গল্প গুলো জমে আছে। তারা ক্লিয়ারেন্স চাইছে। বেরিয়ে যাবার। শৃঙ্খলাবদ্ধ লেখকের মস্তিষ্ক থেকে তারা মুক্তি চাইছে। গল্প গুলোয় আছে শত চরিত্র। শত মৃত্যু, শত প্রেমের গল্প, শত শত বাস্তবিক যৌন দৃশ্য। গল্প গুলো বেরিয়ে যেতে চাইছে। তারা কলমের ডগায় ঝরনা হয়ে বেরিয়ে যেতে চাইছে, লেখকের সাদা কাগজের ময়দানে।
পরেশ সাহা আত্মহত্যা করেছেন। পত্রিকার পাতায় খবর টা ছোট করেই ছাপা হয়েছে। পরেশ তেমন কেউকেটা কেউ নন। একজন স্কুল মাস্টার। মরে গেছে আপদ গেছে। একটা স্কুল মাস্টারের পদ খালি হলো। সিনিয়র শিক্ষক ছিলো। মরে গেছে কারো প্রমোশনের জায়গা হয়ে গেছে। আবার আর একটা লোকের জন্য চাকরির একটা পদ ও খালি হয়ে গেছে। মানুষ মরে গেলে অনেক মানুষের সুবিধা হয়। অসুবিধা অল্প কয়েকজন মানুষের। কথায় বলে আপন মানুষের। মানুষ কখনোই আপন হয় না। মানুষ হয় নির্ভর্শীল। সমস্যা হয় সেই বেড়াল পরিবারটির যে পরিবারের কর্তা বিড়াল একমাত্র ইঁদুর ধরতে পারতো।
পরেশ মরে গেছে তার ইতিহাস শেষ। সাংবাদিকেরা তাকে ভুলে যেতে চাইবে। ভুলে যাবো আমরা। আরে দাদা নিজের বাপ মরলেও ৭ দিনের পর স্ত্রীর সাথে শুতে যান তো। বাপের কথা সে গরম সময়ে কী মনে পড়ে? কিন্তু পরেশ কে ভোলা গেলো না। কারণ পরেশের একটা দুনম্বরি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট বেরিয়েছে। দুনম্বরি মানে তার পরিবারের কেউ জানতো না। তাতে নাকি দু’ কোটি টাকা। একজন সামান্য স্কুল মাস্টার। দু’লাখ জমাতেই জীবন কাবার করে দেয়। আর এখানে কোটি! তা ও ডাবল। ওরে বাবারে। পরেশ কে ভুলতে দিচ্ছে না আমাদের সমাজ। পরেশের তৃতীয় পৃষ্ঠার ছোট্ট খবর আজ প্রথম পাতায়। পরেশের সুরৎহালের রিপোর্ট বেরিয়েছে। সাংবাদিক মহাশয় লিখেছেন ‘তার যৌনাঙ্গ বাম দিকে ঈষৎ বাঁকা’ এর পর কিছু কদার্য শব্দ দিয়ে তার বামপন্থী যৌনাঙ্গের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অন্য একজন খুঁজে পেয়েছেন পরেশের গোপন খেজুরের গুড়ের স্মাগলিং এর ব্যবসা। পরেশ কে আমি চিনি না, কিন্তু পরেশদের চিনি। তারা অল্প একটু টাকার জন্য নিজের জামাটা জুতোটা না কিনে ছোট্ট ব্যবসায় খাটায়। হয়তো স্ত্রীকে সামান্য সুখ দিতে অথবা স্বপ্ন দেখে শহরের থেকে একটু দূরে একটা জমি। সেখানে দাঁত পড়ে যাবার পর একটা বাড়ি অথবা একটা ফলের বাগান। যদিও বাস্তবতা বলে সেই ব্যবসা থেকে আসা দু চারশ লাভের টাকা স্ত্রীর কোমড়ের ব্যাথা কিংবা নিজের ছানি কাটাতেই চলে যায়। অল্প কজ’ন ই পায় সুখের নীড়। সেই সুখ আসে বড় অসুখের মাঝ দিয়ে।
আমাদের জীবন বাবুও স্কুল মাস্টার ছিলেন। একদিন টস্কে গেলেন, ট্রামের তলায়। এক হাতে মিস্টির পাকেট আরেক হাতে ডাবের ছরা। জীবন বাবু আত্মহত্যা করেছিলেন। অনেকে বলেন এ ছিলো নিছকই দূর্ঘটনা। হতে পারে। পরেশ সাহা ঝুলে গেছেন। জাস্ট ঝুলে গেছেন সিলিং থেকে। জীবন বাবু কবিতা লিখতেন। পরেশ কী লিখতেন? মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর কিছু শখ থাকে। এর মাঝে কবিতাও আছে। হয়তো কোন একদিন পরেশ সাহার কবিতার সংকলন বেরোবে। সে যাক’গে আসি দু কোটি টাকার কথায়। জীবনান্দেরও টাকা সরানোর অভিযোগ ছিলো। পরেশের দু’কোটি টাকার অভিযোগ। কেউ তাকে বানিয়ে দিচ্ছে স্মাগলার কেউবা সন্ত্রাসী কেউবা বিদেশী এজেন্ট। পুলিশ সোর্স খুঁজেছে। কিছুই পায় নি। পরেশের তদন্ত রিপোর্ট আবার চলে গেছে পেছনের পাতায়। ছ’সাত নাম্বার কলামের নিচের দিকে জায়গা হচ্ছে পরেশের। আদালতে কেস উঠেছে। পরেশের পেনশান আটকে গেছে। পরেশের পরিবার এখন সেই বিড়াল পরিবার যাদের কর্তাই শুধু জানে কি করে শিকার ধরতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৭