somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টোনহেঞ্জ [রহস্যময় প্রকৃতি-২ ]

২১ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আপনাদের আরও একটি রহস্যময় স্থানের কথা জানাব যার প্রকৃত রহস্য এখনো অজানা রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের সেই বিস্ময়কর স্টোনহেঞ্জের নাম হয়তো শুনে থাকবেন আপনি। এবার আমরা আলোচনা করবো বিস্ময়কর এই পুরাকীর্তিটি সম্পর্কে। ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ার (Wiltshire) সমতল ভূমির প্রায় ৮ মাইল উত্তরে স্টোনহেঞ্জ অবস্থিত। এতে বৃত্তাকারে বড় বড় দণ্ডায়মান পাথর রয়েছে এবং এগুলোর চতুর্দিকে মৃত্তিকা নির্মিত বাঁধ রয়েছে। স্টোনহেঞ্জের গঠন খানিকটা জটিল। এর বাইরের দিকে একটি বৃত্তাকার পরিখা রয়েছে। প্রবেশপথটির কিছুটা দূরেই রয়েছে মাটির বাঁধ। এ বাঁধের ভেতর চতুর্দিকে বেষ্টন করে আছে ৫৬টি মৃত্তিকা গহ্বর। পাথরগুলোর মধ্যে আরও দুই সারি গর্ত বেস্টন করে আছে। পাথরগুলোর গঠনের মধ্যে আছে দুইটি বৃত্তাকার এবং দুইটি ঘোড়ার খুরের নলের আকারবিশিষ্ট পাথরের সারি। এ ছাড়াও কতগুলো পৃথক পাথর রয়েছে অলটার স্টোন বা পূজা বেদীর পাথর বা শ্লটার স্টোন বা বধ্যভূমির পাথর।


প্রত্নত্ত্ববিদগণের ধারণা অনুযায়ী, বিশাল বিশাল পাথরের এই বৃত্তাকার জায়গাটি মানমন্দির হিসেবে ব্যবহার করা হত সে সময়, বিশেষ করে ঋতু চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহার করা হতো এটি। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, এটি ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং নবপোলীয় মানুষেরা ৩২০ ফুট ব্যাসের একটি বৃত্তাকার পরিখা খনন করেছিল হরিণের শিং ব্যবহার করে:-*:-*। তারপর ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে ৬০ টি ব্লুস্টোন দ্বারা খাড়া ভাবে নির্মিত হয় স্টোনহেঞ্জ। আর এটি নির্মাণ করা হয় ব্রোঞ্জ যুগে। সে সময় মানুষরা এসব পাথর নিয়ে এসেছিল তাদের কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে নয়, বরং সেগুলো আনা হয়েছিল ২৪০ মাইল দূর থেকে, এবং এসব পাথরের প্রতিটির ওজন ছিল প্রায় ৪ টন। স্টোনহেঞ্জের তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ প্রায় একশত বছর পর এর পাথরগুলো সাজানোর কাজটি করা হয়। এ সময় পাথরগুলো টেনে আনা হয় ২০ মাইল দূর থেকে এবং প্রতিটি পাথরের ওজন ছিল তখন প্রায় ৫০ টনের কাছাকাছি বা তারও বেশি। তারপর সেগুলোকে খাড়া ভাবে একটি বৃত্তের মাঝে স্থাপন করা হয় এবং তারপর বৃত্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলোর উপরে পাথর দিয়ে সরদল স্থাপন করা হয় এবং তারপরই নির্মিত হয় মূল স্টোনহেঞ্জ অর্থাৎ বর্তমান সময়ে আমরা যা দেখছি। আর এই স্টোনহেঞ্জের মাধ্যমেই সূর্যের অবস্থান দেখে সেই সময়ের মানুষেরা ঋতু নির্ণয়ের কাজটি করতো B:-) B:-)


প্রধানত তিনটি কারণে স্টোনহেঞ্জ নির্মিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দে যখন প্রথম স্টোনহেঞ্জের নির্মাণ কাজ শুরু হয় তখন বাইরের দিকের পরিখা ও একটি বাঁধ নির্মিত হয়। বাঁধটির অভ্যন্তরে চতুর্দিকে ৫৬টি গর্ত খনন করা হয়। গর্তগুলোর আবিষ্কারক আব্রের নাম অনুসারে গর্তগুলোকে আব্রে গর্ত নামে আখ্যায়িত করা হয়। হেলি স্টোনও এ নির্মাণকাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনুমানিক ২০০ বছর পর স্টোনহেঞ্জের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকালে মাটির বাঁধানো পূর্ব দিকের প্রবেশপথটি বিস্তৃত করা হয় এবং নিখুঁত নির্মাণকার্য দ্বারা অ্যাভন নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এ নিখুঁত কাজের মধ্যে ছিল সমান্তরাল বাঁধ ও পরিখাগুলো। ওই স্থানের কেন্দ্রস্থলে ২টি নীল পাথর বসানো হয় বৃত্তাকারে। এ নীল পাথরগুলো সাউথ ওয়েলসের পেনব্রোক্ষশায়ার অঞ্চলের প্রিস্লি পর্বতমালা থেকে আনা হয়েছিল। তৃতীয় পর্যায়ের নির্মাণকার্য শুরু হবার সময় সমগ্র স্মৃতিসৌধ নতুনভাবে বিন্যস্ত করা হয় এবং এ অঞ্চলের উত্তরদিকে অবস্থিত মার্লবুরো ডাউন্স থেকে প্রায় ৮০টি বিরাট সারসেন পাথরের ব্লক আনা হয়। ক্রমান্বয়ে ৩০টি সম্পূর্ণভাবে খাড়া স্তম্ভকে বৃত্তাকারে নির্মাণ করা হয়।


