বাইরে তখনো বরফ পড়ছে। দীর্ঘ শীতকালীন বরফ। ঘরের নরম বিছানায় শুয়ে বার বার বাইরের দিকে তাকাচ্ছি। সে বসে আছে বারান্দায়। হাতে গরম কফির মগ। আমাদের মতো ভিনদেশীদের জন্য এই সকল বড় শহর গুলোতে হিটারের হিট নষ্ট করা মহা পাপ, যেখানে আয় আর ব্যায় মেপে খরচ করতে হয়।
তার পর ও আমি ওকে কিছু বলতে পারি না। ডান বাম কোন কিছু না ভেবে, আমার মতো এক ক্যাবলাকান্তের হাত ধরে সাড়ে তেরো হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ঘর বাঁধা চা্রটিখানি কথা নয়। আরো পাঁচটি বছর আগের কথা। অনেক কিছুই বদলায় নি তখনো...।
আজ যে অনেক কিছু বদলে গেছে এমন নয়। সব কিছুই আগের মতোই আছে। মূল কথা এতো কিছুর পর ও আমরা পাশা-পাশি আছি। ভালো আছি। আছি কী? ভালো আছি কী না এই প্রশ্ন টা অবান্তর। আমরা ভালো আছি। কিন্তু তার পর ও একটা কিন্তু থেকে যায়।
ওকে দেখে আজ অনেক দিন পর রোমান হলিডে ছবিটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই অসহায় রাণীর কথা। সব থেকেও প্রটোকলে সে বন্দিনী অসহায়। আজ ওর অবস্থাও হার হাইনেসের মতোই। সকালে উঠে কাজের জন্য দৌড়ানো অফিসের পথে। ফিরে এসে সেই সন্ধ্যায় ঘর সংসার। কেমন কেমন যেন একটা সময় কাটে। নিরানন্দ সন্ধ্যা গুলো ভরিয়ে দিতে আমি মাঝে মাঝেই ল্যাব থেকে ফিরে আসি বিকেল হবার আগেই। সময় গুলো ভালো কাটে। সেই আট নাম্বার পুরান ঢাকার অলি গলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বুড়ো গাছ। বুড়ো বড় ভাইএর পাল। স্মৃতি রোমন্থন। এর মাঝে দুবার দেশে ফিরে গিয়েছি আমরা। হায় দেশ। হতাভাগ্য দেশ। রক্তপাত আর হানা হানি চলছেই নিত্যদিন। আমার মাথার উপর ফতোয়া দেয়া হয়েছে। ওর ও। দেশে ফিরে যেতে ভালো লাগে, সাথে লাগে ভয়।
হঠাৎ সে ডেকে উঠলো, এই যে শুনছেন, আমার চিন্তার রেখাপাত বন্ধ হয়। তার হাসিটা আগের মতোই আছে। অমলিন। এই হাসির বিনিময়ে আমি আমার সব কিছুই বিলিয়ে দিতে পারি। চুলোয় যাক যত্তোসব স্যাডিস্ট ভাবনা। সে ভালো আছে। হয়তো বা অভিনয় করেই ভালো আছে। আমি সেটা জানি এবং বুঝি। কিন্তু তার পরেও এই মৃদু হাসিটার বদলে আমার মাথা গেলে যাক। সে বললেই ফিরে যাবো দেশে। কিন্তু সে চায় না। হা হা হা। মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝা বড় ভার। আচ্ছা বাইরে যাবেন, চলুন না বরফে হাঁটি আগের মতো। আমিও সেটাই বলছিলাম। সে আর আমি এক সাথে বলে উঠলাম... কপিবাজ...।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১৭