যাবে, সেই সাথে ততগুলি পরিবার চিরদিনের মত অসহায় হয়ে পরবে - সাথে যোগ হবে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার অন্ততপক্ষে ৯০-১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিমান মূল্য) এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও কয়েক মিলিয়ন ডলার।
শুধুমাত্র সরকারকে দোষারোপ কোন লাভ হবে না যে সরকার কেন এসব লেজার লাইটের আমদানি নিষিদ্ধ করে না। সরকারী নিয়মে এগুলি আমদানি করা নিষিদ্ধ হলে পরেও যতদিন পর্যন্ত না আমরা ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হব সরকারের একার পক্ষে সমাধান এনে দেয়া সম্ভব হবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


