“একজন সুবেদার মেজর (রক্ষীবাহিনীর) এসে জিজ্ঞেস করল, এ বাড়ি আপনি কোথা থেকে পেলেন? আমি বললাম, সরকার আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাই। সুবেদার মেজর কিছু না বলে চলে গেল। আমার মনের ভেতর হঠাৎ করে একটা খটকা লেগে গেল, হঠাৎ করে রক্ষী বাহিনী আসছে কেন? খানিকক্ষণ পর হঠাৎ করে আরেকজন সুবেদার মেজর হাজির। সে একা নয়, তার সাথে এক ট্রাক বোঝাই রক্ষীবাহিনী। সবার হাতে অস্ত্র। সুবেদার মেজরের নাম হাফিজ, ...ভেতরে ঢুকে বলল, এই বাড়ি আমার। শেখ সাহেব আমাকে দিয়েছেন। আমি বললাম, সে কি করে হয়? আমার কাছে বাসার অ্যালটম্যান্ট রয়েছে- সে কোনো কথা না বলে টান দিয়ে ঘরের একটা পর্দা ছিড়ে ফেলল। সাথে আসা রক্ষীবাহিনীর দলকে বলল, ছেলেমেয়েদের ঘার ধরে বের কর। আমি এতদিনে পোড় খাওয়া পাথর হয়ে গেছি। রুখে দাঁড়িয়ে বলেছি, দেখি তোর কত বড় সাহস।
...কাজল মুহসীন হলে ছিল, খোঁজ পেয়ে এসেছে,তাকেও ঢুকতে দিলো না। সারা রাত এভাবে কেটেছে। ভোর হতেই আমি বের হলাম। পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। তারা বললো, আমরা গোলামীর পোশাক পড়ে বসে আছি! রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব?
বঙ্গভবন , গণভবন এমন কোনো জায়গা আমি বাকি রাখলাম না সাহায্যের জন্য। কিন্তু লাভ হলো না। আমি তুচ্ছ মানুষ, আমার জন্যে কার এত মাথাব্যথা। রাতে ফিরে এসেছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না, অনেক বলে ভেতরে ঢুকেছি। রাত আটটার সময় রক্ষীবাহিনীর দল হঠাৎ করে লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। ইকবাল আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছে, একজন বেয়োনেট উঁচিয়ে লাফিয়ে এলো। রাইফেল তুলে ট্রিগারে হাত দিয়েছে, চিৎকার করে কিছু একটা বলছে, গুলি মেরে ফেলবে আমাদের? আমি ছেলেমেয়েদের হাত ধরে বের হয়ে এলাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাকে প্রথমবার গৃহহারা করেছিল। বাংলাদেশ সরকারের রক্ষীবাহিনী আমাকে গৃহহারা করল। (প্রাগুক্ত, পৃ.৯২-৯৩)"
--হুমায়ুন আহমেদ/জাফর ইকবাল/আহসান হাবীবের মাতা আয়েশা ফয়েজ এর আত্মজীবনী "জীবন যে রকম" থেকে নেয়া সত্য ঘটনা।