somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগম জিয়ার মুখ বন্ধ করতে কোকোর টাকা আনার নাটক তৈরী করা হয়েছে।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিঙ্গাপুর সরকার বাংলাদেশে কোনো টাকা পাঠায় নি। ঐ টাকা পাঠিয়েছে শেখ হাসিনার ছেলে জয়। বাংলার মানুষ, মনে রাখো- এটা একটা ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক খেলা।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান প্রকাশ করলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার দেশে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকো ও ইসমাইল হোসেন সায়মনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুদক ২০০৯ সালে ঢাকার কোর্টে মামলা করে, যার রায়ে তাদের ৬ বছরের কারাদণ্ডসহ ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছিল। ঐ রায়ের সূত্রে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক পাচার করা অর্থ যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় আজ ফেরত দিয়েছে। সিংগাপুরের কোর্ট অর্ডারের প্রেক্ষিতে এই টাকা বাংলাদেশে এসেছে।’

এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। সবাই নিশ্চুপ। আমরা একটু খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। তাতে যা পাওয়া গেলো:

ঠিক যে মুহুর্তে বেগম জিয়া দাবী করলেন, তারেক রহমান কোনো দুর্নীতি করে নাই, ঐ রাতেই গণভবনে বসে যায় মন্ত্রণা সভা। সিদ্ধান্ত হয় “টাকা আনার” নাটক তৈরী করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। এরপরে ৩/৪ দিন লাগে ঘোষণা দিতে, যাতে খালেদা জিয়ার মুখ ভোতা করতে ২০ কোটি টাকা ফেরত নাটকের সফল মঞ্চায়ন হলো।

দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের দাবি—এই অর্থ দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে বলেও দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। গোলাম রহমানদের আগেকার কথা অনুসারে সিঙ্গাপুরে টাকা গেছে নিউইয়র্কের সিটি ব্যাংক থেকে। মানিলন্ডারিং হয়ে থাকলে টাকা ফেরত যাবে আমেরিকাতে। বাংলাদেশে কেনো আসবে ঐ টাকা? কেমন করে? বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা কি কেউ রেমিটেন্স করে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছে? অবশ্যই না। তাহলে বাংলাদেশ সরকারের কোমরে এত জোর কোথায় যে, আমেরিকার টাকা ঢাকায় নিয়ে আসলো? অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ সরকার কোর্টে এবং জনগণকে যে গল্প শুনিয়েছে পুরোটাই লন্ডন, জার্মানী, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, সিমেন্স, সিটি ব্যাংক, ফরাসী ব্যাংক ইত্যাদি। পুরোটাই হাওয়াই। বাংলাদেশের কোনো কথা বা ঘটনা নাই। কবি এখনেই নিরব!

কি মজার কান্ড! এর আগে খবর রটানো হলো, সিমেন্সের ঘুস কেলেঙ্কারীর মামলা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়ার ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বিচারধীন। সেই মামলার রায় হলে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা ফেরত যাবে আমেরিকায়। বাংলাদেশে আসবে কি পথ ভুল করে?

বাংলাদেশ সরকার কি টাকা ফেরত চেয়ে কখনো সিঙ্গাপুরের আদালতে মামলা করেছে? নাকি রায় পেয়েছে? তাহলে সিঙ্গাপুর সরকার বাংলাদেশে ২০ কোটি টাকা পাঠাতে যাবে কোন্ দুঃখে? বাংলাদেশের আদালতের রায় মেনে সিঙ্গাপুর সরকার টাকা ফেরত পাঠাবে, এটা কল্পনা করা যায়? কেবল কোনো উন্মাদ লোকের পক্ষেই তা বিশ্বাস করা সম্ভব।

বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশে কি সিঙ্গাপুর চলে? নাকি সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সরকারের কোনো জেলা বা করদ রাজ্য, যে শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে ২০ লাখ ৪১ হাজার ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলো?

