ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকার সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তী নির্বাচনের খরচ মেটানো ও নিজেদের আখের গোছাতে তারা এ দুর্নীতির মহোৎসব শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং অন্য মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন_ এ বিশ্বাস সর্বস্তরে ছোটখাটো দুর্নীতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন গোপন কূটনৈতিক তারবার্তায় এসব কথা বলা হয়েছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওই তারবার্তায় বলা হয়, বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে এসে ২২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট, ভিসা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সমালোচিত কাজটি আবার চাঙ্গা করা সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্নবিদ্ধ ক্রয়কাজ। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার
ক্রয় কমিটিতে ২১ আগস্ট ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের আরও ১৯টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। এর মধ্যে দুটি বাদে সবক'টি প্রকল্পেরই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যদিও এগুলোর বিরুদ্ধে বড় বড় অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
তার বার্তায় বলা হয়, ব্যাপকভাবে মনে করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলে এবং জ্যেষ্ঠ কয়েক মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন বড় ধরনের কমিশনের বিনিময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ছিল পুলিশের জন্য রেডিও সরঞ্জাম ক্রয়ের দুটি দরপত্র। মনে করা হচ্ছিল, মার্কিন প্রতিষ্ঠান মটোরোলা তা পেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর পক্ষে তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে। কোকো কাজ করছিলেন সিঙ্গাপুর টেকনোলজিসের পক্ষে। দূতাবাসের সূত্র মতে, যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র প্রকল্পেও সিঙ্গাপুর টেকনোলসিজের বড় ধরনের ভূমিকা থাকার কথা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের বরাত দিয়ে মার্কিন তারবার্তায় বলা হয়, এ দুর্নীতি নজিরবিহীন এবং এর আগের আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল, তার চেয়ে ভয়াবহ। এতে বলা হয়, দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন লাগাম ছাড়া দুর্নীতির একটি বড় কারণ, প্রধানমন্ত্রীর দুই ছেলেসহ শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনের দুর্নীতি। বেশির ভাগ দুর্নীতি হচ্ছে শুধু অর্থের লালসা থেকে। যদিও আগামী নির্বাচনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করাও এর একটি উদ্দেশ্য। মার্কিন কর্মকর্তাকে তিনি আরও বলেন, এ মর্মে গুঞ্জন রয়েছে যে, 'রাজপুত্র' হিসেবে খ্যাত তারেক রহমান মালয়েশিয়ায় একটি বিনিয়োগে অনেক টাকা খুইয়েছেন, যার একটি বড় অংশ নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য রাখা ছিল। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয় বলে মনে করা হয়। তিনি রাজনৈতিক চাপের উদাহরণ হিসেবে যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিন্ডিকেট-বিরোধী উদ্যোগ থামিয়ে দেওয়া হয়, তার উল্লেখ করেন।
সূত্র: দৈনিক সমকাল (৯/৯/১১)