প্রিয় মৃণালিনী,
সময়ের স্রোতে অনেক বেলা বয়ে যায়, নদীতে জমে অনেক পলি। ও পলির কথা বলা যাবে না, সে তো মনে হয় তোমার বান্ধবী, কিন্তু এটা শুধুই পলিমাটি। একাবারে তোমার মনের জমিনের মতোই নরম। যেরকম নরম হওয়া আজকের দিনে কাপুরুষতা ও দূর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অনেক দিন তোমার সাথে দেখা হয় না, এক দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলুম, হাতে হাত রেখে চলে যাবো লাল পাহাড়ের দেশে। হ্যাঁ, লাল পাহাড়, চীনের লাল পাহাড় কী না জানি না। তবে গানের লাল পাহাড় তো বটেই। ‘লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গামাটির দেশে যা...’। মনে পড়ে যায় অনেক সময় আগে ‘চেয়ারম্যান মাউ’ এই লাল পাহাড় অতিক্রম করেছিলেন লাল বিপ্লবের উদ্দেশ্যে। রেড স্কয়ার রক্তে লাল হয়েছিলো ঠিক ই, কিন্তু বিপ্লব কী আদৌ সেই লাল রঙ মাখা জীর্ণ পতাকার কথা, শ্রমিক কিংবা কৃষকের কথা বলে কী না, সেই বিতর্কে তোমার সাথে আগেও আমি জিততে পারি নি আজ ও পারবো না। রাজনৈতিক কর্মী ও তাত্ত্বিক হয়েও তোমার কাছে হারাতেই যেন আমার বিশাল জয়।
অদ্ভুত সময়য়ের বুদবুদ গুলোর কথা ভাবো, শহুরে ল্যাম্পপোষ্ট আর তার স্নিগ্ধ সাদা আলো (চাঁদের রিপ্লেসমেন্টে), আর মানুষের কুঞ্চিত চোখের কথা পরোয়া না করে আমরা পড়াশুনা করে গেছি, প্রেম করে গেছি। প্রেম , ভালোবাসা, কিংবা মেক লাভ অথবা যৌনতা এই শব্দ গুলোর ডায়ালেক্টিস ধরতে গিয়েই আমাদের প্রথম ঝগড়া। হা হা হা, কী পরিমাণ পাগল আমরা, যা নিয়ে ঝগড়া করা উচিৎ মানে চাল ডালের স্বাভাবিক হিসেবের ঝগড়া, তা না হয়ে আমাদের ঝগড়া হয় এ্যকাডেমিক লেভেলে, তাত্ত্বিক পর্যায়ে। মাঝে মাঝে ভাবি, তোমার মাথায় ও মনে হয় আমার মতো ‘ছিট’ আছে তাই আমরা এখনো একে অন্যকে ভালোভাবেই সহ্য করে নিচ্ছি। না হলে কবে একে অন্যকে দা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতুম। কিন্তু তুমিও কুমড়ো নও আর আমিও দা কিংবা বটি নই। সুতরাং টিকে গেছি অনেক দিনের জন্য। আরো অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য।
জলদি ফিরে এসো এবার, অনেকদিন বই কেনা হয় না আমাদের। বই কেনা ও বই পড়া দুটোই আমাদের নেশা পর্যায়ে ছিলো। কিন্তু তুমি বখে গেছো এখন আর বই পড়তে চাও না। বই না পড়া আমাদের সংসারে একটা গর্হিত অপরাধ। যদিও তোমার এখন্য অন্য রোগ হয়েছে ‘ফিলিম’ দেখা। সিনেমা বলছি না, কারণ যা দেখো তুমি, ইয়াক, জঘন্য। ত্যারেনতিনো, সত্যজিত, মৃণাল বাদ দিয়ে কী না রাম গোপাল ভার্মা, একতা কাপুর। এর ওপর আদিভৌতিক ভুতের ছবি। তা ও যদি বুঝতাম ভয় পাওয়া যায় এমন ছবি, এখনকার উত্তর-আধুনিক (Post Modern) ভুত দেখলে আমার হাসি পায়। যাই হোক আর পঁচাচ্ছি না। তুমি বই পড়ো না এটা ভুল বললাম, চলচিত্র নিজেও বই, তবে অডিও ভিজ্যুয়াল আকারের বই, এটা পরাও ক্ষতিকর নয়।
যাই হোক, সীমান্তে যাওয়া হয় না, খাওয়া হয় না অনেক দিন। প্রায় এক মাস হয়ে গেলো তুমি ঢাকার বাইরে, তারতারি ফিরে এসো, জলদি, সু-সময় গুলো কাটছে দুঃসময়ের ঘোড়ে। ফিরে এসো এই ঘাসে, মাঠে এই জানজটে ঘেরা মিথ্যে কথার শহরে, শুধু মাত্র আমার জন্যেই। ভালো থেকো, ভালো রেখো...।
ইতি,
কাছের মানুষ।