লক্ষ করুন, বাংলাদেশ সরকার বা দুদক বা সোনালী ব্যাংক এই কথিত ‘টাকা ফেরত আনার’ কোনো সূত্র বা দলিল প্রকাশ করেনি। যদিও বলা হচ্ছে, সিংগাপুরের কোর্ট অর্ডারের প্রেক্ষিতে এই টাকা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু সিঙ্গাপুর আদালতের যে রায়ের কথা বলা হচ্ছে, তাতে দেখা যায় সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম সিউ চ্যাংকে মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১২ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা করার কথা। অথচ এখন বাংলাদেশের দুদক বলছে, সিঙ্গাপুরের রায় অনুসারে টাকা আনা হয়েছে। আর এ গল্পটি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নিরপেক্ষতার ভাণ ধরাতে দুদককে ব্যবহার করা হয়েছে।

পুরোনো কথা একটু স্মরণ করা যাক। কোকোর নামে এই কথিত দুর্নীতির অভিযোগটি দুদক প্রকাশ করে ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮, যা ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের ১০দিন আগে প্রেস কন্ফারেন্স করে দুদকের মহাপরিচালক কর্নেল হানিফ ইকবাল। তখন বলা হয়েছিলো, “সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১২ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই একাউন্টটি জব্দ করা হয়েছে।” আর এখন আওয়ামীলীগ বলছে ২০ কোটি টাকা! তা বেশ, বিশ কোটি টাকা শুনতে খারাপ না।

কোকোকে আটক করা হয়েছে ২০০৭ সালে ১৬ এপ্রিল। প্রায় ২০ মাস পরে কোকোর নামে এই অভিযোগটি এমনভাবে দুদক প্রকাশ করে, যাতে নির্বাচনের ১০ দিন আগে বেগম খালেদা জিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করা যায়। একথা অনস্বীকার্য, শেখ হাসিনার সাথে জেনারেল মইন চুক্তিবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জিতিয়ে আনার যে কূট কৌশল রচনা করা হয়, তার একটি অন্যতম হাতিয়ার ছিল কোকোর বিরুদ্ধে তথাকথিত ঐ অভিযোগটি। জেনারেল হাসান মসহুদের দুদক যদি পরিস্কার থাকত, তবে কোকোকে আটকের কয়েকদিনের মধ্যেই মামলাটি দায়ের করতে পারত। কিন্তু তা না করে প্রায় ২ বছর পরে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে (যখন কোকো দেশে নাই এবং জবাব দিতে পারছে না) এই অভিযোগ তোলা নির্বাচনী আচরণবিধির লংঘনও বটে। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকার এই মামলাটির বিচারকার্য কোকোর অনুপস্থিতিতে তাড়াহুড়া এমনভাবে সম্পন্ন করে, যাতে করে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থন করা বা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশের কোনো সুযোগ না থাকে। মোট কথা, খালেদা জিয়ার ইমেজ ধংস করার জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের এটা ছিলো একটা মিডিয়া ট্রায়াল।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যবস্থাধীনে কিছু টাকার রেমিটেন্স এবারে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, যেটা কোকোর টাকা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটাকে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের ইনভেস্ট হিসাবেই গন্য করা হচ্ছে। কে কোত্থেকে এই টাকা পাঠালো, তার প্রমানপত্র তো আর আপাতত কাউকে দেখাতে হচ্ছে না। এর ইঙ্গিত মেলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত যখন সাংবাদিকদের বলেন, সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় দুদকের করা একটি অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা হয়েছে। এ টাকার উৎস কী এবং কারা এই টাকা পাঠিয়েছে—সেটা তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। সেই টাকা কোকোর নামে পাচার করা অর্থ কিনা—এ বিষয়েও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

পদ্মা সেতুতে জয়-পুতুলের ঘুস কেলেঙ্কারী চাপা দেয়ার জন্য, এমনকি বেগম জিয়ার আগামীতে ক্ষমতায় আসার পথ রুদ্ধ করতে এর চেয়ে আর মোক্ষম অস্ত্র আর হয় না!

প্রশ্ন হচ্ছে, এই সামান্য ২০ কোটি টাকার খরচ করেই শেখ হাসিনা কি ৯৬ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির দায় এড়াতে পারবেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৮
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×