কারা বানিয়েছে এই স্টোনহেঞ্জ? কেনই বা এটা বানিয়েছিল তারা? আজো এই রহস্য উন্মোচিত হয়নি। ১৭০০ শতাব্দীতে ঐতিহাসিকেরা দাবি করলেন, স্টোনহেঞ্জ সেলটিক ধর্মযাজকদের নির্মিত। এঁদের বলা হয় ড্রুয়িদ। অসম্ভব রহস্যময় এই যাজকদের অলৌকিক নানা শক্তি ছিল /:) । তবে তাঁদের নিয়ে তেমন কোনো তথ্য ছিল না কারও কাছেই। সে সময়ের একজন স্থাপত্যবিদ ইনিগো জোনস বললেন রোমানদের কথা। আবার প্রত্নতাত্ত্বিক ইলিয়ট স্মিথ স্টোনহেঞ্জ নির্মাণের কৃতিত্ব দিলেন মিসরীয় বা ফিনিশীয়দের। ১৮০৮ সালে ইংরেজ প্রত্ন সংগ্রাহক স্যার রিচার্ড কোল্ট হোয়ার স্টোনহেঞ্জের চারপাশের প্রাচীন কবরগুলো থেকে ব্রোঞ্জের অস্ত্রশস্ত্র, সোনার অলংকারসহ হাড়ের স্তূপ খুঁজে পান। সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এই নির্মাণ বহিরাগতদের করা। আবার কেউ বললেন, মাইসিনে যোদ্ধারা স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে বানিয়ে নিয়েছেন স্টোনহেঞ্জ। তবে কার্বন-১৪ ডেটিং পদ্ধতি দ্বারা প্রমাণিত হয়, স্টোনহেঞ্জ বানানো হয়েছে মাইসেনিয়ান যুদ্ধের ৫০০ বছর আগে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঐতিহাসিকেরা স্টোনহেঞ্জ নির্মাণের তিনটি সময়কাল তৈরি করেন। প্রথম ধাপটি প্রাগৈতিহাসিক যুগের চেয়ে এক হাজার বছর আগের। দ্বিতীয় ধাপটি খ্রিষ্টের জন্মের দুই হাজার বছর আগের। আর শেষ ধাপটি খ্রিষ্টের জন্মের এক হাজার ৯০০ বছর পরের। তিনটি ধাপে স্টোনহেঞ্জের নির্মাণকাজ পুরো সম্পন্ন করা হয়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এ নির্মাণের কোনো ভাঙা কিংবা ভগ্নদশার টুকরো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ধারেকাছে।
ধারণা করা হয়, স্টোনহেঞ্জকে হয়তো একটি পবিত্র স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৭৪০ সালে উইলিয়াম স্টুকলে একে ড্রুয়িদদের প্রার্থনার ঘর হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৮৪০ সালে এডওয়ার্ড ডিউক একে শনি গ্রহের কক্ষপথের সঙ্গে তুলনা করেন। বহু বিশেষজ্ঞ একে প্রাচীন জাদুর কেন্দ্র হিসেবেও বর্ণনা করে গেছেন। ১৯০১ সালে স্যার নরম্যান লকার ও ১৯৬৩ সালে জেরাল্ড হকিনস একে কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করেন! ২০০৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা উল্লেখ করেন, এটি প্রাচীন একটি সমাধিস্থল। খ্রিষ্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে এর প্রথম খননকাজ শুরু হয়। এর পর থেকে ৫০০ বছর ধরে এখানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও সমাধি করা হয়। অসাধারণ এ স্থাপত্যের বর্ণনা করার মতো গল্প এতটুকুই। আর কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই বিশেষজ্ঞদের কাছে। ১৯৮৬ সালে ইউনেসকো একে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সব মিলিয়ে দর্শনার্থীদের কাছে স্টোনহেঞ্জ অপার এক সৌন্দর্যের নাম। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কাছে এখনো মাথা গুলিয়ে দেওয়া এক রহস্যের নাম স্টোনহেঞ্জ।

রহস্যময় প্রকৃতি-১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×