somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবলির জন্য চিঠি...

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বাবলি,

এই অতৃপ্ত যুদ্ধ সীমান্ত থেকে তোমায় লিখছি, হয়তো এমন ও হতে পারে এটা আমার জীবনের শেষ যুদ্ধ। যুদ্ধ জিনিষটাই এমন, প্রথম যুদ্ধও মাঝে মাঝে মানুষের শেষ যুদ্ধ বলে পরিগনিত হয়। একটা বুলেট অথবা একটা মর্টার সেল শেষ করে দিতে পারে সব স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষা। সে দিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান বলা চলে। এ আমার প্রথম যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ সীমান্তে পোড় খাওয়া এক মানুষ আমি। অনেক শরৎ অনেক বসন্ত চলে গেছে এখানে, জুলফিতে ধরেছে হালকা তামাটে রঙ। তবুও তোমার প্রতি অনুভুতি গুলো আগের মতোই আছে। আগের মতোই তীক্ষ্ণ ও উদ্বীপ্ত। হয়তো বছর দু বছরে একবার তোমার সংগ পাই বলে অথবা মাঝে সাঝে পাওয়া তোমার চিঠি গুলো এখনো অমলিন রয়েছে বলেই।

যেদিন নাগরিক জীবনের সুখ ত্যাগ করে এই সীমান্তে আবার ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সে দিন ই অনেক কিছু বদলে গিয়েছিলো আমার। আমাদের মেয়ে ঝিলাম কে ছেড়ে আসতে কতোটা কষ্ট হয়েছিলো তা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। তার ৩ বছরের কচি মুখে, বাবা বাবা ডাক টা এখনো কানে বাজে, এর পর যখন দেখা হলো মেয়ে আমার অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক বড়। এখন সে লিখতে পারে, নিজের হাতে ভাত ও মাখিয়ে খেতে পারে। এখনও আমি তার বাবা কিন্তু তবুও যেন অনেক দূরের মানুষ। নিজেকে মাফ করতে পারি নি বলেই হয়তো এমন হয়েছে। নিজের একমাত্র স্বন্তানকে ছেড়ে এক মহান আদর্শের জন্য যুদ্ধ সীমান্তে আসা এক ই সাথে যেমন আত্ন ত্যাগ এক ই সাথে এটা স্বার্থপরতাও বটে। আমি নিজের আদর্শের জন্য হয়তো একটু বেশিই স্বার্থপর হয়েছি।


সেবার যে দিন বাড়ি ফিরে এসেছিলাম, খেয়াল করলাম তোমার চোখের নিচের বলিরেখা গুলো ফুটে উঠেছে, এই একটা বছরেই যেন অনেক বেশি বড় হয়ে গেছো, বুড়ো হয়ে গেছো তুমি। এটা কী আমার বৈপ্লবিক রূপের কু-প্রভাব না তোমার সংগ্রামের প্রতিশ্রুত উপহার তা বুঝতে পারি নি। হয়তো বুঝতে চাই ও নি। তবে তুমি যতোই বুড়িয়ে যাও না কেন, সামনের দাঁত গুলো পড়ে ফোকলা হয়েই যাক না কেন, তুমি আমার কাছে সেই অষ্টাদশী অতিক্রান্ত বাবলি অথবা বুঁচিই থাকবে। থাকতে হবে বলে। কিছু কিছু আবেগে অথবা অনুভুতিতে কখনোই কোন পরিবর্তন আসে না তুমিও আমার তেমনই আবেগ।


