somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহুল বিতর্কিত ষড়যন্ত্রের ওয়ান-ইলেভেন আজ।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছয় বছর আগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায়, ক’জন পশ্চিমা কূটনীতিকের অতিউত্সাহী তত্পরতা এবং বাংলাদেশে তত্কালীন জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ানের ষড়যন্ত্রে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে পরদিন ১২ জানুয়ারি। নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেন তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। তাকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন নবম ডিভিশনের জিওসি লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারীসহ উচ্চাভিলাষী কিছু সেনা কর্মকর্তা। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে ভয়াবহ সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ঘোষণার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সহিংস রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব সেনা কর্মকর্তা চাপ প্রয়োগ করে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে বাধ্য করেন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে। ভণ্ডুল করে দেয়া হয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলো, দেশের সুশীল সমাজ এবং জেনারেল মইন-জেনারেল মাসুদ গংয়ের একটি সম্মিলিত প্রয়াস ছিল ওয়ান-ইলেভেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে রাজপথে ৮ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে হত্যাসহ পরবর্তীতে নানা ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। ওয়ান-ইলেভেনের সুবিধাভোগীও ছিল তারা। মইনের সঙ্গে আঁতাত করেই সাজানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়।
দায়িত্ব নিয়েই ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকার নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তছনছ করে দেয়। সংস্কারের নামে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি পরিবর্তন হলেও নিয়োগপ্রাপ্তদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ভাবমর্যাদা মারাত্মক ক্ষুণ্ন হয়। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়ে পড়ে বক্তৃতাসর্বস্ব। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করে রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে এটিকে কাজ লাগানোর চেষ্টা করে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণীয় কোনো উন্নতির পরিবর্তে সংখ্যার বিচারে সরকারি হিসাবেই অপরাধ বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রয়েছে।
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র দাখিল করেও পরে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মহাজোট ঘোষিত ২১ ও ২২ জানুয়ারি দু’দিনের হরতাল এবং মাঝখানে একদিন বিরতি দিয়ে ১৫ জানুয়ারি থেকে ৪ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিত বলে দাবি করে জরুরি অবস্থা জারি ও প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. ইয়াজউদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নামে সাময়িকভাবে জরুরি অবস্থা জারির কথা বলা হলেও তা দীর্ঘায়িত হয় এবং ফখরুদ্দীন সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে দু’বছর ক্ষমতায় থাকে। সহসাই গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি ‘কিংস পার্টি’। শুরুর দিকে সরকার ৯০ দিনের কিংবা সর্বোচ্চ ৬ মাসের হবে বলে ধারণা দেয়া হলেও সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দু’বছরান্তে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে। এ সময় রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নেমে আসে নজিরবিহীন নিপীড়ন। গণমাধ্যমের ওপর চলে খবরদারি। ধরপাকড়ের পর চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় দেশের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের ওপর। বন্দী করা হয় সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে।
বঙ্গভবনে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে হটিয়ে ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথের অনুষ্ঠানে বেশ সপ্রতিভ এবং হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ মহাজোট নেতাদের। বিএনপি ও তাদের জোটের শরিকরা শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করে। পরে শেখ হাসিনা গর্ব করে বলেন, ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। এমনকি তাদের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতাদানেরও ঘোষণা দেন তিনি। গ্রেফতার অবস্থা থেকে প্যারোলে মুক্ত হয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে তিনি ঘোষণা করেন—যদি ক্ষমতায় আসেন, তবে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা তিনি দেবেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের বোঝাপড়ার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসে। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পুরস্কৃত করে বর্তমান সরকার। জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধানের পদে বহাল রাখা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের আরেক কুশীলব অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত বিতর্কিত সেই লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ায় বর্তমান সরকার।
১১ জানুয়ারির আগে উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছিল—৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও এরশাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা, ৭ ও ৮ জানুয়ারি অবরোধের ডাক, ৪ জানুয়ারি নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর পশ্চিমা কূটনীতিকদের গুরুত্বারোপ, ৭ জানুয়ারি টানা অবরোধ চলাকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর বৈঠক, ৮ জানুয়ারি বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা, ৯ জানুয়ারি বঙ্গভবনের আশপাশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা বৃদ্ধি, ১০ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিরোধে শেখ হাসিনার হরতাল-অবরোধসহ ৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা এবং কুমিল্লার জনসভায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বাধাদানকারীদের প্রতিহত করার আহ্বান খালেদা জিয়ার। ১১ জানুয়ারি দুপুরের পর থেকে দেশে গুমোট অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিকাল ৪টায় পূর্বনির্ধারিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক বাতিল করা হয়। তিন বাহিনী প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে যান। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গভবনে অবস্থান করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিটিভির স্ক্রলে প্রথম জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা জানানো হয়। রাত ৮টার পর তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের আইজি, র্যাব, বিডিআরসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সেনাসদরে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে ৮টায় সব উপদেষ্টাকে বঙ্গভবনে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা উপদেষ্টাদের ব্রিফ করে পদত্যাগ করতে বলেন। