somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুজিবাদী রাস্টে শিক্ষক পাগলা কুকুরের সমান।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাল সময়ে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ, সমাবেশ দমনে ব্যবহার করা পিপার স্প্রে যুদ্ধে প্রতিপক্ষ দমনেও ব্যবহার নিষিদ্ধ। কেমিক্যাল ওয়েপন কনভেনশনের ১.৫ অনুচ্ছেদে এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত পিপার সেপ্র’র কৌটার গায়ের নির্দেশিকায় দেখা যায় পাগলা কুকুর ও ভয়ঙ্কর জীবজন্তু থেকে আত্মরক্ষার জন্যই এর ব্যবহার হয়। গতকাল চাঁদপুরের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পিপার সেপ্র অনুমোদিত একটি অস্ত্র। যা অবৈধ বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা যায়। নৈরাজ্য বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন মাঠে যায় তখন তারা ফুলের মালা নিয়ে যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ তরল ব্যবহার করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মেডিকেল গবেষণায় পিপার সেপ্র’কে ক্ষতিকর আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে এই তরলের মৃত্যু ঝুঁকির বিষয়টিও। আন্তর্জাতিকভাবে পিপার সেপ্র-ওলেওরেসিন ক্যাপসিকাম বা সংক্ষেপে ওসি গ্যাস নামে পরিচিত।

‘পেনাসাইল ক্লোরাইড’ নামক রাসায়নিক পদার্থ থেকেই তৈরি হয় এই পিপার স্প্রে। এটি চোখে লাগলে মুহূর্তের মধ্যেই চোখ দিয়ে পানি ঝরবে, চোখে জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে পুরো শরীরে এর প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত পিপার সেপ্র’র কৌটার গায়ের নির্দেশিকায় দেখা যায় পাগলা কুকুর ও ভয়ঙ্কর জীবজন্তু থেকে আত্মরক্ষার জন্যই এর ব্যবহার হয়।

দি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল অপশন অসেসমেন্ট (এসটিওএ) ১৯৯৮ সালে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে যে সব অস্ত্র ব্যবহার হয় তার ওপর পরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে পিপার সেপ্র প্রয়োগে মৃত্যুর ঝুঁকির বিষয় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় এটি প্রয়োগে মৃত্যুও হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ‘লস অ্যানজেলেস টাইমস- এর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। ওই পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯০ সালের পর থেকে ৬১টি মৃত্যুর উদাহরণ রয়েছে আমেরিকায়। এসব মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ ছিল পুলিশের পিপার স্প্রে ছিটানো। আমেরিকান সিভিল লিবারটিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)-এর তথ্য মতে ১৯৯৩ সাল থেকে পুলিশ হেফাজতে ক্যার্লিফোনিয়ায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়। যাদের মৃত্যুর আগে পিপার সেপ্র প্রয়োগ করা হয়েছিল।

১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর করা এক সমীক্ষায়ও পিপার সেপ্র’র ক্ষতির দিক উঠে আসে। তাদের গবেষণায় এ তরল গ্যাসের মৃত্যু ঝুঁকির বিষয়টিও তুলে ধরা হয় জোরালোভাবে। ওই গবেষণায় বলা হয়, পিপার সেপ্র’র ফলে মানুষের দৃষ্টি সমস্যা, স্নায়ু সমস্যা, শ্বাসবন্ধ হওয়া বা হৃদক্রিয়া বিঘ্ন হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

ক্ষতিকর এ গ্যাস ব্যবহারে ক্যান্সারের মতো জীবনঘাতী রোগের জন্ম হতে পারে বলেও গবেষণায় উঠে আসে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে পিপার সেপ্র ব্যবহার হয় ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার জন্য। এছাড়া, পাগলা কুকুর বা বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ঝাঁঝালো এই তরল ব্যবহার হয়।

অনেক দেশে ব্যক্তিগতভাবে এটি ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও সাধারণ একটি কৌটায় কি পরিমাণ তরল থাকবে তার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া আছে। অনুমোদিত পরিবেশকের কাছ থেকেই কেবল আত্মরক্ষার এই পণ্য কেনা যায় এসব দেশে। তবে বেশির ভাগ দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জরুরি প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য এই পিপার সেপ্র ব্যবহার করে।

জনসমাগম বা মানুষের জটলায় এ ধরনের সেপ্র ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ তরলের সংজ্ঞায়ও এটিকে আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইউএস আর্মির সমীক্ষায়ও বলা হয়েছে জনসমাগম বা অনেক লোকের ওপর এক সঙ্গে এই তরল ছোড়া ঝুঁকিপূর্ণ।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নতুন এই তরল অস্ত্র ব্যবহার শুরু হওয়ায় এখন এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই তরলকে টিয়ার গ্যাসের নতুন সংস্করণ বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে পিপার সেপ্র এবং টিয়ার সেলের প্রয়োগ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া অভিন্ন বলে কোন গবেষণায়ই জানা যায়নি। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরও দাবি করেছেন, পিপার সেপ্রতে কারও মৃত্যু হয় না। তিনি এও বলেছেন, অবৈধ বিক্ষোভ দমাতে পিপার সেপ্র প্রয়োগ কনভেনশনে স্বীকৃত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই স্প্রে চোখের কর্ণিয়ার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একাধিকবার এই স্প্রে চোখে লাগলে এক পর্যায়ে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে চোখের কর্ণিয়ার টিস্যুগুলো নষ্ট করে ফেলে। এই স্প্রে দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চোখে ঝাঁপসা দেখতে পারেন। মানবদেহের অন্য অংশের কোন টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ওষুধের মাধ্যমে তা নিরাময় করা যায়। তবে চোখের কর্ণিয়ার ক্ষতি হলে বেশির ভাগক্ষেত্রেই তা আর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না।

এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করার সময় বেসরকারি শিক্ষকদের ওপর বাংলাদেশে প্রথম পিপার সেপ্র ছোড়া হয়। এই সেপ্রতে অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসাধীন এক শিক্ষক মারা যান। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ক্ষতিকারক তরল সেপ্রতে আক্রান্ত হয়েই ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়।

তাদের এ দাবির প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পিপার সেপ্রতে কারও মৃত্যু হয় না। এরপর গত ১৬ই জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতালের দিনে পুলিশ আবারও পিপার সেপ্র ব্যবহার করে। এদিন বাসদের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এবং সাংবাদিক এ তরলে আক্রান্ত হন। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন।

পুলিশ সাধারণ জনতাকে দমাতে কয়েক দফায় এই পিপার সেপ্র ব্যবহারের পর এর ব্যবহার বন্ধে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। ওই নোটিশে তিনি বলেন, কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকারবিরোধী বিভিন্ন সমাবেশে, এমনকি পেশাজীবী শিক্ষকদের ওপরও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক পিপার স্প্রে নামে একধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে।


এর ফলে এরই মধ্যে আক্রান্ত মানুষ চোখের কর্ণিয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। নোটিশে বলা হয় একজন নাগরিকের সুস্থভাবে বাঁচার এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে সুনির্দিষ্ট রয়েছে।


এ নোটিশের কোন জবাব সরকারের তরফে দেয়া না হলেও গতকাল চাঁদপুরের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পিপার সেপ্র অনুমোদিত একটি অস্ত্র। যা অবৈধ বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা যায়। নৈরাজ্য বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন মাঠে যায় তখন তারা ফুলের মালা নিয়ে যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানবজমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×