বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তা চমৎকার দৃশ্যকল্প সৃষ্টি করে আমাদের নিয়ে চলল। শীতের রুক্ষ্ম পাহাড় আর বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ের সৌন্দর্যের পার্থক্য বিস্তর। যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের বন্যা।
আমাদের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া খ- খ- মেঘগুলোর ছায়া গাঢ় সবুজ আর রৌদ্রময় অংশ সোনালী সবুজ রং ধারণ করে অপূর্ব নজরকাড়া দৃশ্য তৈরি করছিল। এভাবে মুগ্ধ নয়নে চলতে চলতে এক সময় চিম্বুক চলে এলাম। সৌন্দর্য্যরে জন্য চিম্বুকের খ্যাতি আগে থেকেই ছিল। এখানে বাসের ১৫ মিনিট বিরতি দেয়ায় সেই সুযোগটি লুফে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করে নীলগিরি স্পর্শ করে আরও আরও দূরে থানছির দিকে এগুতে থাকলাম। নীলগিরি থেকে থানছি পর্যন্ত রাস্তার ঢালগুলো খুবই খাড়া, তাই মানসিক প্রস্তুতি থাকা ভাল। এখানে বলে রাখা ভাল যে, বান্দরবান আর থানছি রাস্তায় বাসের সংখ্যা খুবই কম আর বেশ বিরতি দিয়ে ছাড়ে। তাই বিস্তারিত জেনে যাওয়া-আসায় প্ল্যান করাই ভাল, না হলে সময় আপনাকে বিপদে ফেলে দেবে। এটা মাথায় রেখেই থানছিতে পৌঁছা মাত্রই ১২.৩০ টার ফিরতি বাসে উঠে পড়লাম।
সেই পুরানো পথ ধরে দুপুর ২.০০ টায় নীলগিরিতে এসে নামলাম। নেমেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, মেঘের এতরূপ থাকতে পারে। যেদিকে চোখ যায় সবুজের উপর সাদা কালো আর নীল মেঘের ছড়াছড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের অত্যন্ত প্রত্যাশিত ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে চললো পাক্কা দের ঘন্টা ধরে।
হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেলে নিচে তাকিয়ে দেখি কোথাও কোথাও তখনও বৃষ্টি হচ্ছে আর কোথাও কোথাও কড়া রোদ্রে স্বর্ণালি প্রলেপ একে দিচ্ছে। এরই মাঝে হঠাৎ অপ্রতাশিত ভাবে চোখের সামনে ভেসে উঠলো বিশাল বিস্ময়কর এক রংধনু। কাছের পাহাড় থেকে দূরের পাহাড়ে মিলে গেছে। প্রতিটি রংই সুস্পষ্ট। সেই পাহাড়, সেই মেঘ-বৃষ্টি আর রংধনুর সৌন্দর্য বর্ণনা করা যায় না, শুধুই অনুভব করা যায়। এরই মাঝে কখন যে ফেরার সময় হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। দিনের শেষ বাসে বিকালে নীলগিরি ছেড়ে সন্ধ্যায় বান্দরবান এসে পৌঁছালাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৫