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন ৯ উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন ড. ইয়াজউদ্দিন। সন্ধ্যার পর থেকেই ‘কিছুক্ষণের মধ্যে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন’ মর্মে বিটিভিতে জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত রাত ১১টা ২০ মিনিটে বিশেষ স্থান থেকে আসা একটি বক্তব্য জাতির উদ্দেশে পড়ে শোনান ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। তাতে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে তার পদত্যাগ ও জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রেক্ষাপট এবং সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা ছিল। উপদেষ্টাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে বিচারপতি ফজলুল হককে প্রধান উপদেষ্টার অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেয়া হয়। রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। রাজনৈতিক সংবাদ প্রকাশে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। রাস্তায় নামে সেনাবাহিনী। রাতেই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র ডিজি পদ থেকে মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দারকে বদলি করা হয়। শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। কামাল মজুমদারকে গ্রেফতার করা হয় সবার আগে। আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী ফালু, হাজী সেলিম, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুসহ সাবেক এমপি ও নেতাদের বাসায় হানা দেয় যৌথবাহিনী। পরদিন ১২ জানুয়ারি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ শপথ নেন।
ফখরুদ্দীন-মইনের সরকার রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করার নামে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে। সেই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ শুরুতে সাধারণ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিলেও পরে দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের হেয় করে এক ধরনের রাজনীতিশূন্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার প্রবণতা জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের ৭৯ জন ভিআইপি রাজনীতিবিদকে বহু মামলায় জড়িয়ে দিনের পর দিন ব্ল্যাক হোলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের পর কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক নেতাদের বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে। এমনকি হাইকোর্ট থেকেও একাধিক মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। যদিও অনেকটা নজিরবিহীনভাবে বিচার সংক্রান্ত হাইকোর্টের অসংখ্য আদেশ সুপ্রিমকোর্ট থেকে স্থগিত হয়ে যায়। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রথমে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও পরে ২ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে বন্দী রাখা হয়।
কিন্তু এর আগেই সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। পরে নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব থেকে তাদের বাদ দেয়ার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে প্রধান দু’দলে তথাকথিত সংস্কারের চেষ্টা চালানো হয়। এই সংস্কার করা না গেলেও দলগুলোতে সীমিত আকারে ভাঙন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। খালেদা জিয়াকে জেলে পুরে দিয়ে জোর করে অসুস্থ সাইফুর রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান এবং খালেদা জিয়ার মনোনীত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বাদ দিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা চলে। তারও আগে দলের মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে সংস্কারপন্থী বিএনপি দাঁড় করায় ওয়ান-ইলেভেনের পক্ষের শক্তি। আওয়ামী লীগেও কয়েকজন সংস্কারপন্থী সৃষ্টি করা হয়। যদিও পরে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তত্পরতাটি ছিল অনেকটা লোক দেখানো। পাশাপাশি দুই নেত্রীকে বিচারের আগেই কারাবন্দি করে রাখার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামধারী সেনা নিয়ন্ত্রিত জরুরি সরকার একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মানুষের মনে প্রথমে ব্যাপক আশার সঞ্চার করলেও পরে তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত বেপরোয়া কর্মকাণ্ড অচিরেই মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শুরুর দিকে দেশি-বিদেশি যেসব মহল থেকে সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছিল, তাদেরও মোহ ভাঙতে শুরু করে বছর না ঘুরতেই। বাজারে আগুন লাগে। ১৭-১৮ টাকা কেজির মোটা চাল ৪০-৪৫ টাকায় গিয়ে ঠেকে। দ্বিগুণ হয়ে যায় ভোজ্যতেল, গুঁড়োদুধসহ সব নিত্যপণ্যের দাম। মূল্যস্ফীতি আকাশ ছোঁয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক মিল-কলকারখানা, স্থবির হয়ে পড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। স্তব্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয় অর্থনীতির চাকা। বিনিয়োগে ধস নামে।
দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি সার নিয়ে সঙ্কট, দুই নেত্রীকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর জোর চেষ্টা, ব্যর্থ হয়ে কারারুদ্ধ করা, রাজনৈতিক দলে সংস্কারের নামে দল ভাঙার অপচেষ্টা, গ্রেফতারদের বিচারের মুখোমুখি করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ, প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যবসায়ীকে ঢালাও অপরাধী সাব্যস্ত করে আটক-নির্যাতন, এমনকি অনিয়মতান্ত্রিক মোটা দাগের অর্থ আদায়সহ বহু বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আগস্টের আন্দোলন এক পর্যায়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়াও এক সময় বেশ সোচ্চার হয়ে ওঠে। দৈনিক নয়া দিগন্তে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের ক্ষুরধার লেখনি এবং আমার দেশ-এর শক্ত অবস্থানের সঙ্গে পরবর্তীতে অনেকেই সুর মেলান। টকশোগুলোতে একের পর এক সমালোচনার মুখোমুখি হতে থাকে এক-এগারোর সরকার।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করে দায়িত্ব নেয়া সরকারের প্রধান এজেন্ডা হয়ে পড়ে রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করা। নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন, এমনকি জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা কুক্ষিগত করারও অপপ্রয়াস দেখা যায়। কিন্তু জরুরি সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান একাধিকবার এ কথা স্বীকারও করেন। দেশে জরুরি অবস্থা ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থাকার পরও চালের দাম বাড়ানোর মতো কারসাজি করার সাহস কীভাবে ব্যবসায়ীরা পেয়েছে—এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
কালো পতাকা মিছিল আজ ১৮ দলীয় জোটের : ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত ‘অবৈধ’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে আজ কালো পতাকা মিছিল করবে ১৮ দলীয় জোট। মিছিলটি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল ৩টায় শুরু হবে। এটি নয়াপল্টন থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত যাবে। তবে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের অনুমতি না পেলে মগবাজার মোড় পর্যন্ত যাবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×