সেবার যেবার তোমার আমার বিয়ে হলো সবার অমতে সে সময় কি বলেছিলাম মনে আছে তোমার? যদি বিয়ে করতেই হয় তবে তোমাকেই করবো। যৌন কর্মের জন্য বিয়ের দরকার নেই। যার সাথে আমি কথা বলতে পারি যার সাথে ভাগ করে নিতে পারি সাহিত্যের সূক্ষ্ণ রস আর শোক গুলোকে। যাকে শোনাতে পারি নেরুদা কিংবা দেরিদা, সে ই তো স্ত্রী, সে ই তো বউ হবার যোগ্য। তুমি তেমন ই একজন। আমি পড়ছি কাফকা আর আমার সঙ্গী মেতেছে বস্তা পচা ধারাবাহিকে তাকে কী স্ত্রী বলে? স্ত্রী সে ই যে আমার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারে, যার বিরহ আমায় আপ্লুত করে, যাকে আগলে রাখা যায় বুকের মনি কোঠায়। তা যদি বিয়ে না ও হয় তবুও সে স্ত্রী। অবশেষে সবাই মানতে বাধ্য হয়েছিলো। এ যে অকাট্য যুক্তি। সাহিত্যের ছাত্র না হয়েও আমি সাহিত্য করেছি। তোমায় ভালোবেসেছি।


সেবার যেবার ডক্টরেট করে ফিরে এলাম দেশে অনেক দিনের পর তোমার সাথে দেখা, এ কথা গুলো বার বার লিখেছি অনেক বার বলেছি তোমায় অনেক আবেগময় গোপন সময়েও মনে করিয়ে দিয়েছি তবুও এই স্মৃতি গুলো এখনো অক্ষয় অম্লান তা আবার বলতে দোষ হয় না। সে বার যেবার ডক্টরেট করে ফিরেছি দেশে, সাথে দু সুট কেস ভরা বই আর পান্ডুলিপি তোমার জন্য শুধু এক বাক্স চকলেট, তোমার কী মনে আছে, ঐ চকলেট তুমি সবাই কে দিয়ে হাতিয়ে নিলে আমার বই এর সুটকেস...। পাগল মেয়ে আমার চেয়েও বইকে ভালোবাসে। বই ই যেন আমার প্রতিযোগী। সেদিন আবার নতুন করে প্রেমে পড়েছিলাম তোমার তা আর বলা হয় নি কখনো।


আজ এ যুদ্ধ সীমান্তে হাতা গোটানো জলপাই উর্দি আর গোড়ালির দিকে ছিড়ে যাওয়া জলপাই পাতলুন পড়ে তোমাকে মিস করছি। ঝিলাম কে মিস করছি, ওকে বড় দেখতে ইচ্ছে করছে, ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে ওর ছোট্ট হাত গুলো নিয়ে খেলা করতে। নিজের স্বন্তানের শৈশব দেখতে না পাওয়া যে এক অভিশাপ এক পাপ তা আমি আজ হাড়ে হাড়ে বুঝি। ভয় পাই যদি কোনদিন সে প্রশ্ন করে আমার দূরন্ত শৈশবের সময় তুমি কোথায় ছিলে বাবা? আমি তোমার এই বুড়ো বয়েসে তোমার পাশে থাকবো। আমি যখন শৈশব কাটিয়েছি মায়ের হাত ধরে একা তখন তো তুমি তোমার দামি আদর্শের দোহাই দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছিলে। তুমি স্বার্থপর তুমি বাবা নও তুমি শুধু মাত্র একজন ভন্ড কম্যুনিস্ট।


বাবলি এবার আমায় থামতে হবে। পুরো সৈন্যদলকে সাজাতে হবে নতুন করে, আবার ঝড় এসেছে এই সবুজ সীমান্তে আবার লড়তে হবে আমায়। যদি বাঁচে থাকি তবে আবার চিঠি পাবে। মনে রেখো এ চিঠিতে যতোটা তোমার অধিকার আছে ততটুকুই অধিকার আছে আমাদের মেয়ে ঝিলামের। আমার আদরের অনুসূয়া দ্বীপাবলি ঝিলামের। এ চিঠি এ বিপ্লব এ স্বপ্ন এ যুদ্ধের সব কিছুর ভাগীদার আমরা। প্রবোধ দেবার মতোই শোনাবে তবুও বলছি। ভালো থেকো। আমার জন্য চিন্তা করো না। যদি কখনো না ফিরি তবে হাসি মুখে বলো উনি গেছেন এক মহান আদর্শের জন্য। উনি আমার কমরেড। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। লাল সালাম।

- ইতি
কমরেড মেজর হাসান
৯ম পদাতিক ডিভিশন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×